ষোড়শ সংশোধনী: রিভিউ শুনানি কবে?
সংবিধানের ষোড়শ সংশোধনী বাতিলের রায় নিয়ে দেশের আইন ও বিচার বিভাগের জল কম ঘোলা হয়নি। একজন সাবেক প্রধান বিচারপতিকে পদত্যাগ এবং দেশত্যাগও করতে হয়েছে। যে সংশোধনীটি আনা হয়েছিলো বিচারপতিদের অপসারণের ক্ষমতা সুপ্রিম জুডিশিয়াল কাউন্সিল (জিয়াউর রহমানের আমলে প্রবর্তিত) থেকে সংসদের ওপর ন্যস্ত করার জন্য।
মূলত এই বিধানটি (অনুচ্ছেদ ৯৬) বাহাত্তরের মূল সংবিধানেই ছিলো এবং ষোড়শ সংশোধনীর মাধ্যমে বাহাত্তরের সেই বিধানটিই ফিরিয়ে আনা হয়। অর্থাৎ সংসদ নতুন কিছু করেনি। কিন্তু এই সংশোধনী সংবিধানের অন্যতম মৌলিক কাঠামো ২২ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী (রাষ্ট্রের নির্বাহী অঙ্গসমূহ হইতে বিচার বিভাগের পৃথকীকরণ রাষ্ট্র নিশ্চিত করিবেন) স্বাধীন বিচারব্যবস্থার সঙ্গে সাংঘর্ষিক- এই যুক্তিতে অবৈধ এবং বাতিল বলে প্রথমে (৫ মে ২০১৬) রায় দেন হাইকোর্ট, পরে (৩ জুলাই ২০১৭) যেটি আপিল বিভাগও বহাল রাখেন।
পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশিত হয় ওই বছরের পয়লা আগস্ট। তবে এই রায় নিয়ে যতোটা না, তার চেয়ে বেশি প্রতিক্রিয়া আসে রায়ে প্রধান বিচারপতির কিছু পর্যবেক্ষণে। ফলে ২০১৭ সালের পয়লা আগস্ট আপিল বিভাগের পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশের দিন থেকে শুরু করে ১৩ অক্টোবর সাবেক প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহার দেশত্যাগের পরেও বিষয়টি রাজনীতির মাঠে আলোচনায় ছিলো। এখন সেই আলোচনাটি ক্ষীণ হয়ে এলেও, যে সাংবিধানিক প্রশ্নের সুরাহা হয়নি তা হলো, এ মুহূর্তে তাহলে দেশে বিচারপতিদের অপসারণের জন্য কোন বিধানটি কার্যকর- সুপ্রিম জুডিশিয়াল কাউন্সিল নাকি সংসদ? দ্বিতীয় প্রশ্ন হলো, সরকার ওই রায় বাতিল চেয়ে যে রিভিউ আবেদন করেছে, সেটির শুনানি কবে হবে বা আদৌ হবে কী না?
পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশের প্রায় পাঁচ মাস পর ২০১৭ সালের ২৪ ডিসেম্বর ষোড়শ সংশোধনী নিয়ে আপিল বিভাগের দেওয়া রায় রিভিউ (পুনর্বিবেচনা) চেয়ে আবেদন করে রাষ্ট্রপক্ষ। কিন্তু প্রায় দুই বছরেও এই রিভিউ শুনানির কোনো আলামত নেই। আবেদনে আপিল বিভাগের দেওয়া রায় বাতিল এবং আদালতের পর্যবেক্ষণে সংসদ সদস্যদের নিয়ে যেসব মন্তব্য করা হয়েছে এবং বিচারকদের জন্য যে আচরণবিধি করা হয়েছে, তাও বাতিল চাওয়া হয়। সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের সংশ্লিষ্ট শাখায় ৯০৮ পৃষ্ঠার ওই রিভিউ আবেদন দাখিল করা হয়। আবেদন জমা দেওয়ার পর অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম সংবাদ সম্মেলনে বলেন, “আবেদনে ৯৪টি গ্রাউন্ড পেশ করা হয়েছে। দুই মাস নিরলস শ্রম দিয়ে একটি আইনজীবী প্যানেল এই আবেদন প্রস্তুত করেছে।” তিনি বলেন, “যেখানে জাতীয় সংসদ সংবিধানের মূল অনুচ্ছেদে ফিরে যেতে চায়, সেখানে আদালত এর বিপরীতে কোনো আদেশ বা রায় দিতে পারেন না।”
