মালানের ঝড়ের পর শেষ বলের রোমাঞ্চে জিতল কুমিল্লা

বারবার রঙ বদলানো ম্যাচে শেষ ওভারে ১৬ রান দরকার ছিল কুমিল্লা ওয়ারিয়র্সের। ঘটনাবহুল ওভারের শেষ বলে প্রয়োজন দাঁড়াল ৩ রানের। রুদ্ধশ্বাস মুহূর্তে লিয়াম প্লাঙ্কেটের বলে মুজিব উর রহমান চার মেরে জিতিয়ে দেন দলকে।
Dawid Malan
ছবি: ফিরোজ আহমেদ

বারবার রঙ বদলানো ম্যাচে শেষ ওভারে ১৬ রান দরকার ছিল কুমিল্লা ওয়ারিয়র্সের। ঘটনাবহুল ওভারের শেষ বলে প্রয়োজন দাঁড়াল ৩ রানের। রুদ্ধশ্বাস মুহূর্তে লিয়াম প্লাঙ্কেটের বলে মুজিব উর রহমান চার মেরে জিতিয়ে দেন দলকে।

মঙ্গলবার (৩১ ডিসেম্বর) চট্টগ্রাম চ্যালেঞ্জার্সের করা ১৫৯ রান শেষ বলে পেরিয়ে ২ উইকেটে জিতেছে কুমিল্লা ওয়ারিয়র্স। টুর্নামেন্টে এটি তাদের তৃতীয় জয়। রোমাঞ্চ ছড়ানো জয়ে পরের পর্বে যাওয়ার আশাও টিকে রইল তাদের।

অথচ অধিনায়ক ডেভিড মালানের ঝড়ো ফিফটিতে অনায়াসে জেতার পথে ছিল কুমিল্লা। শেষ চার ওভারে কুমিল্লার জিততে দরকার ছিল কেবল ২৬ রান। সেখান থেকে অদ্ভুতভাবে বদলে গেল পরিস্থিতি। ক্রিজে এসে রায়ান বার্লের বলে কুঁকড়ে থাকলেন ডেভিড ভিজে। এই অবস্থায় নেমে খেললেন একের পর এক ডট বল। পরে ৭ বলে আউট হন ১ রান করে। রুবেল হোসেনের ১৮তম ওভার থেকে এল মাত্র ১ রান, উইকেট পড়ল ২টি।

শেষ দুই ওভারে কুমিল্লার জিততে তখন চাই ২৪ রান। সহজ জেতা ম্যাচ এই অবস্থা থেকে হেরে যাওয়ার যোগাড়।  শেষ ওভারে ১৬ রানের চাহিদার মধ্যে ছক্কা-চার মেরে খেলা জমিয়ে তোলেন আবু হায়দার রনি। পরে স্ট্রাইক পেয়ে রান আউট হয়ে ফেরেন মালান। এরপর ব্যাট করতে নেমেছিলেন সানজামুল ইসলাম। কিন্তু তাকে আবার মাঠ থেকেই ফিরিয়ে মুজিবকে পাঠানো হয়। নিয়ম অনুযায়ী আউটই ধরা হয় সানজামুলকে। পরে নামা মুজিবই শেষ বলের হিরো।

শেষ বলে ৩ রান দরকার ছিল কুমিল্লার। প্লাঙ্কেটের নিচু ফুলটস মিড উইকেট দিয়ে সীমানা ছাড়া করে উৎসবে মাতেন মুজিব।

এর আগে বল হাতেও বড় অবদান আফগান এই স্পিনারের। বরাবরের মতো এদিনও তিনি ছিলেন মিতব্যয়ী। মিডিয়াম পেসে রান আটকে দেওয়ার পাশাপাশি ব্রেক থ্রু দিয়েছেন সৌম্য সরকারও। ফলে সহজ লক্ষ্য পেয়েছিল কুমিল্লা।

ব্যাটিংয়ের জন্য বেশ ভালো উইকেটে ১৬০ রানের লক্ষ্যে সতর্ক শুরু করেন কুমিল্লার দুই ওপেনার। এক প্রান্তে স্টিয়ান ফন জিল অবশ্য ছিলেন আগ্রাসী, সঙ্গী রবিউল ইসলাম নিচ্ছিলেন সময়। চতুর্থ ওভারে গিয়ে ভাঙে তাদের ৩০ রানের জুটি। ১২ বলে ২২ করে স্টিয়ান আউট হন প্লাঙ্কেটের বলে। এরপর রবিকে সঙ্গে নিয়ে আরেকটি জুটি পাচ্ছিলেন অধিনায়ক মালান।

