টয়োটার ‘স্মার্ট শহর’
একটি শহরের কথা ভাবুনতো, যেখানে আপনাকে কিছুই করতে হচ্ছে না! কিন্তু, প্রতিদিনকার জীবনের সবই হয়ে যাচ্ছে স্বাভাবিক গতিতে। আপনার খাওয়া, চলাফেরা সবই হবে আপনার পরিশ্রম ছাড়াই!
বৈজ্ঞানিক কল্পকাহিনিভিত্তিক সিনেমার গল্প মনে হলেও এমনই একটি ‘স্মার্ট শহর’ বানানোর পরিকল্পনা করেছে জাপানি গাড়ি নির্মাতা প্রতিষ্ঠান টয়োটা। তারা এর নাম দিয়েছে ‘ওভেন সিটি’।
টয়োটার বানানো স্বচালিত গাড়ি, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা এবং রোবটের পরীক্ষা চালাতেই এমন শহর তৈরির পরিকল্পনা তাদের।
টোকিও থেকে ৬০ মাইল দূরে মাউন্ট ফুজির পাদদেশে দুই হাজার মানুষের বসবাসযোগ্য ‘ভবিষ্যতের শহর’ বানানোর এই পরিকল্পনা করেছে তারা। প্রায় ১৭৫ একর জায়গার ওপর শহরটি তৈরি করা হবে। আগে এখানে টয়োটার কারখানা ছিলো।
লাস ভেগাসের কনজ্যুমার ইলেকট্রনিক্স শোতে (সিইএস) শহরটি সম্পর্কে বলতে গিয়ে টয়োটার প্রধান নির্বাহী আকিও টয়োডা একে একটি জীবন্ত পরীক্ষাগার হিসেবে আখ্যায়িত করেছেন। যেখানে গবেষক, বিজ্ঞানী এবং প্রযুক্তিবিদরা বাস্তব জীবনে তাদের পরীক্ষা চালাতে পারবেন।
গত ৭ জানুয়ারি সিইএসে তিনি বলেন, “এই শহরে মানুষজন সেন্সর এবং তথ্যের মাধ্যমে সংযুক্ত থাকবে। এখানে আমরা বাস্তব এবং ভার্চুয়াল জীবনে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার সম্ভাব্যতা যাচাই করতে পারবো।”
কার্বন নিঃসরণ কমানোর জন্য এই শহরটি শক্তি নেবে হাইড্রোজেন ফুয়েল সেল এবং ভবনগুলোর ছাদে বসানো সোলার প্যানেল থেকে। এমনটিই জানানো হয়েছে প্রতিষ্ঠানটির পক্ষ থেকে।
চলাচলের জন্য শুধুমাত্র সম্পূর্ণ স্বয়ংক্রিয় গাড়ি দেখা যাবে শহরটির রাস্তায়।
জাপানের এই স্মার্ট শহরের ডিজাইন করছে ড্যানিশ প্রতিষ্ঠান বাজার্ক ইনজেলস গ্রুপ (বিআইজি)।
বিআইজি নিউইয়র্কের ওয়ার্ল্ড ট্রেড সেন্টার এবং লন্ডন ও সিলিকন ভ্যালিতে অবস্থিত গুগলের অফিসেরও ডিজাইন করেছে।
সিইএসে টয়োটার প্রধান নির্বাহীর সঙ্গে যোগ দিয়ে এই প্রকল্পের স্থপতি বলেন, “এই শহরে আমাদের দৈনন্দিন জীবনে নতুন প্রযুক্তির ব্যবহারের পরীক্ষা করা হবে। স্বয়ংক্রিয়ভাবে সব কাজ করার সুবিধা থাকবে এই শহরে। আপনার ফ্রিজের জিনিসপত্র ঠিকভাবে রাখা থেকে শুরু করে ঘরের ময়লা ফেলা, এমনকী আপনার স্বাস্থ্য ঠিক আছে কী না তাও লক্ষ্য রাখবে প্রযুক্তি।”
সিএনএনের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, এই শহরের নিচে প্লাজা এবং পার্ক তৈরির পরিকল্পনা রয়েছে।
বিআইজি জানিয়েছে তারা পরিকল্পনাটির প্রথম ধাপের কাজ শুরু করবে ২০২১ সালে। তবে কবে নাগাদ পুরো শহর তৈরি হতে পারে সে সম্পর্কে কোনও ধারণা দেওয়া হয়নি।
এমন একটি শহরে থাকার ইচ্ছা জাগছে না কী মনে? জাগলেও আপাতত তা মনেই রাখুন। কারণ, প্রাথমিকভাবে এখানে বসবাসের জন্য অনুমতি পাবে প্রতিষ্ঠানটির কর্মকর্তা-কর্মচারী এবং তাদের পরিবার। সেই সঙ্গে প্রতিষ্ঠানের অবসরপ্রাপ্ত ব্যক্তি, গবেষক এবং প্রকল্পের অন্যান্য অংশীদাররাও এখানে বসবাস করতে পারবেন।
Comments