অ্যাটর্নি জেনারেল বলেন, “সংসদই বিচারপতি অপসারণ করবে, তা কিন্তু নয়। কোনো বিচারপতির বিষয়ে কোনো অভিযোগ উত্থাপিত হলে, তা তদন্ত কমিটি তদন্ত করবে। তদন্তে দোষী সাব্যস্ত হলে তা সংসদে যাবে এবং দুই-তৃতীয়াংশ সদস্যের ভোটে তার সুরাহা হবে। তদন্তে দোষী সাব্যস্ত না হলে সংসদে উত্থাপনের কোনো সুযোগ নেই।”
অধ্যাপক মো. জাকির হোসেন (ষোড়শ সংশোধনী মামলার রায়ের রিভিউ, কালের কণ্ঠ, ২৩ নভেম্বর ২০১৭) মনে করেন, যে যুক্তি দ্বারা ষোড়শ সংশোধনী বাতিল হয়েছে, তা সাংবিধানিক তত্ত্বগতভাবে সঠিক নয়। তাই এটি পুনর্বিবেচনার জোরালো দাবি রাখে। তিনি বলেন, “উচ্চ আদালতেরও ভুল হতে পারে। তাই ভারতের সুপ্রিম কোর্ট তার চূড়ান্ত রায়ের বিরুদ্ধে রিভিউ করার ও রিভিউ খারিজের পরও সুবিচার নিশ্চিত করতে কিউরেটিভ পিটিশনের সুযোগ সৃষ্টি করেছেন। ২০০২ সালে Rupa Ashok Hurra বনাম Ashok Hurra and Another মামলায় ভারতের সুপ্রিম কোর্ট বলেন, সুপ্রিম কোর্টের রায়ে মারাত্মক কোনো ভুলের কারণে কারো প্রতি অবিচার হলে রিভিউ খারিজের পরও সংক্ষুব্ধ ব্যক্তি ন্যায়বিচারের স্বার্থে রায়ের ভুল সংশোধনের জন্য সুপ্রিম কোর্টের দ্বারস্থ হতে পারবেন। সুপ্রিম কোর্ট এ ধরনের আবেদনের নাম দিয়েছেন “কিউরেটিভ পিটিশন”। যদিও বাংলাদেশের সুপ্রিম কোর্টে কিউরেটিভ পিটিশনের কোনো নজির নেই।”
অধ্যাপক হোসেনের মতে, ষোড়শ সংশোধনী মামলার রায়ে কিছু ক্ষেত্রে সাংবিধানিক ব্যত্যয় যেমন হয়েছে, তেমনি মামলার সঙ্গে সাবেক প্রধান বিচারপতির ‘নাজায়েজ স্বার্থ’ জড়িত থাকার বিষয় বারবার আলোচনায় এসেছে। তাই ন্যায়বিচারের স্বার্থে রিভিউয়ে বিস্তারিত যুক্তি-তর্কের সুযোগ থাকা দরকার। এ রিভিউয়ের ক্ষেত্রে যেসব সাংবিধানিক বিষয় পুনর্বিবেচনার দাবি রাখে, তার মধ্যে একটি হলো, বাংলাদেশের সংবিধানের ৭ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী সুপ্রিম কোর্ট সংবিধানের সঙ্গে অসামঞ্জস্যপূর্ণ আইন বাতিল ঘোষণা করতে পারেন। ৭ অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে, “...জনগণের অভিপ্রায়ের পরম অভিব্যক্তিরূপে এই সংবিধান প্রজাতন্ত্রের সর্বোচ্চ আইন ও অন্য কোনো আইন যদি এই সংবিধানের সহিত অসামঞ্জস্য হয়, তাহা হইলে সেই আইনের যতোখানি অসামঞ্জস্যপূর্ণ ততোখানি বাতিল হইবে।”
সরকার বা রাষ্ট্রপক্ষ ষোড়শ সংশোধনীর রায়ে প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহার পর্যবেক্ষণগুলো বাতিল বা এক্সপাঞ্জ চেয়ে আবেদন করেছে এবং সর্বোচ্চ আদালত যদি সেই পর্যবেক্ষণ বাতিল করেন, তাহলে দেশের সাংবিধানিক ও বিচারিক ইতিহাসে একটি নতুন ঘটনা ঘটবে।
