একজন বাবা কতোটা অসহায় হতে পারেন!

পাঁচ বছর ধরে ছেলে হত্যার বিচারের জন্য লড়াই করেছেন ৬০ বছরের বৃদ্ধ আল আবু জাফর শিকদার। রাজধানীর দনিয়াতে একটি ছোট ওষুধের দোকান রয়েছে তার। ২০১৪ সালে এক ‘বন্দুকযুদ্ধে’ তার ছেলে নিহত হন।
নিহত মেজবাহউদ্দিন তারেক। ছবি: সংগৃহীত

পাঁচ বছর ধরে ছেলে হত্যার বিচারের জন্য লড়াই করেছেন ৬০ বছরের বৃদ্ধ আল আবু জাফর শিকদার। রাজধানীর দনিয়াতে একটি ছোট ওষুধের দোকান রয়েছে তার। ২০১৪ সালে এক ‘বন্দুকযুদ্ধে’ তার ছেলে নিহত হন।

মামলা মীমাংসার জন্য জাফরকে হুমকি ও টাকার প্রলোভন দেখানো হলেও, ছেলে হত্যার বিচারের দাবিতে তিনি সবসময় সংকল্পবদ্ধ ছিলেন।

চলতি বছরের মে মাসে তার আরেক ছেলেকে গ্রেপ্তার করে মাদকের মামলা দেওয়া হয়। এরপর তিনি হাল ছেড়ে দেন এবং পরিবারের চাপে আদালতের বাইরে মামলাটির সমঝোতায় সম্মত হন।

সম্প্রতি দ্য ডেইলি স্টারকে জাফর বলেন, “আমি আমার ছেলে হত্যার বিচারের জন্য যথাসাধ্য চেষ্টা করেছি। কিন্তু, কোনো ফল পাইনি। এই মুহূর্তে এর বেশি কিছু আমি বলতে পারবো না।”

তিনি আরও বলেন, “আমি শুধু এটুকুই বলতে পারি, আমার সন্তানরা নির্দোষ ছিলো।”

কিন্তু, সমঝোতার কথা স্বীকার করলেও এ বিষয়ে বিস্তারিত মন্তব্য করতে রাজি হননি তিনি।

তার বড় ছেলের নাম মেজবাহউদ্দিন তারেক। ২৪ বছর বয়সী তারেক ছিলেন একজন পোশাক শ্রমিক। ২০১৪ সালের ১৪ সেপ্টেম্বর গোয়েন্দারা তারেককে দনিয়ার বাসা থেকে তুলে নিয়ে যান। তার কয়েক ঘণ্টা পরেই ‘বন্দুকযুদ্ধে’ নিহত হন তিনি। সেসময় মালয়েশিয়া যাওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন তারেক।

পুলিশের দাবি, তারেক একজন অস্ত্রব্যবসায়ী ছিলেন। কিন্তু, তারেকের পরিবার তা সরাসরি অস্বীকার করে আসছে।

পরিবারের অভিযোগ, তৎকালীন পুলিশ সুপার সালমা বেগম এবং তার স্বামীর সঙ্গে বিরোধের কারণেই গোয়েন্দারা তারেককে হত্যা করে।

তবে, তারেকের নামে থানায় কোনো মামলা বা সাধারণ ডায়েরি ছিলো না।

তারেক নিহত হওয়ার পরে তার বাবা জাফর কদমতলী থানায় মামলা করতে গেলেও পুলিশ মামলা নেয়নি। পরে ২৫ সেপ্টেম্বর ঢাকার একটি আদালতে সাত ডিবি সদস্যসহ ১০ জনের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেন তিনি।

মামলায় অভিযুক্ত দশ আসামি হলেন: সালমা বেগম, তার স্বামী খায়রুল আলম টুটুল, টুটুলের শ্যালক আব্দুল আহাদ সোহরাব, সহকারী কমিশনার একেএম মাহবুবুর রহমান, পরিদর্শক নিবারণ চন্দ্র বর্মণ, উপ-পরিদর্শক শাহীন মো. আমানউল্লাহ, সহকারী উপ-পরিদর্শক মো. আখতারুজ্জামান, কনস্টেবল আসাদুল হক, মমতাজউদ্দিন এবং খায়রুল ইসলাম।

