‘প্রথম প্লেব্যাক করে একশ টাকা সম্মানী পেয়েছিলাম’

বাংলাদেশের সংগীত জগতে মো. খুরশীদ আলম এক অতি পরিচিত নাম। খ্যাতিমান এই শিল্পী ৫০ বছরেরও বেশি সময় ধরে গানের জগতে বিচরণ করছেন। কেবল প্লেব্যাকে তার ৫০ বছর পূর্ণ হয়েছে এ বছর। অসংখ্য জনপ্রিয় গান রয়েছে তার, যেগুলোর বেশিরভাগই সিনেমায় ব্যবহার করা হয়েছে। পেয়েছেন একুশে পদক। খুরশীদ আলম দ্য ডেইলি স্টারকে জানিয়েছেন তার জীবনের অনেক কথা।
Khurshid-Alam.jpg
মো. খুরশীদ আলম। ছবি: শেখ মেহেদী মোর্শেদ/স্টার

বাংলাদেশের সংগীত জগতে মো. খুরশীদ আলম এক অতি পরিচিত নাম। খ্যাতিমান এই শিল্পী ৫০ বছরেরও বেশি সময় ধরে গানের জগতে বিচরণ করছেন। কেবল প্লেব্যাকে তার ৫০ বছর পূর্ণ হয়েছে এ বছর। অসংখ্য জনপ্রিয় গান রয়েছে তার, যেগুলোর বেশিরভাগই সিনেমায় ব্যবহার করা হয়েছে। পেয়েছেন একুশে পদক। খুরশীদ আলম দ্য ডেইলি স্টারকে জানিয়েছেন তার জীবনের অনেক কথা।

সত্যি কথা বলতে জীবন থেকে অনেক বছর কেটে গেলো। পেছনে ফিরে তাকালে কতো কথাই তো মনে পড়ে। এতো লম্বা একটা জার্নি, মনে তো পড়বেই। বিশেষ করে আমার এই বয়সটাই আসলে পেছনের কথাগুলো বেশি মনে করিয়ে দেয়।

আমার জন্ম জয়পুরহাটে। মাত্র তিন বছর বয়সে মা-বাবার সঙ্গে ঢাকায় চলে আসি। ঢাকায় এসে স্থায়ীভাবে বসবাস শুরু করি। ছেলেবেলায় ঢাকা থেকে জয়পুরহাটে যাওয়ার স্মৃতিগুলো ছিলো ভীষণ সুন্দর। সেসব দৃশ্য পেছনে তাকালে আজও আমার চোখে ভাসে।

আমার চাচা ডা. সাজেদুর রহমানের কাছে প্রথম গান শেখা। তার কাছেই মূলত আমার গানের হাতেখড়ি। অনেক যত্ন করে তিনি আমাকে গান শেখাতেন। ছোটবেলা থেকেই গানের প্রতি ঝুঁকে যাই আমি। গান শেখার দৃশ্যটা চোখে ভাসলেই মনে হয়- এর চাইতে পবিত্র দৃশ্য আর কিছু হতে পারে না। কাজেই সেসব কথাও মনে পড়ে খুব।

এখন আমাকে প্লেব্যাক ও আধুনিক গানের শিল্পী হিসেবে সবাই চেনেন ও জানেন। কিন্তু আমার শুরুটা হয়েছিলো রবীন্দ্র সংগীত দিয়ে। ৬০-এর দশকে জীবনের প্রথম রবীন্দ্রনাথের গান গেয়েছিলাম শেখ বোরহানউদ্দিন কলেজে।

আরও কিছুদিন পর বেতারে অডিশন দিই। শুরু করি বেতারে গান গাওয়া। রেডিওতে প্রথম গেয়েছিলাম- তোমার দু’হাত ছুঁয়ে শপথ নিলাম। এভাবেই গানের সঙ্গে জড়িয়ে পড়া। আজকে মানুষ যতোটুকু আমাকে চেনেন- তার জন্য ওই সময়ের লেগে থাকাটাও কম নয়। লেগে ছিলাম বলেই গান করতে পেরেছি। সেজন্য এসব ঘটনাও আমার স্মৃতিতে ভাসে।

সিনেমার গানই আমাকে বেশি করে মানুষের কাছে পরিচিতি দিয়েছে। কতো মানুষ আমাকে সহযোগিতা করেছেন। কয়জনের নাম বলবো? এটুকু বলি, যারা আমাকে সহযোগিতা করেছিলেন, সবার কথা মনে পড়ে, সবার প্রতি আমি কৃতজ্ঞ।

