লোকসভায় বিএনপি সম্পর্কে অসত্য বলেছেন অমিত শাহ: বিএনপি

ভারতে নাগরিকত্ব আইন সংশোধনের পক্ষে যুক্তি দিতে গিয়ে দেশটির স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ও বিজেপি সভাপতি অমিত শাহ লোকসভায় বাংলাদেশ ও বিএনপি সম্পর্কে অসত্য তথ্য উপস্থাপন করেছে দাবি করে এই বক্তব্য প্রত্যাহারের জন্য ভারত সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে বিএনপি।
mirza-fakhrul-islam-alamgir-1_2_0.jpg
বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। ফাইল ছবি

ভারতে নাগরিকত্ব আইন সংশোধনের পক্ষে যুক্তি দিতে গিয়ে দেশটির স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ও বিজেপি সভাপতি অমিত শাহ লোকসভায় বাংলাদেশ ও বিএনপি সম্পর্কে অসত্য তথ্য উপস্থাপন করেছে দাবি করে এই বক্তব্য প্রত্যাহারের জন্য ভারত সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে বিএনপি।

বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর আজ রোববার বিকেলে গুলশানে দলের চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলন করে এই দাবি জানান।

ফখরুল বলেন, ভারতের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী তাদের পার্লামেন্টে বিতর্কিত নাগরিকত্ব সংশোধনী বিলের যৌক্তিকতা প্রমাণ করতে গিয়ে অযাচিতভাবে বাংলাদেশের প্রসঙ্গ টেনে এনেছেন। তিনি ঢালাওভাবে পাকিস্তান ও আফগানিস্তানের সঙ্গে বাংলাদেশের প্রসঙ্গ টেনে বলেছেন যে, “ইসলাম রাষ্ট্র ধর্ম হওয়ার কারণেই বাংলাদেশে অন্য ধর্মের মানুষেরা নিপীড়িত হচ্ছেন”। অমিত শাহ পার্লামেন্টে তার বক্তব্যের এক পর্যায়ে খালেদা জিয়ার নেতৃত্বাধীন বিএনপি সরকারের নাম উচ্চারণ করে শিষ্টাচার বহির্ভূতভাবে সরাসরি অভিযুক্ত করে বলেছেন যে, বাংলাদেশে বিএনপি ক্ষমতায় থাকাবস্থায় সেখানে ব্যাপক হারে সংখ্যালঘু নির্যাতন হয়েছে। নির্যাতনের শিকার সংখ্যালঘু হিন্দু সম্প্রদায় ভারতে পালিয়ে এসেছে। এর মাধ্যমে তিনি উদ্দেশ্যমূলকভাবে  বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল বিএনপিকে সাম্প্রদায়িক নিপীড়নকারী দল হিসেবে চিহ্নিত করার অপচেষ্টা চালিয়েছেন। বিতর্কিত এই বিলের পক্ষে যুক্তি দিতে গিয়ে অমিত শাহ “বাংলাদেশে হিন্দু নির্যাতন এখনো অব্যাহত আছে এবং সে কারণেই এই বিল আনয়ন করা হয়েছে” বলে ভারতীয় পার্লামেন্টে  মিথ্যা ও ভিত্তিহীন তথ্য উপস্থাপন করেছেন।

এই বক্তব্যকে অসত্য দাবি করে ভবিষ্যৎ সহযোগিতার স্বার্থে এমন বক্তব্য থেকে বিরত থাকার জন্যও ভারত সরকারের প্রতি আহ্বান জানান ফখরুল।

মির্জা ফখরুল বলেন, প্রকৃতপক্ষে মিয়ানমার যেমন রাষ্ট্রযন্ত্র ব্যবহার করে নির্যাতনের মুখে রোহিঙ্গাদের রাষ্ট্রহীন করে বাংলাদেশে আশ্রয় নিতে বাধ্য করেছে, একইভাবে নাগরিকত্ব আইন এবং নাগরিকপুঞ্জি (এনআরসি) জটিলতায় সংখ্যালঘু ভারতীয় মুসলমানদের রাষ্ট্রহীন ঘোষণা করে জোর করে বাংলাদেশে পুশ-ইন করার প্রক্রিয়া লক্ষ্য করা যাচ্ছে। অথচ বাংলাদেশ সরকার এনআরসি বিষয়টিকে বারবার ভারতের অভ্যন্তরীণ ইস্যু আখ্যায়িত করে এড়িয়ে যাচ্ছে। বাস্তবিক অর্থে এনআরসি ইস্যুতে মিয়ানমার থেকে আগত রোহিঙ্গা শরণার্থী এবং ভারত থেকে সীমান্ত দিয়ে জোরপূর্বক ঢুকিয়ে দেওয়া সংখ্যালঘু ভারতীয় মুসলিমদের মধ্যে কোনো মৌলিক ব্যবধান নাই।

মির্জা ফখরুল দাবি করেন, হিন্দুত্ববাদী ভারত প্রতিষ্ঠার রাজনৈতিক উদ্দেশ্য চরিতার্থ করার লক্ষ্যে বাংলাদেশ ও বিএনপির কাঁধে বন্দুক রেখে মিথ্যাচারের মাধ্যমে সম্পূর্ণ শিষ্টাচার বহির্ভূতভাবে এ অঞ্চলের রাজনীতিকে একটি অসুস্থ পরিবেশের দিকে ঠেলে দিয়েছে। বিএনপি দৃঢ়ভাবে মনে করে,বিজেপির সভাপতি ও ভারতের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী জনাব অমিত শাহ এবং ভারতের বিদেশ মন্ত্রকের মুখপাত্র রাবীশ কুমারের বক্তব্য দুঃখজনকভাবে অসত্য, অপব্যাখ্যামূলক, এক পাক্ষিক, বৈষম্যমূলক, বিভ্রান্তিকর এবং চরমভাবে প্রশ্নবিদ্ধ। তিনি দাবি করেন, এককথায় বলতে গেলে, বিএনপির সব আমলেই তার সরকার সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি অটুট রাখতে সফল হয়েছে।

মির্জা ফখরুল বলেন, নাগরিকত্ব সংশোধনী আইন ও নাগরিক পঞ্জি (এনআরসি) নিয়ে সৃষ্ট অসন্তোষ কেবল ভারতের সীমান্তের মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকবে না, ক্রমান্বয়ে তা গোটা উপমহাদেশের শান্তি ও স্থিতিশীলতাকে বিনষ্ট করবে। চরমভাবে আঘাত করবে এই অঞ্চলের শান্তিপ্রিয় জনগণের সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির চেতনা এবং ঐতিহ্যকে।

সংবাদ সম্মেলনে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য খন্দকার মোশাররফ হোসেন, মির্জা আব্বাস, আবদুল মঈন খান, গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, নজরুল ইসলাম খান, আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরী, সেলিমা রহমান, ইকবাল মাহমুদ প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।

Comments

The Daily Star  | English

Abu sayed’s death in police firing: Cops’ FIR runs counter to known facts

Video footage shows police shooting at Begum Rokeya University student Abu Sayed, who posed no physical threat to the law enforcers, during the quota reform protest near the campus on July 16. He died soon afterwards.

5h ago