অবৈধ বালু বাণিজ্য: হুমকিতে মেঘনার ৩ সেতু

আশুগঞ্জে মেঘনা নদীতে রাষ্ট্রপতি জিল্লুর রহমান রেলওয়ে সেতু, শহীদ হাবিলদার আবদুল হালিম রেলওয়ে সেতু এবং সৈয়দ নজরুল ইসলাম সড়ক সেতুর পাশে নৌযান থেকে বালু নামানোর জন্য অবৈধভাবে ঘাট বানানো হয়েছে। ছবি: মাসুক হৃদয়

ব্রাক্ষ্মণবাড়িয়ায় স্থানীয় প্রভাবশালীরা মেঘনা নদীর পাড়ে অবৈধভাবে কমপক্ষে ১০টি ঘাট বানিয়েছে যার ফলে হুমকির মুখে পড়েছে মেঘনার দুটি রেলসেতু এবং একটি সড়ক সেতু।

এসব ঘাট বানানো হয়েছে নৌযান থেকে বালু নামানোর জন্য। ঘাট থেকে পরে পাইপলাইনের মাধ্যমে বালু চলে যায় বিভিন্ন জায়গায়।

এই ঘাটগুলো থেকে বালু পরিবহন করতে স্থানীয় কিছু সিন্ডিকেট বাঁধ ও রাস্তা কেটে বসিয়েছে পাইপলাইন।

এসব কর্মকাণ্ডে রাষ্ট্রপতি জিল্লুর রহমান রেলওয়ে সেতু, শহীদ হাবিলদার আবদুল হালিম রেলওয়ে সেতু এবং সৈয়দ নজরুল ইসলাম সড়ক সেতু হুমকির মুখে পড়েছে।

স্থানীয়দের অভিযোগ, সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ ‘মাসোয়ারা’ নিয়ে এ বিষয়ে কোনো ব্যবস্থা নিচ্ছে না।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক আশুগঞ্জ বন্দরের একজন কর্মকর্তা বলেন, “ক্ষমতাসীন দলের কয়েকজন নেতা সেতুর পিলারের পাশে বাঁশ দিয়ে সাতটি ঘাট বানিয়েছে। অবৈধ এই ঘাটগুলোতে বজরা এবং ট্রলার লোড-আনলোড করতে প্রতিদিন অনেক টাকা লেনদেন হয়।”

তিনি আরও বলেন, “উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান ও আশুগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম আহ্বায়ক হানিফ মুন্সী নদী রক্ষা বাঁধের জমি দখল করে চারটি ঘাট পরিচালনা করছেন। তিনটি ব্রিজের পিলারের পাশে বালুবাহী ট্রলার নোঙর ও চলাচল করায় যেকোনো মুহূর্তে বড় দুর্ঘটনা ঘটতে পারে।”

গত ৪ ও ৫ জানুয়ারি সরেজমিন পরিদর্শন করে ঘাট হিসাবে ব্যবহারের জন্য তিনটি ব্রিজের কাছে সাতটি বাঁশের কাঠামো দেখা গেছে। এছাড়াও, সেখান থেকে বিভিন্নস্থানে বালু সরবরাহের জন্য নদী সুরক্ষা বাঁধ এবং রাস্তা কেটে লোহার পাইপ বসানো হয়েছে।

এর থেকে একটু দূরে আরও তিনটি ঘাট বানানো হয়েছে।

আলমনগর গ্রামের বাসিন্দা নুর আলী জানান, স্টেশন রোড ও বাজার রোডসহ উপজেলার তিন কিলোমিটার এলাকাজুড়ে বালু বহনের জন্য পাইপলাইনগুলো বসানো হয়েছে।

উপজেলা নির্বাহী অফিসারের (ইউএনও) কার্যালয়ের সামনের রাস্তাও কেটে পাইপলাইন বসানো হয়েছে।

যোগাযোগ করা হলে হানিফ মুন্সী দাবি করেন, তিনি কোনো অবৈধ ঘাট বা অবৈধ বালু ব্যবসার সঙ্গে জড়িত নন। তার কিছু আত্মীয় এই ব্যবসা করেন।

উপজেলা চেয়ারম্যান হিসেবে এ ব্যাপারে কী ব্যবস্থা নিয়েছেন?- জানতে চাইলে তিনি বলেন, “এটা প্রশাসনের দায়িত্ব।”

আশুগঞ্জ ফেরিঘাট পরিবহন ঠিকাদার সমিতির সভাপতি ইব্রাহিম মোল্লা জানান, বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌ পরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআইডব্লিউটিএ) নদী পর্যবেক্ষণের দায়িত্বে থাকলেও স্থানীয় বিআইডব্লিউটিএ অফিস থেকে মাত্র ৫০ মিটার দূরে এসব অবৈধ ঘাট নিয়ে তারা কিছুই বলছেন না।

সমিতির সাধারণ সম্পাদক রুমেল মুন্সী বলেন, উপজেলা প্রশাসন এবং বিআইডব্লিউটিএ খুব ভালো করেই জানে অবৈধ দখলদার কারা।

বিআইডব্লিউটিএ’র সহকারী পরিচালক মো. আসাদুজ্জামান কারো কাছে থেকে ‘মাসোয়ারা’ নেওয়ার অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, “অবৈধ ঘাট যারা বানিয়েছেন তাদের কিছু নাম আমরা সংগ্রহ করেছি এবং আশুগঞ্জ থানায় এ বিষয়ে একটি সাধারণ ডায়েরি করা হয়েছে। দোষীদের বিরুদ্ধে খুব দ্রুতই মামলা করা হবে।”

যোগাযোগ করা হলে আশুগঞ্জের ইউএনও নাজিমুল হায়দার বলেন, “আমি বিষয়টি সম্পর্কে অবগত নই। যদি কোনো অবৈধ দখলদার থাকে তাহলে আমি তদন্ত করে ব্যবস্থা নেব।”

Comments

The Daily Star  | English

What are we building after dismantling the AL regime?

Democracy does not seem to be our focus today. Because if it were, then shouldn’t we have been talking about elections more?

11h ago