হাত বাঁশ রশির ট্রাফিক নিয়ন্ত্রণ, ১২৭ কোটি টাকার সিগন্যাল বাতি

কাকরাইল মোড়ের প্রতিটি ট্রাফিক সিগন্যাল বাতি ১৬০ সেকেন্ড পরপর সবুজ হয়ে ওঠে। পায়ে হেঁটে বা যানবাহনে চড়ে যদি আপনি এই সংকেত মানতে যান, তাহলে সমস্যায় পড়ার সম্ভাবনাই বেশি।
traffic-1.jpg
রাজধানীর কাকরাইল মোড়ে ট্রাফিক সিগনাল বাতিতে লাল সংকেত থাকা সত্ত্বেও পুলিশের হাতের ইশারায় যানবাহন চলাচল করতে দেখা যাচ্ছে। ছবি: রাশেদ সুমন/স্টার

কাকরাইল মোড়ের প্রতিটি ট্রাফিক সিগন্যাল বাতি ১৬০ সেকেন্ড পরপর সবুজ হয়ে ওঠে। পায়ে হেঁটে বা যানবাহনে চড়ে যদি আপনি এই সংকেত মানতে যান, তাহলে সমস্যায় পড়ার সম্ভাবনাই বেশি।

বিশ্বব্যাংক থেকে ঋণ নিয়ে কেনা ট্রাফিক সিগন্যাল বাতিগুলো কেবল রাস্তায় সাজিয়ে রাখা ছাড়া আর কোনো কাজে আসছে না। কারণ, চলাচলের জন্য যানবাহন নিয়ন্ত্রণ করা হয় ট্রাফিক পুলিশের হাতের ইশারায়।

কয়েক বছর পর দেশে ফিরে সম্প্রতি এক সন্ধ্যায় হেয়ার রোডের চৌরাস্তায় মনোয়ার হোসেন ট্রাফিক বাতি নিয়ে বিড়ম্বনায় পরেন। সিগন্যাল বাতি সবুজ থাকায় তিনি তার গাড়ি চালাতেই থাকেন।

হঠাৎ ট্রাফিক পুলিশ থামার ইঙ্গিত দেন। তিনি যতোটা সম্ভব দ্রুত গাড়ির ব্রেক চাপেন এবং অল্পের জন্য একটি বাসের সঙ্গে ধাক্কা খাওয়া থেকে বেঁচে যান।

মনোয়ার দ্য ডেইলি স্টারকে বলেছিলেন, “আমি গাড়ি থামাতে না পারলে ভয়ানক কিছু ঘটতো। ব্যয়বহুল ট্রাফিক লাইটগুলো যদি মেনে চলাই না হয়, তাহলে তা লাগিয়ে লাভ কী?”

বিশ্বব্যাংকের অর্থায়নে ২০০২ থেকে ২০০৫ সালের মধ্যে ১৩ কোটি ৬০ লাখ টাকা ব্যয় করে ঢাকা নগর পরিবহন প্রকল্পের আওতায় ৬৮টি ট্রাফিক সিগন্যাল বাতি বসানো হয়। প্রথম বাতি বসানো হয় গুলশান-১ ও ২ নম্বর চৌরাস্তায়। ২০০৬ সালে বিশ্বব্যাংক এক প্রতিবেদনে উল্লেখ করে যে, রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে সেগুলো নষ্ট হয়ে গেছে।

‘ক্লিন এয়ার অ্যান্ড সাসটেইনেবল এনভায়রনমেন্ট’ প্রকল্পের আওতায় ২০১০ থেকে ২০১৮ সাল পর্যন্ত বিশ্বব্যাংকের অর্থায়নের ১১২ কোটি টাকা ব্যয় করে ১০০ ট্রাফিক সিগন্যাল লাইট এবং চৌরাস্তায় কিছু অবকাঠামো নির্মাণ ও মেরামত করা হয়েছে। সিটি করপোরেশন ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের কাছে বাতিগুলো হস্তান্তর করেছে। কিন্তু, পরবর্তী রক্ষণাবেক্ষণের ক্ষমতা পুলিশের হাতে নেই বলে জানা গেছে।

গুলশান-২ এ যানবাহনের চলাচল নিয়ন্ত্রণ করতে একজন ট্রাফিক পুলিশকে বেশ বেগ পেতে দেখা যায়। বিজয় সরণী, রাজারবাগ ও গুলশান-১ এর মোড়ে ট্রাফিক নিয়ন্ত্রণ করতে রশি ব্যবহার করতে দেখা যায় প্রায়শই। কোথাও কোথাও বাঁশ বেঁধে গাড়ি নিয়ন্ত্রণ করতে দেখা যায়।

এরইমধ্যে, ঢাকা পরিবহন সমন্বয় কর্তৃপক্ষ গুলিস্তান, পল্টন, গুলশান-১ এবং মহাখালীতে ইনটেলিজেন্ট ট্রাফিক সিস্টেম স্থাপনের জন্য জাপান আন্তর্জাতিক সহযোগিতা সংস্থা (জাইকা) থেকে আরও ১৫ কোটি ৬০ লাখ টাকা ঋণ নিয়েছে। এই পদ্ধতিতে বাতিগুলো খুব অল্প সময়ের মধ্যে কাজ করা শুরু করবে।

বুয়েটের পরিবহন বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক শামসুল হক বলেছেন, “আমাদের এই ট্রাফিক বাতিগুলো দেখাশোনা করার জন্য জনবল দরকার। একের পর এক প্রকল্প চালু হলে তা কেবল প্রকল্পে জড়িতদেরই উপকৃত করবে।”

কাকরাইলে কেনো স্বয়ংক্রিয় সিগন্যাল ব্যবস্থা অনুসরণ করা হচ্ছে না?  ট্রাফিক পরিদর্শক তরিকুল আলম বলেন, “নাইটিংগেল মোড় এবং কাকরাইল মোড়ের দূরত্ব প্রায় ১০০ মিটার। আমরা যদি প্রতিটি রাস্তার মতোই এই জায়গাতেও গাড়ি চলার জন্য একই পরিমাণ সময় দেই, তাহলে অনেক দীর্ঘ জ্যাম লেগে যাবে।”

যোগাযোগ করা হলে ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের প্রধান নগর পরিকল্পনাবিদ সিরাজুল ইসলাম বলেন, “ডিএমপি রক্ষণাবেক্ষণ না করায় বেশিরভাগ ট্রাফিক বাতি নষ্ট হয়ে গিয়েছিলো।”

অতিরিক্ত ডিএমপি কমিশনার (ট্রাফিক) মফিজ উদ্দিন আহমেদ বলেন, “পুলিশ ট্রাফিক সিগন্যাল বাতিগুলো রক্ষণাবেক্ষণে পৃথক বিভাগ গঠনের জন্য কাজ করছে।”

তিনি বলেন, “এমন একটি ব্যবস্থা থাকা উচিত যাতে চৌরাস্তাগুলোতে আলাদাভাবে স্বয়ংক্রিয় সংকেত অনুযায়ী ট্রাফিক নিয়ন্ত্রণ করা যায়।”

Comments

The Daily Star  | English

DMCH doctors threaten strike after assault on colleague

A doctor at Dhaka Medical College Hospital (DMCH) was allegedly assaulted yesterday after the death of a private university student there, with some of his peers accusing the physicians of neglecting their duty in his treatment

5h ago