ষোড়শ সংশোধনী বাতিল সম্পর্কিত রায়ের রিভিউ যদি সরকারের পক্ষে যায় অর্থাৎ বিচারকদের অপসারণের ক্ষমতা সংসদের ওপরেই বহাল হয়, সেটিও একটি নতুন ইতিহাসের জন্ম দেবে। চার দশক পরে সংবিধানের একটি গুরুত্বপূর্ণ অনুচ্ছেদ বাহাত্তরের মূল সংবিধানের আলোকে প্রতিস্থাপিত হবে। কিন্তু আদালত যদি রিভিউ খারিজ করে দেন, তখন কী হবে? তখন কি সুপ্রিম জুডিশিয়াল কাউন্সিলই বহাল থাকবে নাকি সংসদ আরও একবার সংশোধনী এনে বাহাত্তরের আলোকে ৯৬ অনুচ্ছেদ সংশোধন করে বিচারকদের অপসারণের ক্ষমতা সংসদের ওপর ন্যস্ত করবে? স্মরণ করা যেতে পারে, ষোড়শ সংশোধনী বাতিলের পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশের তিনদিন পর ২০১৭ সালের ৪ আগস্ট সিলেটে এক অনুষ্ঠান শেষে তৎকালীন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আব্দুল মুহিত পরিষ্কার ঘোষণা দেন, “আদালত যতোবার এই সংশোধনী বাতিল করবে, ততোবারই সংসদ এটা পাশ করবে। করতেই থাকবে।” মি. মুহিত বেশ উত্তেজিত ভঙ্গিতে বলেন, “দেখি জুডিশিয়ারি কতদূর যেতে পারে।” (দৈনিক যুগান্তর, ৫ আগস্ট ২০১৭)
সাধারণত রিভিউতে পুরো রায় বাতিল হয় না বা যে রায় দেওয়া হয়েছে, তার বিপরীত কোনো সিদ্ধান্ত আসে না। কেনোনা, আপিল বিভাগ যে রায় দিয়েছেন, সেটিই চূড়ান্ত। হাইকোর্টের রায়ের বিরুদ্ধে সুপ্রিম কোর্টে আপিল করা হয়েছিলো এবং পূর্ণাঙ্গ আপিল বেঞ্চ সেটি বহাল রেখেছেন। সুতরাং এখন রিভিউ শুনানি যদি হয়ও, তাতেও মূল রায় হেরফের হওয়ার সম্ভাবনা কম বলে মনে করেন ষোড়শ সংশোধনী বাতিল চেয়ে করা রিটকারী আইনজীবী মনজিল মোরসেদ। তার সঙ্গে আমার কথা হয় গত পয়লা ডিসেম্বর। তার দাবি, সরকার বা রাষ্ট্রপক্ষ যে ৯৪টি গ্রাউন্ড পেশ করেছে, সেগুলোর আইনি ও সাংবিধানিক ভিত্তি দুর্বল। কেনোনা, রিভিউ করা হয় কেবল তখনই, যদি রায় ঘোষণার আগে কোনো এভিডেন্স/তথ্যপ্রমাণ ভুলবশত বাদ পড়ে থাকে, সেক্ষেত্রে। এছাড়া রিভিউ চাওয়ার আর কোনো গ্রাউন্ড নেই। কিন্তু ষোড়শ সংশোধনী বাতিলের রায় বাতিল চেয়ে রাষ্ট্রপক্ষ যে রিভিউ আবেদন করেছে, সেখানে এভিডেনশিয়াল গ্রাউন্ড নেই। সুতরাং যদি রিভিউ শুনানি হয়ও, তাতেও রায় পরিবর্তনের সম্ভাবনা নেই। নেই জেনেই সরকারপক্ষ এই রিভিউ শুনানিতে আগ্রহী নয় বলে মি. মোরসেদ মনে করেন।
কোনো রায়ের রিভিউ শুনানি কতোদিনের মধ্যে হতে হবে, তার কোনো আইনি বাধ্যবাধকতা নেই। তবে রিভিউ শুনানি হবে কী না, সেটি পুরোপুরি নির্ভর করে যারা রিভিউ চেয়েছেন, তাদের ওপর। তারা যদি আদালতকে বলেন যে, তারা এটার শুনানি করতে চান, সেক্ষেত্রেই রিভিউ হতে পারে। আদালত স্বপ্রণোদিত হয়ে রিভিউ শুনানি করেন না। আবার আপিল বিভাগের যে সংখ্যক বিচারকের বেঞ্চ ওই রায় দিয়েছেন, রিভিউ শুনানিতে সেই সংখ্যক বিচারকই থাকতে হবে, এমনও বাধ্যবাধকতা নেই।
