বিচার বহির্ভূত হত্যাকাণ্ডের পক্ষে-বিপক্ষে বিভক্ত ভারতের এমপিরা

ভারতের তেলেঙ্গানায় ধর্ষণ-হত্যাকাণ্ডে অভিযুক্ত চার জন পুলিশের গুলিতে নিহত হওয়ার পর বিচার বহির্ভূত হত্যাকাণ্ড নিয়ে নতুন করে বিতর্ক শুরু হয়েছে দেশটিতে।
ছবি: এএফপি

ভারতের তেলেঙ্গানায় ধর্ষণ-হত্যাকাণ্ডে অভিযুক্ত চার জন পুলিশের গুলিতে নিহত হওয়ার পর বিচার বহির্ভূত হত্যাকাণ্ড নিয়ে নতুন করে বিতর্ক শুরু হয়েছে দেশটিতে।

পুলিশের হেফাজতে থাকা এই যুবকদের নিহত হবার খবর প্রচারের কিছুক্ষণের মধ্যেই পুলিশকে অভিনন্দন জানিয়ে যারা টুইট করেছেন তাদের মধ্যে খোদ সংসদ সদস্যরাও রয়েছেন। এতে প্রশ্ন উঠছে তাহলে কি ভারতের বিচার ব্যবস্থার প্রতি আইন প্রণেতাদেরই আস্থা নেই?

তেলেঙ্গানা পুলিশের শীর্ষ কর্মকর্তারা বলেছেন, ঘটনার পুনর্নির্মাণের জন্য বৃহস্পতিবার দিবাগত রাতে যখন অভিযুক্তদের ঘটনাস্থলে নিয়ে যাওয়া হয় তখন তারা পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করে। পুলিশের হাত থেকে অস্ত্র কেড়ে নেওয়ার চেষ্টাও করে তারা। তাই বাধ্য হয়েই পুলিশকে গুলি ছুড়তে হয়েছে।

চার অভিযুক্ত ধর্ষককে এভাবে গুলি করে মারার পর প্রশ্ন উঠেছে, এটা কি পূর্বপরিকল্পিত হত্যার ঘটনা? পুলিশ কি সংঘর্ষের ছলে ধর্ষকদের গুলি করে হত্যা করল? এভাবে কি আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা করা যায়?

অমীমাংসিত এই প্রশ্নগুলো যখন উঠছে তখন টুইট করে পুলিশকে অভিনন্দন জানিয়েছেন লোকসভার সদস্যদের কেউ কেউ। কেউ বলেছেন, আজ উৎসবের দিন। কারও মতে, শান্তি পাবে নির্যাতিতার আত্মা।

তৃণমূল কংগ্রেসের সংসদ সদস্য ও বাংলা চলচ্চিত্র তারকা দেব টুইট করে হায়দ্রাবাদ পুলিশকে অভিনন্দন জানিয়েছেন। এনকাউন্টার হ্যাশট্যাগ দিয়ে তিনি বলেছেন, এটার প্রয়োজন ছিল। এই টুইটটি শতাধিক মানুষ রিটুইট করেছেন। অনেকেই তার মতের পক্ষে সমর্থনের কথা বলেছেন। যারা বিরোধিতা করেছেন তারা সংখ্যায় বেশ কম।

তবে দেবের এই বক্তব্য তার নিজের দলের শীর্ষ নেতা মমতা ব্যানার্জির বক্তব্যের সঙ্গে পুরোপুরি সাংঘর্ষিক। শুক্রবার দুপুরে কলকাতায় এক অনুষ্ঠানে আইনের শাসন তথা বিচার ব্যবস্থার প্রতি আস্থা রাখার কথা বলেন মমতা। ওই ঘটনা প্রসঙ্গে মমতা বলেন, ‘‘আইন নিজের হাতে তুলে নেওয়াটা আইন নয়। আইন এটাই যে পুলিশ তার কাজ করবে। অভিযুক্তদের আদালতে পেশ করবে। বিচারক তার কাজ করবেন।” এই বক্তব্যের মাধ্যমে মমতা তার দলের অবস্থানের কথা স্পষ্ট করার পরও ভিন্নমত দেন আরও দুই সংসদ সদস্য নুসরাত জাহান ও মিমি চক্রবর্তী।

এদের মধ্যে নুসরাত টুইটে লিখেছেন, অবশেষে... সুবিচারের জন্য বিচার কাউকে না কাউকে এটা করতে হতো। আর্তি শোনা হয়েছে, অপরাধীদের আর অস্তিত্ব নেই।

নিজেকে ধর্মনিরপেক্ষ ও মানবতাবাদী হিসেবে পরিচয় দেওয়া এই অভিনেত্রী আইনি প্রক্রিয়া সরাসরি পাশ কাটিয়ে যাওয়ার পক্ষেই তার মত দিয়েছেন।

মমতার বক্তব্য গণমাধ্যমে আসার পরও মিমি চক্রবর্তী তেলেঙ্গানা পুলিশকে বাহাবা দিয়ে লিখেন, নির্যাতিতার আত্মা শান্তি পাবে। ঘটনার পর পুলিশ সদস্যদের ঘিরে ধরে একদল মানুষের উল্লাসের একটি ভিডিও রিটুইট করেন তিনি।

তবে পুরো ঘটনাটি না জানার আগে কাউকে দোষারোপের পক্ষে নয় কংগ্রেসের লোকসভা সদস্য শশী থারুর। তিনি বলেছেন, অভিযুক্তরা সশস্ত্র ছিল কি না সেটি আগে জানতে হবে। এমনটা হলেই কেবল পুলিশের দিক থেকে প্রথমে গুলি চালানোকে ন্যায্যতা দেওয়া যায়। অন্যথায় আইনের শাসনের দেশে বিচার বহির্ভূত হত্যাকাণ্ডকে কোনোভাবেই মান্যতা দেওয়া যায় না।

Comments