ফিরে দেখা ২০১৯: ব্যাটে-বলে চরম হতাশার বছর

mushfiq shakib
ছবি: ফিরোজ আহমেদ

অভিজ্ঞতায় পোক্ত, তারুণ্যে উদ্দীপ্ত। বিশ্বকাপের বাংলাদেশ দলকে মনে করা হচ্ছিল নিজেদের ইতিহাসের অন্যতম সেরা। আগের সব আসরের নৈপুণ্য ছাপিয়ে এবারই বড় কিছুর স্বপ্ন দেখছিল দেশ। কিন্তু অনেক আশা জাগানিয়া জয়ে শুরুর পর বাংলাদেশের বিশ্বকাপ শেষ হয় তিক্ততায়। এরপর ঘরের মাঠে আফগানিস্তানের কাছে টেস্ট হার আর বছরের শেষ ভাগে ভারতে গিয়ে নাস্তানাবুদ হওয়া। ২০১৯ সালে বাংলাদেশের ক্রিকেট যেন ব্যর্থতায় টইটম্বুর।

বিশ্বকাপ ব্যর্থতা

এর আগে বিশ্বকাপে বাংলাদেশের সেরা সাফল্য ছিল ২০০৭ বিশ্বকাপে সুপার এইট আর ২০১৫ বিশ্বকাপে কোয়ার্টার ফাইনালে খেলা। দুবারই বাংলাদেশ জিতেছিল তিনটি করে ম্যাচ। ২০১১ সালে ঘরের মাঠে প্রথম পর্ব থেকে বিদায় নিলেও সেবারও জয় ছিল তিনটি।

এবার সময়ের সেরা কম্বিনেশন নিয়ে ইংল্যান্ডে গিয়েও বাংলাদেশ জিতেছে ওই তিনটিই ম্যাচ। প্রথম ম্যাচে দক্ষিণ আফ্রিকাকে হারিয়ে শুরু হয় বাংলাদেশের বিশ্বকাপ। সমর্থকরা দল নিয়ে বাড়াতে থাকেন প্রত্যাশার পারদ। পরে ওয়েস্ট ইন্ডিজকে উড়িয়ে সেই পারদ আরও চড়া হয়েছিল।

কিন্তু এরপর বাংলাদেশ জিততে পেরেছে কেবল আফগানিস্তানের সঙ্গে।  এক সাকিব আল হাসান ছিলেন এক পাশে অনন্য, বাকিরা তার ধারেকাছেও পারফর্ম করতে পারেননি। ছয়শোর উপর রান ১১ উইকেট নিয়ে সাকিব ছিলেন চোখ ধাঁধানো।

বিশ্বকাপের আগে বাংলাদেশের পাঁচ সিনিয়র তারকা ক্রিকেটারকে নিয়েই উন্মাদনা ছিল বেশি। তাদের মধ্যে সাকিব ছাড়া আর কেউই দলকে দিতে পারেননি বেশি কিছু। অধিনায়ক মাশরাফি বিন মর্তুজা করেন সবচেয়ে হতাশ। চোটের সঙ্গে লড়াই করে অনেকটা জোর করে বিশ্বকাপ খেলা মাশরাফির ফিটনেস ছিল প্রশ্নবিদ্ধ। মাঠের পারফরম্যান্সে পড়েছিল তার বড় ছাপ।

গোটা টুর্নামেন্ট খেলে কেবল একটাই উইকেট পান অধিনায়ক মাশরাফি। তামিম ইকবাল মেটাতে পারেননি দলের চাহিদা। অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে ফিফটি করলেও সেটা ছিল ম্যাচের পরিস্থিতিতে বেমানান। তার খেলার ধরনে অন্য প্রান্তের ব্যাটসম্যানের উপর প্রতি ম্যাচেই তৈরি হয়েছে বাড়তি চাপ।

মাহমুদউল্লাহকেও বেশিরভাগ ম্যাচে খুঁজে পাওয়া যায়নি। মুশফিকুর রহিম ছিলেন ভালো-মন্দের মাঝামাঝি। তবে তার উইকেট-কিপিং ছিল দৃষ্টিকটু। নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে সহজ এক রানআউট করতে পারেননি অদ্ভুত ভুলে। নিজেও হন রানআউট। মহাগুরুত্বপূর্ণ ওই ম্যাচ হাতছাড়া হওয়ার মাশুল পরে দিতে হয়েছে দলকে।

