সোনালি যুগের জনপ্রিয় নাটক

বাংলাদেশের টিভি নাটকের রয়েছে সুন্দর সোনালি অতীত। কলকাতার আগে এদেশে টেলিভিশন নাটকের সম্প্রচার শুরু হয়। একটা সময় এদেশের টিভি নাটকের অন্যরকম চাহিদা ছিলো। বিনোদনের অন্যতম প্রধান মাধ্যম ছিলো টিভি নাটক।
Kothau keu nei
‘কোথাও কেউ নেই’ নাটকের একটি দৃশ্য। ছবি: সংগৃহীত

বাংলাদেশের টিভি নাটকের রয়েছে সুন্দর সোনালি অতীত। কলকাতার আগে এদেশে টেলিভিশন নাটকের সম্প্রচার শুরু হয়। একটা সময় এদেশের টিভি নাটকের অন্যরকম চাহিদা ছিলো। বিনোদনের অন্যতম প্রধান মাধ্যম ছিলো টিভি নাটক।

বিটিভির ডিআইটি ভবন থেকে এক সময় সরাসরি নাটক সম্প্রচার করা হতো। তখনকার নাটক মানেই তুমুল জনপ্রিয়তা। নাটকের জন্য রাজপথে মিছিল পর্যন্ত হয়েছিলো। সোনালি দিনের নাটক প্রচারের সময় রাস্তা ফাঁকা হয়ে যেতো। এতোটাই নাটকের দর্শক ছিলো এক সময়।

সেসব নাটকের কথা এখনো অনেকের কাছে শুনতে পাওয়া যায়।

সেসব নাটকের তালিকা করলে প্রথমেই চলে আসে- ‘সংশপ্তক’, ‘মাটির কোলে’, ‘জোনাকী জ্বলে’, ‘ভাঙনের শব্দ শুনি’, ‘অয়োময়’ ও ‘বহুব্রীহি’। আরও কতো নাটকের নামই তো রয়েছে। জানা যাক সেসব নাটকের উপাখ্যান।

তখনকার নাটকের সংলাপও মানুষের মুখে মুখে ফিরতো। ‘বহুব্রীহি’ নাটকের ‘তুই রাজাকার’ সংলাপটি এক সময়ে মানুষের মুখে মুখে ফিরতো। ‘তুই রাজাকার’ সংলাপটি টিয়ে পাখির মুখ দিয়ে বলানো হয়েছিলো টিভি নাটকে। ‘বহুব্রীহি’ নাটকটি প্রচার হওয়ার পর বলতে গেলে রাজাকারদের প্রতি নতুন করে প্রবল ঘৃণার জন্ম হয়। নাটকটিতে যারাই অভিনয় করেছিলেন, পেয়েছিলেন আকাশচুম্বী জনপ্রিয়তা।

‘বহুব্রীহি’ নাটকের নাট্যকার হিসেবে হুমায়ূন আহমেদ পেয়েছিলেন একইভাবে আকাশচুম্বী জনপ্রিয়তা। নাটকটি প্রযোজনা করেছিলেন নওয়াজীশ আলী খান।

সোনালি দিনের জনপ্রিয় নাটকের নামের তালিকার কথা উঠতেই প্রথমে জোরেসোরে উঠে আসে ‘সংশপ্তক’র নাম। বিটিভির ইতিহাসে এই নাটকটির জনপ্রিয়তা ছিলো শীর্ষে। এই নাটকে ফেরদৌসী মজুমদার ও হুমায়ুন ফরীদির অভিনয়ের কথা এখনো মনে রেখেছেন অনেকে। হুমায়ুন ফরীদি এই নাটকে ‘কানকাটা রমজান’ চরিত্রে এবং ফেরদৌসী মজুমদার ‘হুরমতি’ চরিত্রে অভিনয় করে আলোচনায় এসেছিলেন। এছাড়াও, খলিলউল্লাহ খলিল ‘মিয়ার বেটা’ চরিত্রে অভিনয় করে তুমুল জনপ্রিয়তা পেয়েছিলেন।

‘সংশপ্তক’ নাটকটি শহীদ শহীদুল্লাহ কায়সারের উপন্যাস থেকে নাট্যরূপ দিয়েছিলেন ইমদাদুল হক মিলন। প্রযোজনা করেছিলেন আবদুল্লাহ আল মামুন।

আরও একটি নাটকের নাম উঠে আসে বেশ ভালোভাবেই। সেটি হলো- ‘মাটির কালে’। নাটকটি প্রযোজনা করেছিলেন মুসা আহমেদ। মিষ্টি মেয়ে খ্যাত চলচ্চিত্র নায়িকা কবরী এই ধারাবাহিক নাটকের মধ্যে দিয়ে প্রথমবার কোনো দীর্ঘ ধারাবাহিকে অভিনয় করেছিলেন।