এই জুটি ভাঙে রবির অদ্ভুত আউটে। মেহেদী হাসান রানার বল ডিফেন্স করেছিলেন রবি, বল উল্টো ঘুরে এগিয়ে এসে ভেঙে দেয় তার স্টাম্প, কিন্তু রবি সময় থাকলেও পা দিয়ে ঠেকাতে পারেননি বল।

বোলিংয়ে দারুণ করা সৌম্যের সুযোগ ছিল ব্যাটেও রান করে ম্যাচ সেরা হওয়ার। কিন্তু জিয়াউর রহমানের নিরীহ এক বলে স্লগ সুইপ করে ৬ রানে থামেন তিনি।

এরপর ঝড় তুলে বাকিটা ঝটপট শেষ করে দিচ্ছিলেন মালান। ৩৯ বলে ফিফটি করে এই ইংলিশ বাঁহাতি তেতে ওঠেন আরও। খেলা করে দেন সহজ। কিন্তু আরেক পাশে চলে উইকেট পতনের ধারা। ১৮ রান করে সাব্বির রহমান ফিরে যাওয়ার পর দ্রুত বদলে যায় ম্যাচের ছবি। মালানের ৫১ বলে ৭৪ রানের অমন ইনিংসও বৃথা যেতে বসেছিল একটুর জন্য। বাকিদের ব্যর্থতার মাঝে ৫ চার, ৪ ছক্কায় তিনিই যে দলকে এগিয়ে রাখছিলেন অনেকখানি। 

এর আগে টেবিল টপার চট্টগ্রাম চ্যালেঞ্জার্সের ইনিংসকে চাইলে দুই ভাগে বিভক্ত করা যায়। এদিন দলকে নেতৃত্ব দেন নুরুল হাসান সোহান। নিয়মিত অধিনায়ক মাহমুদউল্লাহ চোটের কারণে নেই। ভারপ্রাপ্ত দলনেতা ইমরুল কায়েসও পড়েছেন চোটে। টস হেরে ব্যাট করতে গিয়ে প্রথম ১০ ওভারে বিনা উইকেটে ৯৪ রান তোলে চট্টগ্রাম। পরের দশ ওভার থেকে ৬ উইকেট হারিয়ে আর মাত্র ৬৫ রান। দুই ওপেনার লেন্ডল সিমন্স আর জুনায়েদ সিদ্দিকীর এনে দেওয়া দারুণ শুরু টানতে পারেননি কেউ।

১১.৩ ওভারে উদ্বোধনী জুটিতে ১০৩ রান এলেও শেষ পর্যন্ত দেড়শোর আশেপাশেই থাকে চ্যালেঞ্জার্সের ইনিংস। ৩৪ বলে ৫৫ করা সিমন্সকে আউট করে জুটি ভাঙেন সৌম্য। মিডিয়াম পেসে এরপর বেশ কার্যকর ছিলেন তিনি। পরে আউট করেন রায়ান বার্লকেও। চার ওভার বল করে ২০ রানে ২ উইকেট নেন সৌম্য।

শেষ দিকে টুর্নামেন্টে প্রথমবার নামা জিয়াউর রহমান ২১ বলে ৩৪ না করলে দেড়শোও পেরুতে পারত না চট্টগ্রাম। তবু বোলারদের মুন্সিয়ানায় এই রানেও দুর্দান্ত লড়াই করেছে তারা।

সংক্ষিপ্ত স্কোর:

চট্টগ্রাম চ্যালেঞ্জার্স: ২০ ওভারে ১৫৯/৬ (সিমন্স ৫৫, জুনায়েদ ৪৫, ওয়ালটন ৯, রায়ান ২, নুরুল ৪, জিয়া ৩৪*, প্লাঙ্কেট ৪, পিনাক ০*; মুজিব ০/১৮, রনি ০/১৭, আল-আমিন ১/৪০, ভিজে ১/২৬, সানজামুল ১/৩৩, সৌম্য ২/২০)

কুমিল্লা ওয়ারিয়র্স: ২০ ওভারে ১৬১/৮ (রবি ১৭, স্টিয়ান ২২, মালান ৭৪, সৌম্য ৬, সাব্বির ১৮, ভিজে ১, অঙ্কন, ০, রনি ১২*, সানজামুল ০ (রিটায়ার আউট), মুজিব ৪*; রুবেল ২/১৬, রানা ১/৩১, নাসুম ০/১৮, প্লাঙ্কেট ১/৪৬, জিয়া ১/৩৬, বার্ল ১/৯)

ফল: কুমিল্লা ওয়ারিয়র্স ২ উইকেটে জয়ী।

Comments

The Daily Star  | English

One month of interim govt: Yunus navigating thru high hopes

A month ago, as Bangladesh teetered on the brink of chaos after the downfall of Sheikh Hasina, Nobel Laureate Muhammad Yunus returned home to steer the nation through political turbulences.

8h ago