সামগ্রিক বিচারে হতাশার বিশ্বকাপের মাঝেও আলো খুঁজে পেয়েছিল কেবল বিসিবি। বোর্ড প্রধান বিদেশিদের কাছ থেকে পাওয়া প্রশংসার মাপকাঠিতেই চাপা দেন বিশ্বকাপের ক্ষত। অবশ্য বিশ্বকাপ পারফরম্যান্স নিয়ে মুখে সন্তুষ্টির কথা জানালেও বিশ্বকাপ শেষ না হতেই প্রধান কোচ স্টিভ রোডসকে বিদায় করে দেয় বাংলাদেশ। চুক্তি শেষ করে দেওয়া হয় পেস বোলিং কোচ কোর্টনি ওয়ালশের সঙ্গেও।

বিশ্বকাপের পরও হতাশার ধারবাহিকতা

বিশ্বকাপের পর পর শ্রীলঙ্কা সফরে গিয়ে তিনটি ওয়ানডে খেলে বাংলাদেশ। মাশরাফির চোটে তামিম দেন নেতৃত্ব। তিনটি ম্যাচেই দলকে দেখা গেছে এলোমেলো। লড়াই করতে না পেরে প্রতি ম্যাচই হেরে আসে বাংলাদেশ।

আফগানদের কাছে টেস্ট হার, ত্রিদেশীয় সিরিজে শিরোপা ভাগ

বিশ বছরের টেস্ট খেলার অভিজ্ঞতা নিয়ে ঘরের মাঠে আফগানিস্তানকেও এই বছর সামলাতে পারেনি বাংলাদেশ। একমাত্র টেস্টে রীতিমতো নাস্তানাবুদ হতে হয় সাকিব আল হাসানের দলকে। এমনকি বৃষ্টিও বাঁচাতে পারেনি বাংলাদেশের হার। স্পিন শক্তিতে ভরপুর মাত্র দুই টেস্ট খেলার অভিজ্ঞতা থাকা আফগানদের বিপক্ষে শুরুতেই ভুল কৌশল নেন সাকিবরা। চট্টগ্রামে তৈরি করা হয় অতি টার্নিং উইকেট। যাতে নাকানিচুবানি খান দেশের ব্যাটসম্যানরা।

এরপর ত্রিদেশীয় সিরিজেও আফগানদের কাছে হেরে শুরু করে বাংলাদেশ। পরে জিম্বাবুয়ে আর আফগানিস্তানকে ফিরতি ম্যাচে হারিয়ে ফাইনালে উঠলেও তৃপ্তি আসেনি। কারণ ফাইনাল ম্যাচ ভেসে যায় বৃষ্টিতে। রিজার্ভ ডে না থাকায় শিরোপা হয় ভাগাভাগি।

ভারত সফরে টি-টোয়েন্টিতে আলো, টেস্টে বেহাল দশা

সাকিব আল হাসানের নিষিদ্ধ হওয়ার ঝড় মাথায় নিয়ে বিপর্যস্ত অবস্থায় ভারতে খেলতে গিয়েছিল বাংলাদেশ। গিয়েই প্রথম ম্যাচে বাজিমাত। দিল্লিতে টি-টোয়েন্টি সিরিজের প্রথম ম্যাচে ভারতকে হারিয়ে দেয় মাহমুদউল্লাহর নেতৃত্বাধীন দল।

আবারও সব অন্ধকার যেন দূর হওয়ার আশা। পরের দুই ম্যাচে লড়াই জমিয়েও সিরিজ জেতা হয়নি। তবু টি-টোয়েন্টি সিরিজের পারফরম্যান্স প্রত্যাশা পূরণই করেছে।

কিন্তু টেস্টে দেখা মেলে ভিন্ন এক দলের। সাকিবের বদলে অধিনায়কত্ব পাওয়া মুমিনুল হক যেন পড়েন অথৈ সাগরে। ইন্দোর টেস্টে ব্যাটসম্যানরা হন নাজেহাল। আড়াই দিনেই হেরে বসে বাংলাদেশ। কলকাতায় দিবা-রাত্রির গোলাপি বলের টেস্ট নিয়ে উন্মাদনা উঠেছিল বিপুল। বিশাল কাভারেজ পাচ্ছিল বাংলাদেশ। কিন্তু মাঠের ক্রিকেটে হতাশা বাড়ে আরও। এবার চরম বিব্রতকর পারফরম্যান্স দেখিয়ে সোয়া দুই দিনেই ইনিংস হারেন মুমিনুলরা।

বাজে হারের সঙ্গে বাংলাদেশের ক্রিকেটারদের শরীরী ভাষা ছিল আপত্তিকর। লড়াইয়ের দৃঢ়তা দেখা যায়নি, টিকে থাকার নিবেদন ছিল প্রশ্নবিদ্ধ।

Comments

The Daily Star  | English
Ishraque Demands Advisers Asif, Mahfuj Alam Resign

Protests continue as Ishraque vows to stay on streets until advisers resign

Protests rolled into this morning as BNP activists and leaders held their ground in front of the mosque, demanding that Ishraque be allowed to take the oath as mayor

2h ago