রিটকারী আইনজীবী বলছেন, “রাষ্ট্রপক্ষ যে ৯৪টি গ্রাউন্ডে বা যুক্তিতে রিভিউ চেয়েছে, তার সব কথাই আপিল বিভাগের শুনানিতে বলা হয়েছে। কিছুই বাদ নেই। নতুন কিছু নেই। নেই বলেই সরকার ৯৪টি গ্রাউন্ড পেশ করেছে। রিভিউ চাইলে তো একটা গ্রাউন্ডই যথেষ্ট। তাছাড়া রিভিউ চাইলে আগে রায়টি স্থগিতের আবেদন করতে হয়। সরকার ষোড়শ সংশোধনী বাতিলের রায় স্থগিত চায়নি বা আদালত রায় স্থগিত করেননি। সুতরাং আপিল বিভাগ যে রায় দিয়েছেন সেটিই কার্যকর এবং এই রায় মানতে সবাই বাধ্য।”
মনজিল মোরসেদের ভাষায়, “পর্যবেক্ষণ রায় নয়। ষোড়শ সংশোধনীর রায়ে আপিল বিভাগ যে পর্যবেক্ষণ দিয়েছেন, তার অনেক কিছুর সঙ্গে আমাদেরও দ্বিমত আছে। মানুষও হয়তো সব কথা গ্রহণ করবে না। কিন্তু এটা কিছু মিন করে না। কারণ একজন বিচারক রায়ে তার ব্যক্তিগত অভিমত ব্যক্ত করতেই পারেন। সেটা তার এখতিয়ার। কিন্তু তাতে মূল রায়ের কিছু যায় আসে না। মূল কথা হলো রায়ে কী বলা আছে। এই রায়ে বলা হয়েছে সংবিধানের ষোড়শ সংশোধনী অবৈধ এবং বাতিল। অতএব এটাই মোদ্দা কথা। পর্যবেক্ষণে বিচারক কী বললেন না বললেন, সেখানে রাজনৈতিক মন্তব্য কী আছে না আছে, কে সন্তুষ্ট বা অসন্তুষ্ট হলেন, তার সঙ্গে রায়ের কোনো সম্পর্ক নেই।” রিভিউ আবেদনে রাষ্ট্রপক্ষ কিছু পর্যবেক্ষণও বাতিল চেয়েছে। কিন্তু একজন বিচারকের পর্যবেক্ষণ আরেকজন বিচারক বাতিল করতে পারেন না বলেও উল্লেখ করেন রিটকারী আইনজীবী।
তাহলে কি সাংবিধানিক শূন্যতা?
ষোড়শ সংশোধনী বাতিলের পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশের পরে স্বাভাবিক হিসেবে ধরে নেওয়া হয় যে, বিচারকদের অপসারণের ক্ষমতা আগের মতোই সুপ্রিম জুডিশিয়াল কাউন্সিলের হাতে ন্যস্ত হয়েছে। কিন্তু ষোড়শ সংশোধনী বাতিলের পরে যতক্ষণ না সংবিধানে বিষয়টি অন্তর্ভুক্ত হচ্ছে, অর্থাৎ যতক্ষণ না ৯৬ অনুচ্ছেদকে আগের অবস্থায় ফিরিয়ে নেওয়ার বিধানটি যুক্ত করে নতুন করে সংবিধান ছাপানো হচ্ছে, ততোক্ষণ অবধি একটা সাংবিধানিক শূন্যতা বিরাজ করবে কী না, তা নিয়ে প্রশ্ন আছে। আবার যেহেতু সরকার এই রায়ের বিরুদ্ধে রিভিউ আবেদন করেছে, ফলে এটি নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত সংবিধান পুনর্মুদ্রণ করা যাবে কী না, তা নিয়েও ধোঁয়াশা আছে। যেহেতু সরকার বলছে যে, তারা আদালতের এই রায় মানে না এবং তারা ষোড়শ সংশোধনী অনুযায়ী বিচারকদের অপসারণের ক্ষমতা সংসদের হাতে ন্যস্ত করার সিদ্ধান্তে অনড়, তাই রিভিউ নিষ্পত্তি হওয়ার মধ্যবর্তী সময়ের ভেতরে কোনো বিচারকের বিষয়ে তদন্তের প্রয়োজন হলে সেটি কে করবে?
