নায়ক থেকে ভিলেন হয়েছিলেন খলিল
একজন জাত শিল্পী বলা হতো খলিলকে (খলিল উল্লাহ খান)। জীবদ্দশায় ৮শ’ সিনেমায় অভিনয় করার রেকর্ড কম শিল্পীরই আছে। এ দেশের সিনেমা শিল্পকে যারা সমৃদ্ধ করে গেছেন, খলিল তাদের মধ্যে অন্যতম। অসাধারণ গুণী একজন অভিনেতা ছিলেন তিনি। অভিনয় জীবন শুরু করেছিলেন মঞ্চ নাটক দিয়ে।
আজ (৭ ডিসেম্বর) তার পঞ্চম মৃত্যুবার্ষিকী।
সিনেমার সফলতা তাকে ছুঁয়ে গিয়েছিলো। পাশাপাশি টেলিভিশন নাটকে অভিনয় করেও সফল হয়েছিলেন।
২০১২ সালে এই গুণী শিল্পী জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার-এ আজীবন সম্মাননায় ভূষিত হয়েছিলেন। এছাড়া, তারও অনেক আগে গুণ্ডা সিনেমায় অভিনয় করার জন্য প্রথমবার পেয়েছিলেন জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার।
বিটিভির ইতিহাসের আলোচিত নাটকগুলির মধ্যে সংশপ্তক একটি। আবদুল্লাহ আল মামুন পরিচালিত এই নাটকে খলিল অভিনয় করেছিলেন ফেলু মিয়া (মিয়ার বেটা) চরিত্রে। সেই সময়ে খলিলের একটি সংলাপ ভীষণ জনপ্রিয়তা পেয়েছিলো- ‘টাকা আমার চাই, নইলে জমি’।
বহুদিন খলিলের দেওয়া সংলাপটি মানুষের মুখে মুখে ফিরতো।
সংশপ্তক নাটকে অভিনয় করেছিলেন নাট্যজন মামুনুর রশীদ।
তিনি বলেন, “খলিল ভাই ছিলেন একজন অভিনয় পাগল মানুষ। কী সিনেমা, কী নাটক, দুই মাধ্যমেই ছিলেন সফল অভিনয় শিল্পী। তাকে জাত শিল্পী বলবো আমি। যেকোনো চরিত্রে নিজেকে মানিয়ে নিতে পারতেন।”
সিনেমায় খলিলের যাত্রা শুরু হয়েছিলো নায়ক হিসেবে। নায়ক থেকে খলনায়ক হতে কম শিল্পীকেই হতে দেখা গিয়েছিলো এ দেশের সিনেমায়। যা খলিল করে দেখিয়েছিলেন। নায়ক হিসেবে প্রথম অভিনীত সিনেমার নাম- সোনার কাজল। এটি যৌথভাবে পরিচালনায় ছিলেন জহির রায়হান ও কলিম শরাফী।
প্রথম সিনেমা সোনার কাজল-এ খলিলের নায়িকা ছিলেন সুমিতা দেবী ও সুলতানা জামান।
এরপর, খলিল নায়ক হিসেবে রূপালী পর্দায় আবির্ভূত হয়েছিলেন- প্রীত না জানে রীত, সঙ্গম, জংলি ফুল-সহ আরও কয়েকটি সিনেমায়।
নায়ক থেকে একসময় পরিচালকরা তাকে খলনায়কের চরিত্রে অভিনয়ের আমন্ত্রণ জানালে, সানন্দে রাজি হয়ে যান। অভিনয়কে ভালোবাসার কারণেই এটি সম্ভব ছিলো। খলনায়ক হিসেবে প্রথম অভিনয় করা সিনেমার নাম- বেগানা।
বেগানা সিনেমাটি পরিচালনা করেছিলেন এসএম পারভেজ।
খলিল অভিনীত উল্লেখযোগ্য কিছু সিনেমার মধ্যে রয়েছে- পুনম কি রাত, তানসেন, পাগলা রাজা, নদের চাঁদ, বেঈমান, ফকির মজনু শাহ, আলোর মিছিল, মেঘের পরে মেঘ, মিন্টু আমার নাম, এতোটুকু আশা, বিনি সুতার মালা, মধুমতি, কার বউ, ভাই ভাই, নবাব সিরাজ উদ দৌলা (রঙিন), মাটির পুতুল ইত্যাদি।
৫০ বছরেরও বেশি সময় ধরে তিনি অভিনয় করে গেছেন। অভিনয় জীবনে কখনও বিরতি নেননি।
অভিনয় ছাড়া তিনি একটি মাত্র সিনেমা পরিচালনা করেছিলেন। তার পরিচালিত সিনেমাটির নাম- ভাওয়াল সন্ন্যাসী।
দুটি সিনেমা প্রযোজনা করেছিলেন খলিল। একটি সিনেমার নাম- সিপাহী। অপর সিনেমাটির নাম- এই ঘর এই সংসার।
খলিলের সঙ্গে অরুণোদয়ের অগ্নিসাক্ষী, বাদী থেকে বেগম সিনেমায় অভিনয় করেছিলেন আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন নায়িকা ববিতা।
তিনি বলেন, “ভীষণ রকমের ভালোমানুষ ছিলেন খলিল ভাই। অভিনেতা হিসেবে কতো বড় মাপের ছিলেন, তা আর বলার অপেক্ষা রাখে না। তার মৃত্যুর দিনে একটাই চাওয়া- জান্নাতবাসী হোন।”
এসো নীপবনে, সংশপ্তক নাটক দুটিতে খলিলের সঙ্গে অভিনয় করার সুযোগ ঘটেছিলো তারিক আনাম খানের।
তিনি বলেন, “খলিল ভাই ছিলেন আমাদের কিশোর বয়সের নায়ক। বাংলা ও উর্দু বেশ কিছু সিনেমার নায়ক ছিলেন তিনি। তার সঙ্গে দুটি মাত্র নাটকে অভিনয় করলেও দেখা ও আড্ডা হতো অনেক। খুব মজার মানুষ ছিলেন। কোনোরকম হতাশা তার জীবনে দেখিনি। সবসময় হইচই ও আড্ডা দিতে পছন্দ করতেন। একটি মোটরসাইকেল ছিলো তার। মোটরসাইকেল ছাড়া কখনও শুটিংয়ে বা এফডিসিতে আসতেন না। তিনি ছিলেন সত্যিকারের বাঙালি হিরো।”
খলিলের জন্ম সিলেটের কুমারপাড়ায় ১৯৩৪ সালের ১ ফেব্রুয়ারি।
বাংলাদেশ চলচ্চিত্র শিল্পী সমিতির সভাপতিও ছিলেন তিনি।
২০১৪ সালের ৭ ডিসেম্বর ঢাকায় মারা যান খলিল। পঞ্চম মৃত্যুবার্ষিকীতে তার প্রতি গভীর শ্রদ্ধা।
Comments