ক্যান্সার হাসপাতালের এক্স-রে মেশিন: জনঅর্থ অপচয়-অনিয়মের একটি ক্ষুদ্র নমুনা

অব্যবস্থাপনা, অপচয় আর অনিয়মের উদাহরণ জাতীয় ক্যান্সার গবেষণা ইন্সটিটিউট ও হাসপাতাল। প্রায় বিশ বছর আগে জার্মানি থেকে কেনা একটি এক্স-রে মেশিন এখনও পৌঁছাতে পারেনি হাসপাতালের রেডিওলজি বিভাগে।

২০০০ সালে নাতাশা কর্পোরেশনের মাধ্যমে কিনে আনা এক্স-রে মেশিনটি ধুলোবালি মেখে পড়ে আছে দেশের একমাত্র সরকারি ক্যান্সার হাসপাতালের একটি কক্ষে- বিভাগের এক কর্মকর্তা দ্য ডেইলি স্টারকে এ কথা জানান।

রেডিওলজি বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক মুশতাক আহমেদ জালালী জানান, মেশিনটি বিভাগে এনে পরীক্ষামূলকভাবে চালানোর পর তা হস্তান্তর করার কথা থাকলেও, নাতাশা কর্পোরেশন সেটি হাসপাতাল পর্যন্ত পৌঁছে দিয়ে টাকা বুঝে পায়। তবে এক্স-রে মেশিনটি সংশ্লিষ্ট বিভাগে বুঝিয়ে দেয়নি। হাসপাতালের পরিচালককে মেশিনটি বুঝিয়ে দেওয়ার বিষয়ে বেশ কয়েকবার অনুরোধ করা হয়েছিলো। “আজ পর্যন্ত সেটি আমাদের বিভাগে এসে পৌঁছায়নি”, বললেন অধ্যাপক মুশতাক।

এক্স-রে মেশিনটির মূল্য নিয়েও কারো কোনো ধারণা নেই।

দ্য ডেইলি স্টার থেকে নাতাশা কর্পোরেশনের বাংলামোটরের ঠিকানায় যোগাযোগ করে জানা যায়, ২০১৬ সালে মালিকের মৃত্যুর পর কোম্পানিটি বন্ধ হয়ে যায়। শেষ পর্যন্ত ওয়ালিউর রহমান নামের একজনের খোঁজ পাওয়া যায়, যিনি ২০০০ সালে প্রতিষ্ঠানটির একজন প্রশাসনিক কর্মকর্তা হিসেবে দায়িত্বরত ছিলেন।

তিনি জানান, বন্ধ হয়ে যাওয়ার পর প্রতিষ্ঠানের বেশিরভাগ কর্মী নাতাশা হেলথ কেয়ার প্রোডাক্টস লিমিটেড নামের অপর একটি প্রতিষ্ঠানে যোগ দেয়। তবে এক্স-রে মেশিনটি কেনো সঠিকভাবে বুঝিয়ে দেওয়া হয়নি সে বিষয়ে তিনি কিছু বলতে পারেননি।

এক্স-রে মেশিনটি সম্পর্কে নাতাশা হেলথ কেয়ারের মার্কেটিং ম্যানেজার মনোয়ার হোসেন জানিয়েছেন, “যতোদূর মনে পড়ে, এক্স-রে মেশিনটি হাসপাতালে পৌঁছানোর পর দেখা গেলো যে তারা যে ধরণের মেশিন চেয়েছিলো সেটা ছিলো কিছুটা ভিন্ন।”

গত বিশ বছরের মধ্যে হাসপাতালের কোনো পরিচালকই সমস্যাটি সমাধানের চেষ্টা করেননি। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক হাসপাতালের এক কর্মী জানিয়েছেন, “কিছু লোকের স্বার্থের জন্যই এমন ঘটনা ঘটেছে।”

ঢাকার মহাখালীতে অবস্থিত দেশের এই একমাত্র সরকারি ক্যান্সার হাসপাতালে প্রতিদিন গড়ে প্রায় ৮০-১০০ টি এক্স-রে করা হয় একটিমাত্র কার্যকর মেশিন দিয়ে। হাসপাতাল সূত্রে জানা গেছে, গত দেড় বছর ধরে নষ্ট হয়ে পড়ে আছে আরেকটি এক্স-রে মেশিন।

২০১৪ সালের ২৪ অক্টোবর থেকে হাসপাতালটির পরিচালকের দায়িত্ব পালন করা অধ্যাপক ড. মো. মোআররফ হোসেন গত ২৮ ডিসেম্বর থেকে অবসর প্রস্তুতিকালীন ছুটিতে গিয়েছেন। এক্স-রে মেশিনের বিষয়ে তিনি কিছুই জানেন না। “বিষয়টি আমার জানা নাই। সুতরাং, আমি কোনো মন্তব্য করতে চাই না”, ডেইলি স্টার প্রতিনিধির কাছে এমন মন্তব্য করেন তিনি।

ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের (টিআইবি) নির্বাহী পরিচালক ইফতেখারুজ্জামান বলেন, “জনসাধারণের অর্থায়নে পরিচালিত এই গুরুত্বপূর্ণ হাসপাতালে প্রাতিষ্ঠানিক দুর্নীতির প্রমাণ পাওয়া যাচ্ছে। এখানে স্পষ্টভাবে দায়িত্বজ্ঞান, অভ্যন্তরীণ নিয়ন্ত্রণ এবং জবাবদিহিতার অভাব রয়েছে।”

তিনি আরও বলেন, “অবাক করা বিষয় হচ্ছে মেশিন সরবরাহকারী এজেন্ট সরকারি ক্রয়ের প্রাথমিক শর্ত পূরণ করতে না পারলেও তাকে কোনোভাবে আটকানো যায়নি।”

“অবিলম্বে হাসপাতালের পরিচালনার পর্ষদে পরিবর্তন আনার” পরামর্শ দিয়ে ইফতেখারুজ্জামানের মন্তব্য, “হাসপাতালে কর্মরত এমন লোকজন ছিলো যারা অবৈধ সুবিধা নেওয়ার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট, যা অবশ্যই দুর্নীতি দমন কমিশনের তদন্তের আওতায় আনা উচিত।”

আরও পড়ুন:

ক্যান্সার হাসপাতাল পরিচালকের অবসরকালীন সুবিধা স্থগিতের নির্দেশ হাইকোর্টের

ক্যান্সার হাসপাতাল নিজেই ক্যান্সার আক্রান্ত

Comments

The Daily Star  | English
International Crimes Tribunal 2 formed

Govt issues gazette notification allowing ICT to try political parties

The new provisions, published in the Bangladesh Gazette, introduce key definitions and enforcement measures that could reshape judicial proceedings under the tribunals

5h ago