নিয়ন্ত্রক সংস্থা, নিয়ন্ত্রণ কোথায়

সীমান্ত এলাকার এক কিলোমিটারের মধ্যে থাকা সব মোবাইল টাওয়ার বন্ধের নির্দেশনা দিয়ে গেলো সপ্তাহেই বড় এক চমকের জন্ম দিয়েছিলো বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশন বা বিটিআরসি। তার চেয়েও আরও বড় চমক নিয়ে তারা হাজির হলেন মাত্র দুদিনের মাথায়, আবার সেই সিদ্ধান্ত বদল করে।
btrc logo

সীমান্ত এলাকার এক কিলোমিটারের মধ্যে থাকা সব মোবাইল টাওয়ার বন্ধের নির্দেশনা দিয়ে গেলো সপ্তাহেই বড় এক চমকের জন্ম দিয়েছিলো বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশন বা বিটিআরসি। তার চেয়েও আরও বড় চমক নিয়ে তারা হাজির হলেন মাত্র দুদিনের মাথায়, আবার সেই সিদ্ধান্ত বদল করে।

কিন্তু, অবাক করা বিষয় হলো নিজেদের এই ১৮০ ডিগ্রি অবস্থানে ঘুরে যাওয়া নিয়ে তাদের মধ্যে অস্বস্তির লেশমাত্র নেই।

সীমান্তবর্তী টাওয়ারের সিগনাল বন্ধের সিদ্ধান্ত শুধু স্থানীয় গণমাধ্যম নয় বরং আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমের সংবাদ হয়েছে। জনপ্রিয় এবং গ্রহণযোগ্য তালিকায় হেন মিডিয়া নেই যেখানে এই খবর প্রকাশিত হয়নি। তাতে বাংলাদেশে সুনাম নষ্ট হয়েছে, বৈ বাড়তি কিছু অর্জন হয়নি।

সিদ্ধান্তটা যে ভালো হয়নি তাতে সন্দেহ নেই। আর সে কারণে শেষপর্যন্ত প্রধানমন্ত্রীর অফিস থেকে উদ্যোগ নিয়ে বিটিআরসিকে এই সিদ্ধান্ত বদলাতে বলা হয়েছে।

যারা এই সেক্টর নিয়ে কাজ করেন তাদের সবার জানা যে সব সেবা বন্ধের সিদ্ধান্তও বিটিআরসি থেকে হয় না। অনেক ক্ষেত্রেই অন্য কোথাও থেকে আসা ‘অনুরোধ’ তারা কেবল কার্যকর করেন। এটার ক্ষত্রেও তেমনটাই হয়েছে বলে জানা যায়।

অবাক করা বিষয় হলো- এতো বড় সিদ্ধান্ত অথচ সেখানে প্রধানমন্ত্রীর অফিসের কারো কাছে কোনো খরব নেই। বরং নির্দেশনাটি জারি করার পর সেটি জেনেছে প্রধানমন্ত্রীর অফিস। আর সে কারণে মাত্র দুদিনের মাথাতেই ঘুরে গেলো সিদ্ধান্তটি।

কিন্তু, প্রশ্ন হলো বিটিআরসির তো এই দক্ষতাও থাকা দরকার যে সরকারের একটি অংশের চাওয়াতেই এমন আত্মঘাতী একটি সিদ্ধান্ত তাদের হাত দিয়ে যাতে না চলে যায়। যারা এমন সিদ্ধান্ত চেয়েছিলেন বিটিআরসির তো তাদেরকে এটা বোঝাতে পারার কথা যে এমন সিদ্ধান্তের ফলে কী পরিস্থিতি হতে পারে। অন্তত বিটিআরসিরও কিছু তথ্যপূর্ণ যুক্তি থাকা উচিত যেটি দিয়ে তারা বোঝাবেন যে এর ফলে গ্রাহক পর্যায়ে বা রাষ্ট্রের অবস্থানেরই বা কী হতে পারে।

বরং যতো দূর জানা যায়, এবার প্রধানমন্ত্রীর অফিস থেকে বলে দেওয়া হয়েছে এমন সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগে এরপর থেকে তাদের সঙ্গে যেনো যোগাযোগ করা হয়।

এবার না হয় অন্যের ঘাড়ে দোষ চাপিয়ে পার পাওয়ার সুযোগ খোঁজা যাবে- কিন্তু, আত্মঘাতী সিদ্ধান্ত তো এই একটা নয়। গত জুলাইয়ে গ্রামীণফোন এবং রবির কাছে অডিটের দাবীকৃত টাকা আদায়ে তাদের ব্যবহৃত ব্যান্ডউইথ আংশিক বন্ধ করাটা ছিলো বিটিআরসির নিজেদের সিদ্ধান্ত। মাত্র কয়েক দিন টিকে ছিলো সেই সিদ্ধান্ত।

সেবারও সরকারের একেবারে উপরের দিককার নির্দেশনায় বিটিআরসিকে তাদের সিদ্ধান্ত তুলে নিতে হয়েছিলো। সেসময়ও গ্রাহক-স্বার্থের কথা চিন্তা না করে নেওয়া সিদ্ধান্তের কারণে তাদেরকে খানিকটা কড়া কথাও শুনতে হয়েছিলো।