গত আগস্ট মাসে হাইকোর্টের তিন বিচারপতির (সালমা মাসুদ চৌধুরী, ড. কাজী রেজা-উল হক ও একেএম জহিরুল হক) বিরুদ্ধে গুরুত্বর অসদাচরণের (আচরণবিধি লঙ্ঘন) অভিযোগের অনুসন্ধান শুরু হয়েছে বলে গণমাধ্যমে খবর আসে। এ কারণে সংশ্লিষ্ট তিন বিচারপতিকে বিচারিক দায়িত্ব থেকে বিরত রাখার সিদ্ধান্তও জানিয়ে দেওয়া হয়। সুপ্রিম কোর্টের বিশেষ কর্মকর্তা মোহাম্মদ সাইফুর রহমান স্বাক্ষরিত প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, মাননীয় তিনজন বিচারপতির বিরুদ্ধে প্রাথমিক অনুসন্ধানের প্রেক্ষাপটে মহামান্য রাষ্ট্রপতির সঙ্গে পরামর্শক্রমে তাদের বিচারকার্য থেকে বিরত রাখার সিদ্ধান্তের কথা অবহিত করা হয় এবং পরবর্তীতে তারা ছুটির প্রার্থনা করেন। (কালের কণ্ঠ, ২২ আগস্ট ২০১৯)
এর মাস দেড়েক পরে ৭ নভেম্বর জাতীয় সংসদে বিএনপির সংসদ সদস্য হারুনুর রশীদের একটি প্রশ্নের (টেবিলে উত্থাপিত) জবাবে আইনমন্ত্রী আনিসুল হক (প্রথম আলো, ৭ নভেম্বর ২০১৯) জানান, হাইকোর্টের কোনো বিচারপতির বিরুদ্ধে অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ আইন ও বিচার বিভাগে পাওয়া যায়নি। হারুনুর রশিদের প্রশ্ন ছিল, “হাইকোর্ট বিভাগের কয়েকজন বিচারপতির অনিয়ম ও দুর্নীতির তদন্ত হচ্ছে। এই তদন্ত কোন আইনে হচ্ছে?”
মিজানুর রহমান খান (প্রথম আলো, ২৭ আগস্ট ২০১৯) লিখেছেন, “আইনমন্ত্রীর পক্ষে এটা সরাসরি স্বীকার করা কঠিন যে, সুপ্রিম জুডিশিয়াল কাউন্সিল কার্যকর রয়েছে।” কিন্তু ষোড়শ সংশোধনী বাতিলের রায়ে (পৃষ্ঠা ৭৯৫) বলা হয়েছে, কোনো বিচারপতির বিরুদ্ধে অভিযোগ এলে রাষ্ট্রপতি বা নির্বাহী বিভাগকে না জানিয়ে প্রধান বিচারপতি এবং জ্যেষ্ঠতা অনুযায়ী পরের দুই বিচারপতি বসবেন। তাদের কেউ বসতে না চাইলে জ্যেষ্ঠতাক্রম অনুযায়ী বেছে নেওয়া হবে। তারা প্রথমে একটা ইনহাউজ তদন্ত করবেন। ইনহাউজ তদন্ত কমিটি যদি বিষয়টিকে তদন্তযোগ্য মনে করে, তাহলে রাষ্ট্রপতিকে অবহিত করবে। তিনি অনুমতি দিলে তদন্ত শুরু হবে।
এসব কিছুর পরেও মূল তর্কটা অন্য জায়গায়। তা হলো, সরকার এই ষোড়শ সংশোধনী বাতিলের রায় যেহেতু মানেনি এবং রিভিউ চেয়েছে, ফলে বিচারকদের অপসারণ কিংবা তাদের কারো বিরুদ্ধে তদন্তে এ মুহূর্তে ঠিক কোন প্রক্রিয়া অনুসরণ করা হবে, তা নিয়ে একধরনের ধোঁয়াশা আছে বৈকি। কেনোনা স্বাভাবিক হিসাবে সংবিধানের ষোড়শ সংশোধনীর পরে সুপ্রিম জুডিশিয়াল কাউন্সিল বাতিল হয়েছে, আবার এই সংশোধনী অবৈধ ঘোষণার ফলে সুপ্রিম জুডিশিয়াল কাউন্সিল বহাল; অর্থাৎ পুরো বিষয়টা নিয়ে একধরনের সাংবিধানিক গোলকধাঁধা রয়ে গেলো বলেই মনে হয়।
আমীন আল রশীদ, বার্তা সম্পাদক, চ্যানেল টোয়েন্টিফোর
(দ্য ডেইলি স্টারের সম্পাদকীয় নীতিমালার সঙ্গে লেখকের মতামতের মিল নাও থাকতে পারে। প্রকাশিত লেখাটির আইনগত, মতামত বা বিশ্লেষণের দায়ভার সম্পূর্ণরূপে লেখকের, দ্য ডেইলি স্টার কর্তৃপক্ষের নয়। লেখকের নিজস্ব মতামতের কোনো প্রকার দায়ভার দ্য ডেইলি স্টার নিবে না।)
Comments