আউট জেনে ড্রেসিং রুমে, আম্পায়ারের ডাকে ফের মাঠে ব্যাটসম্যান
ক্যাচটা ঠিকঠাকই ধরেছেন ফিল্ডার। মাঠের আম্পায়ারও আঙুল তুললেন। স্বাভাবিকভাবেই আউট ঘোষণা হয়ে যাওয়ায় মাঠ ছেড়ে বেরিয়ে যান কুমিল্লা ওয়ারিয়র্সের লঙ্কান ব্যাটসম্যান ভানুকা রাজাপাকসে। নতুন ব্যাটসম্যান ইয়াসির আলী রাব্বিও মাঠে ঢুকে পড়েন। ওইদিকে প্যাড খোলার প্রস্তুতি নিচ্ছেন রাজাপাকসে। ঠিক সে সময় তৃতীয় আম্পায়ার মোর্শেদ আলী খান সুমন জানালেন আউট হননি রাজাপাকসে। ওয়াহাব রিয়াজের বলটি ছিল নো-বল। আর তাতেই নানা বিপত্তি।
তার তাতেই আলোচনা-সমালোচনা শুরু হয়ে যায় ক্রিকেট মহলে। সামাজিক মাধ্যমেও সমর্থকদের নানা আলোচনা। ড্রেসিং রুমে যাওয়ার পর কীভাবে ব্যাটসম্যান ফিরে আসেন। কিন্তু ক্রিকেটের আইনে বলছে এমনটা করতে পারবেন আম্পায়াররা। ঘরোয়া ক্রিকেটের নিয়মিত ম্যাচ রেফারি ও টেকনিক্যাল কমিটির প্রধান রকিবুল হাসানও জানালেন এমনটাই, 'মাঠের বাইরে যাওয়া ব্যাপার না। আউট দেওয়ার পর পরবর্তী বল হওয়ার আগ পর্যন্ত তাকে ফিরিয়ে আনতে পারবেন আম্পায়াররা। যদি তাদের মনে হয় এটা নো-বল হয়েছে। অথবা তৃতীয় আম্পায়ার এমন কোন ঘোষণা দেন। তবে মাঠের আম্পায়ারদের উচিৎ ছিল নিশ্চিত না হওয়া পর্যন্ত ব্যাটসম্যানকে মাঠেই আটকে রাখা।'
ঘটনাটি ঘটে ইনিংসের পঞ্চম ওভারের পঞ্চম বলে। ডিপ স্কয়ার লেগ দিয়ে ছক্কা মারতে চেয়েছিলেন ভানুকা রাজাপাকসে। ডিপ স্কয়ার লেগে থেকে কিছুটা দৌড়ে সহজেই সে ক্যাচ লুফে নিয়েছিলেন মেহেদী হাসান। কুমিল্লা ওয়ারিয়র্সের তৃতীয় উইকেট ফেলে দেওয়া স্বাভাবিকভাবে উল্লসিত ঢাকা প্লাটুনের খেলোয়াড়রা। নতুন ব্যাটসম্যান ইয়াসির আলী রাব্বিও মাঠে চলে এলেন। খেলার প্রস্তুতিও নিচ্ছিলেন। এরপরই ঘটে বিপত্তি। তৃতীয় আম্পায়ার নো-বল দেওয়ায় ড্রেসিং রুম থেকে ফের মাঠে নামেন রাজাপাকসে। এ সময় ২০ রানে ব্যাট করছিলেন তিনি।
আর আম্পায়ারদের এমন সিদ্ধান্তে অসন্তুষ্ট ঢাকার খেলোয়াড়রা। তামিম ইকবাল ও মাশরাফি বিন মুর্তজাদের মাঠেই প্রতিবাদ করেছেন। ড্রেসিং রুমে অসন্তুষ্টি প্রকাশ করতে দেখা গেছে কোচ সালাহউদ্দিনকেও। ক্রিকেটের বাইলজে আম্পায়ারদের এমন এখতিয়ার থাকায় লাভ হয়নি। ফের ব্যাটিংয়ে নামেন রাজাপাকসে। শেষ পর্যন্ত অপরাজিত ৯৬ রানের ইনিংস খেলেন এ লঙ্কান।
তবে ব্যাপারটা কিছুটা হলেও দৃষ্টিকটু ঠেকেছে। সে সময় মাঠের আম্পায়ার ছিলেন গাজী সোহেল। নিশ্চিত না হয়ে আউট দেওয়াতেই যতো বিপত্তি। লঙ্কান লেগ আম্পায়ার প্রাগিথ রাম্বুকওয়ালাও রাজাপাকসেকে আটকাননি। তবে ক্রিকেট বিশ্বে এমন ঘটনা নতুন নয়। চলতি বছরের ফেব্রুয়ারিতে ওয়েস্ট ইন্ডিজ-ইংল্যান্ড সেন্ট লুসিয়া টেস্টেও দেখা গিয়েছিল এমনটা। ওয়েস্ট ইন্ডিজের পেসার আলজেরি জোসেফকে ফিরতি ক্যাচ দিয়েছিলেন বেন স্টোকস। মাঠ ছেড়ে বেরিয়েও গিয়েছিলেন তিনি। টিভি রিপ্লেতে দেখা যায়, ওভার স্টেপিং করেছিলেন জোসেফ। ব্যাটসম্যানকে আবার ডেকে পাঠান আম্পায়ার।
এমন উদাহরণ রয়েছে আরও। শুধু যে নো-বল বিপত্তি তাও নয়। তৃতীয় আম্পায়ার ভুল আউট দেওয়ার পর ব্যাটসম্যান ড্রেসিং রুমে গিয়ে প্যাডও খুলে ফেলেন। পরে পুনরায় পরীক্ষা করে দেখার পর আবারও মাঠে নামেন ব্যাটসম্যানরা। ১৯৯৭ সালে লাহোরে ভারতের বিপক্ষে পাকিস্তানের শহীদ আফ্রিদিকেও এমনভাবে ফেরানো হয়। রাজেশ চৌহানের বলে আফ্রিদিকে স্টাম্পিংয়ের ফাঁদে ফেলেন উইকেটরক্ষক সাবা করিম। লাল বাতি জ্বালিয়ে আউট দেন তৃতীয় আম্পায়ার। আফ্রিদি তখন ড্রেসিং রুমে উঠে প্যাড ছেড়ে বিশ্রাম নিচ্ছিলেন। মাঠে নতুন ব্যাটসম্যান মোহাম্মদ ওয়াসিম নিচ্ছিলেন ব্যাটিংয়ের প্রস্তুতি। পরে আম্পায়ার বারংবার রিভিউ করে সিদ্ধান্ত পরিবর্তন করলে আবার মাঠে নামেন আফ্রিদি।
Comments