এই দুটোই তো শুধু নয়, এখন এমন অনেক বিস্ময়-ভরা সিদ্ধান্তের জন্ম দিচ্ছে বিটিআরসি।

গ্রামীণফোন অনেক বড় হয়ে গেছে সুতরাং তাদের একচেটিয়াত্ব ঘোচাতে গ্রামীণফোনকে সিগনিফিকেন্ট মার্কেট পাওয়ার বা এসএমপি হিসেবে ঘোষণা করে কিছু বিধি-নিষেধ আরোপ করার জন্যে অন্তত সাত বছর ধরে কাজ করছে বিটিআরসি।

বিধিনিষেধ আরোপের আইনগত ক্ষমতা বিটিআরসি শুধু সংরক্ষণই করে না; এটি তাদের দায়িত্বের মধ্যেও পড়ে। কিন্তু, আমি যেটা বলতে চাইছি সেটা হলো কতোটা অদক্ষতার সঙ্গে বিটিআরসি কাজটি করলো যে সাত বছর ধরে তৈরি করা একটি বিধির শেষ পর্যন্ত তারা টেকাতে পারলেন না। দুবার তারা গ্রামীণফোনের ওপর বিধি-নিষেধ আরোপ করেও তা টেকাতে পারলেন না।

প্রতিবারই শর্তগুলো নিয়ে আদালতে হয় অসাড় ঘোষিত হয়েছে, নয় তো আদালত শর্ততে সংশোধনী আনতে বলেছে। যে আইনজীবী বিটিআরসির পক্ষে এই বিষয়ে আদালতে দাঁড়িয়েছেন তিনিও একটা পর্যায়ে গিয়ে বলতে বাধ্য হয়েছেন, এমন কিছু ইস্যু করতে গেলে পারলে যেনো তাদেরকে দেখিয়ে নেওয়া হয়। তাহলে অন্তত বিব্রতকর অবস্থা এড়ানো যায়।

মোবাইল সিমের বায়োমেট্রিক নিবন্ধন খুবই ভালো একটি উদ্যোগ। কিন্তু, সেখানেও বারবার সিদ্ধান্ত বদলাতে হয়েছে বিটিআরসিকে। একটা জাতীয় পরিচয়পত্রের বিপরীতে কয়টা সিম নিবন্ধিত হবে সেই সিদ্ধান্ত এতোবার বদল হয়েছে যে বিটিআরসির চেয়ারম্যান-কমিশনাররা কেউও আর এখন সঠিক সংখ্যাটা বলতে পারবেন না।

সিদ্ধান্ত অদল-বদলের এই খেলায় পড়ে এখন চাইলেই বাজারে যতো ইচ্ছা নিবন্ধিত সিম পাওয়া যায়। রোহিঙ্গারাও পেয়ে যান লাখ লাখ নিবন্ধিত সিম।

প্রায় প্রতিবারই দেখা যাচ্ছে সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগে পর্যাপ্ত পর্যালোচনা করা হয় না। কোনো রকম কোনো ইমপ্যাক্ট অ্যানালাইসিসের বালাই নেই এখানে। আর সে কারণেই প্রতি বছর শত-শত লাইসেন্স দিয়ে নিজেদের জন্যেই গলার কাঁটা তৈরি করছে বিটিআরসি।

বিটিআরসির এখন লাইসেন্স সংখ্যা সাড়ে তিন হাজার। ২০১৯ সালেও সাড়ে ছয়শ লাইসেন্স দেওয়া হয়েছে। খুব তাড়াতাড়িই হয়তো বিটিআরসি লাইসেন্স দেওয়ার ক্ষেত্রে বহু রেকর্ড নিজেদের অধিকারে পেয়ে যাবে।

বছর-বছর আমরা দেখি বিটিআরসির সাফল্যের যে তালিকা করা হয় সেখানে লাইসেন্স প্রদানের সংখ্যা উজ্জ্বল অবস্থানে থাকে। তাহলে কি কোনো রকম বাছা-বিচার ছাড়া যথেচ্ছার লাইসেন্স দিয়ে বাজার নষ্ট করাও সাফল্যের অংশ?- প্রশ্নটা এখন অনেকেই করছেন।

সব চেয়ে বড় কথা টেলিকম সেবার ক্ষেত্রে বিটিআরসিরই গ্রাহক স্বার্থ সবার আগে বিবেচনা করার কথা। কিন্তু, তাদের অধিকাংশ সিদ্ধান্তের ক্ষেত্রেই দেখা যাচ্ছে গ্রাহকরাই সবচেয়ে বেশি উপেক্ষিত হয়ে থাকছেন। ফলে নিয়ন্ত্রক সংস্থার নিয়ন্ত্রণ নিয়েও আজকাল দেদার কথা হচ্ছে।

Comments

The Daily Star  | English

After OCs, EC orders to transfer UNOs

In the first phase, it asked to transfer all UNOs who have been working in their respective upazilas for more than a year

23m ago