সিনেমায় প্রথম গান করি আগন্তুক সিনেমায়। এটা ১৯৬৯ সালের কথা। আগন্তুক সিনেমাটি পরিচালনা করেছিলেন বাবুল চৌধুরী। গানটি ছিলো- বন্দী পাখির মতো। আজাদ রহমান সুর করেছিলেন। আগন্তুক সিনেমায় নায়ক রাজ রাজ্জাকের ঠোঁটে ছিলো গানটি। এই গানটি মানুষ গ্রহণ করেন। এই সিনেমার কথা ও এই সিনেমায় গান করার কথাও মনে পড়ে আমার।

আরেকটি ঘটনা মনে পড়ে। আগন্তুক সিনেমায় গান করবো, ওইভাবে আমি জনপ্রিয় হয়ে উঠিনি। তখন রাজ্জাকের বাসায় কয়েকটি দিন বসি। তিনি তখন অনেক জনপ্রিয় নায়ক। আমার গান শুনলেন। তার পছন্দ হলো। শেষে আগন্তুক সিনেমায় গানটি গাই এবং সেটি সবাই পছন্দ করেন। সেদিন তো রাজ্জাক ভাই গানটি পছন্দ নাও করতে পারতেন। তার কথাও মনে পড়ে।

আমার গুণী সংগীত শিল্পী আবদুল জব্বারের কথাও মনে পড়ে। তার কথাও ভুলবার নয়। অনেক সহযোগিতাপরায়ন একজন শিল্পী ছিলেন। মানুষ হিসেবে মনটা বিশাল ছিলো তার।

একবার ঢাকার বাইরে একটি গানের অনুষ্ঠান হবে। সেটা টাঙ্গাইল জেলার করটিয়াতে। সম্ভবত ১৯৬৪ সালের কথা। আমি তখন অনেকটাই নতুন। আবদুল জব্বার ভাই আমাকে নিয়ে গেলেন। বিখ্যাতদের সঙ্গে আমাকেও গান গাওয়ার সুযোগ করে দিয়েছিলেন। সাবিনা ইয়াসমিনও সেদিন গান করেছিলেন।

পারিশ্রমিকও পেয়েছিলাম। ওই ঘটনাটিও মনে পড়ে। একজন বড় মাপের ও বড় মনের মানুষ বলেই তিনি আমাকে সেদিন সুযোগটি করে দিয়েছিলেন। যা আজও ভুলিনি। যা আজও মনে পড়ে।

প্রথম প্লেব্যাক করে একশ টাকা সম্মানী পেয়েছিলাম। সে কথাও মনে পড়ে।

মনে পড়ে- রবিন ঘোষের কথা। মনে পড়ে সত্য সাহার কথা। আজাদ রহমানের কথা। আনোয়ার পারভেজের কথা। মো. রফিকুজ্জামানের কথা। যাদের নাম মনে করতে পারছি না, তাদের কাছে ক্ষমা চেয়ে নিচ্ছি। এইসব নামি মানুষেরা আমাকে গায়ক হিসেবে গড়ে উঠতে সহযোগিতা করেছেন। তাদের কথা শেষ জীবনে এসে খুব মনে পড়ে।

সিনেমায় আমি চারশো’র বেশি গান করেছি। প্রচুর গান জনপ্রিয়তা পেয়েছে। মানুষ ভালোবেসে আমার গান গ্রহণ করেছেন। এটাই প্রাপ্তি। সংগীতে এখনও জাতীয় পুরস্কার পাইনি। আফসোস নেই। মানুষ আমার গান শুনে, এটাই বড় কথা।

আজও রাস্তায় বের হলে কখনও কখনও শুনতে পাই- চুমকি চলেছে একা পথে, চুরি করেছো আমার মনটা, বন্ধু তো বরাত নিয়া আমি যাবো, আজকে না হয় ভালোবেসো আর কোনোদিন নয়, ধীরে ধীরে চল ঘোড়া, আলতো পায়ে, মাগো মা ওগো মা- আমার বানাইলা তুমি দিওয়ানা ইত্যাদি। এই গানগুলি যখন কোথাও গেলে শুনতে পাই- আমি ফিরে যাই আমার অতীতে। মনে করি- ওই তো আমি।

আসলে জীবন এমনই। জীবনের গল্প কখনও ফুরায় না।

Comments

The Daily Star  | English

Fashion brands face criticism for failure to protect labour rights in Bangladesh

Fashion brands, including H&M and Zara, are facing criticism over their lack of action to protect workers' basic rights in Bangladesh, according to Clean Clothes Campaign (CCC)..One year after a violent crackdown by state actors and employers against Bangladeshi garment workers protesting

Now