মামলায় উল্লেখ করা হয়েছে, দনিয়াতে পুলিশ সুপার সালমার জমির পাশেই জাফরের জমি ছিলো। ওই জমি সালমার পরিবার কিনতে চাইলে তা বিক্রি করতে অস্বীকার করে জাফরের পরিবার। এ কারণে তাদের উপর ক্ষোভ ছিলো সালমার।

জাফর অভিযোগ করেন, পুলিশ সুপার সালমা ও তার স্বামীর দ্বারা প্রভাবিত হয়ে একদল গোয়েন্দা তার ছেলেকে হত্যা করে ‘বন্দুযুদ্ধের’ নাটক সাজিয়েছে।

তবে, মামলায় অভিযুক্ত পুলিশ সুপার দম্পতি ও অন্যরা এই অভিযোগ অস্বীকার করে আসছেন। তারা এই ঘটনাকে ‘বন্দুকযুদ্ধ’ বলেই উল্লেখ করেছেন।

পুলিশের একটি সূত্র জানিয়েছে, মামলার সমঝোতার জন্য শুরু থেকেই জাফরকে চাপ দেওয়া হচ্ছিলো। কারণ অভিযুক্ত কিছু পুলিশ সদস্যের পদোন্নতি বন্ধ হয়ে গিয়েছিলো এবং তারা জাতিসংঘের শান্তিরক্ষা মিশনে যেতে পারছিলেন না।

চলতি বছরের এপ্রিলে, মাদক বিক্রির অভিযোগে জাফরের আরেক ছেলে শিহাবউদ্দীন তানজিলকে গ্রেপ্তার করে কদমতলী থানা পুলিশ। তিনি তারেক হত্যা মামলার সাক্ষী ছিলেন। শিহাব এখন কারাগারে আছেন। পরিবারের সদস্যরা অভিযোগ করেছেন যে, জাফরকে সমঝোতার জন্যে চাপ দেওয়ার অংশ হিসেবে এই মামলা দায়ের করা হয়েছে।

জাফরের স্বজন ও প্রতিবেশীরা জানান, গত ২৩ মে জাফরকে সেগুনবাগিচার একটি স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠানের অফিসে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে উভয়পক্ষ একটি সমঝোতাতে পৌঁছায়। এর ছয়দিন পরে নিজের বক্তব্য জানাতে জাফর আদালতে যান।

আদালতকে জাফর বলেন, তার আর কোনো অভিযোগ নেই এবং উভয়পক্ষ ভবিষ্যতে প্রতিহিংসার বশবর্তী হয়ে কিছু না করার সমঝোতায় পৌঁছেছে। আদালতের সূত্র এ তথ্য জানিয়েছে।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে জাফরের স্বজন ও প্রতিবেশীরা জানান, এজন্য আসামিরা জাফরকে ২০ লাখ টাকা দিয়েছে, যদিও তারা ২৫ লাখ টাকার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলো।

জাফরের এক আত্মীয় দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, “একজন হতভাগ্য বাবা এভাবে কতোদিন সব প্রতিকূলতার বিরুদ্ধে লড়াই করবেন? তাই আরেক ছেলেকে বাঁচাতেই সমঝোতা করেছেন তিনি।”

সালমা বর্তমানে রাজশাহী মহানগর পুলিশের অতিরিক্ত কমিশনার হিসেবে কর্মরত রয়েছেন। সম্প্রতি, তিনি দ্য ডেইলি স্টারকে বলেছেন, “আমি ও আমার স্বামী দুজনেই নির্দোষ। আমরা এই ঘটনার সঙ্গে কোনভাবেই জড়িত না। তিনি (জাফর) হয়তো ছেলের মৃত্যুর পর কারো প্ররোচণায় আমাদের নামে অভিযোগ করেছেন।”

(সংক্ষেপিত, পুরো প্রতিবেদনটি পড়তে এই Case buried, hope too লিংকে ক্লিক করুন)

Comments

The Daily Star  | English

Govt to form commissions to reform 6 key sectors: Yunus

The commissions are expected to start their functions from October 1 and they are expected to complete their work within the next three months, said Chief Adviser Prof Muhammad Yunus in his televised address to the nation

3h ago