‘কোথাও কেউ নেই’ নাটকের কথা কি সেই সময়ের দর্শকরা ভুলতে পেরেছেন? মনে হয় ভুলতে পারেননি। ভুলে যাওয়াও সম্ভব না। নাটকটির নাট্যকার ছিলেন হুমায়ূন আহমেদ। এটি প্রযোজনা করেছিলেন বরকত উল্লাহ। একটি নাটকের চরিত্র দর্শকদের কাছে কতোটা আপন হতে পারে তা বুঝি ‘কোথাও কেউ নেই’ নাটকের বাকের ভাই চরিত্রটি দেখলেই টের পাওয়া যায়। বাকের ভাইয়ের যখন ফাঁসি হবে তখন এদেশের শত-শত মানুষ রাস্তায় নেমে এসেছিলেন মিছিল করার জন্য, যাতে বাকের ভাইয়ের ফাঁসি না দেওয়া হয়।

টেলিভিশন নাটকের ইতিহাসে ‘কোথাও কেউ নেই’ একটি মাইলফলক।

‘এই সব দিনরাত্রি’ ধারাবাহিকটির কথাই বা বাদ যায় কী করে? সৌভাগ্যবশত এই নাটকটির নাট্যকারও ছিলেন হুমায়ূন আহমেদ। বোধকরি বাংলাদেশের টিভি নাটকের ইতিহাসে নাট্যকার হিসেবেও সবচেয়ে জনপ্রিয়তা পেয়েছিলেন হুমায়ূন আহমেদ। ‘এইসব দিনরাত্রি’ নাটকের শিমু ভাবীর চরিত্রটি ওই সময়ে বহু মানুষের স্বপ্নের একটি চরিত্র ছিলো। শিমু ভাবীর চরিত্রে অভিনয় করেছিলেন ডলি জহুর। সেসময় ডলি জহুরকে অনেকেই শিমু ভাবী নামেই ডাকতেন।

‘জোনাকী জ্বলে’ ধারাবাহিকটিও ছিলো টেলিভিশন নাটকের ইতিহাসে অনেক আলোচিত। জিয়া আনসারী প্রযোজনা করেছিলেন নাটকটি।

ইমদাদুল হক মিলনের লেখা ‘রূপনগর’ টেলিভিশন নাটকের ইতিহাসে আরও একটি সফল, আলোচিত এবং জনপ্রিয় নাটক। নাটকটির “ছিঃ ছিঃ মাস্তানরা এতো খারাপ” সংলাপটি সেসময় ভীষণ জনপ্রিয়তা পেয়েছিলো। এখানে অভিনয় করে অনেক শিল্পীই তারকা বনে যান। খালেদ খান নতুনভাবে দর্শকদের সামনে আসেন ‘রূপনগর’ নাটকে অভিনয়ের মধ্য দিয়ে। তৌকীর আহমেদ তখন আকাশচুম্বী জনপ্রিয়তা পেয়েছিলেন।

ইমদাদুল হক মিলনের ‘বারো রকম মানুষ’ ধারাবাহিকটিও সে সময় দর্শকদের মনে দারুণভাবে দাগ কাটে। নাটকটিতে সুবর্ণা মুস্তাফা অভিনয় করেছিলেন একটি গুরুত্বপূর্ণ চরিত্রে।

‘ভাঙনের শব্দ শুনি’ও সেসময়ের নাটকগুলোর মধ্যে আলোচিত। এই নাটকে সেরাজ তালুকদারের চরিত্রে অভিনয় করে ব্যাপকভাবে জনপ্রিয়তা পেয়েছিলেন খলিল। নাটকটি প্রযোজনা করেছিলেন নাসিরউদ্দিন ইউসুফ।

‘সকাল সন্ধ্যা’ সেসময়ের আলোচিত ও উল্লেখযোগ্য নাটকের মধ্যে অন্যতম। নাটকটি প্রযোজনা করেছিলেন বরকতউল্লাহ। নাট্যকার ছিলেন মমতাজ বেগম। ‘সকাল সন্ধ্যা’য় অভিনয় করে তখন অনেকেই তারকা বনে গিয়েছিলেন। আজকের জনপ্রিয় অভিনেত্রী অপি করিম ‘সকাল সন্ধ্যা’ নাটকে অভিনয় করেছিলেন।

নাট্যজন মামুনুর রশীদের লেখা দুটি ধারাবাহিক নাটক সেসময় বেশ আলোচিত হয়। একটি নাটকের নাম ‘সময় অসময়’, আরেকটি নাম ‘স্বপ্নের শহর’। নাটক দুটি প্রযোজনা করেছিলেন মোস্তাফিজুর রহমান।

‘কোন কাননের ফুল’ নাটকটিও দর্শকদের মাঝে আলোড়ন তুলেছিলো। এটি প্রযোজনা করেছিলেন ফখরুল আবেদীন দুলাল।

‘দিনরাত্রির খেলা’, ‘বেলা অবেলা’ সেসময়ের জনপ্রিয় দুটি ধারাবাহিক নাটক।

প্যাকেজ নাটক প্রচার শুরু হওয়ার পর এবং বেসরকারি টিভি চ্যানেল আসার পরও কিছু কিছু ধারাবাহিক নাটক বেশ জনপ্রিয়তা পেয়েছে। তবে, সোনালি দিনের টিভি নাটকের কথা সবচেয়ে বেশি মনে রেখেছেন দর্শকরা।

Comments

The Daily Star  | English

Abu sayed’s death in police firing: Cops’ FIR runs counter to known facts

Video footage shows police shooting at Begum Rokeya University student Abu Sayed, who posed no physical threat to the law enforcers, during the quota reform protest near the campus on July 16. He died soon afterwards.

9h ago