প্রথম থেকে যেটা বলেছি, সেটাই হয়েছে: নাজমুল
পাকিস্তান ক্রিকেট বোর্ডের (পিসিবি) প্রবল দাবি সত্ত্বেও ঝুঁকি নিয়ে তাদের দেশে গিয়ে খেলবে কি-না তা নিয়ে অনিশ্চয়তায় ছিল বাংলাদেশ। কেবল টি-টোয়েন্টি সিরিজ খেলে পরিস্থিতি যাচাই করতে চেয়েছিল বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড (বিসিবি)। কিন্তু দুবাইতে আইসিসি চেয়ারম্যানের উপস্থিতিতে পিসিবি সভাপতির সঙ্গে বৈঠকে পাকিস্তানের সব চাওয়া মেনে নিয়েছে বাংলাদেশ। চূড়ান্ত হয়েছে তিন দফায় বাংলাদেশ ক্রিকেট দলের পাকিস্তান সফর। এমনকি সফরে যোগ হয়েছে বাড়তি একটি ওয়ানডেও। তারপরও নিজেদের অবস্থান বদল বা ক্রিকেটীয় কূটনীতিতে কোনো ঘাটতি দেখছেন না বোর্ড প্রধান নাজমুল হাসান পাপন।
আগের দিন সফর চূড়ান্ত করে বুধবার (১৫ জানুয়ারি) দুবাই থেকে দেশে ফিরেছেন বিসিবি প্রধান। বিমানবন্দরে বাংলাদেশের ক্রিকেটের সর্বোচ্চ কর্তা জানিয়েছেন, সরকারের নির্দেশনা মেনেই এই সফর চূড়ান্ত করেছেন তারা, ‘সরকার থেকে যে বিষয়টা বলা আছে, আমরা যেরকম আগে থেকে বলেছি, ওই রকমই হয়েছে। তাদের নির্দেশনায় লেখা আছে যে প্রথমে টি-টোয়েন্টি খেলে আসবে। তারপর অবস্থা বিবেচনা করে পরবর্তী সময়ে গিয়ে টেস্টগুলো খেলে আসবে। আমরা এখনও সেই ধারাতেই আছি।’
বোর্ড প্রধান বলছেন আগে টি-টোয়েন্টি খেলে পরিস্থিতি বিবেচনা করে বাকিটা। কিন্তু আগের দিন তিনি টি-টোয়েন্টি, টেস্ট ও ওয়ানডে- সব কিছুরই সূচি চূড়ান্ত করে এসেছেন। এক্ষেত্রে পরিস্থিতি বিবেচনা করে আর অন্য কিছু করার সুযোগ সামান্য।
গেল রবিবার বোর্ড সভার পর এই সফর নিয়েই অনিশ্চয়তার কথা জানিয়েছিলেন বিসিবি প্রধান। মধ্যপ্রাচ্যে চলমান রাজনৈতিক সংকটের কারণে এই মুহূর্তে পাকিস্তানে লম্বা সফর করতে সরকারের সায় না থাকার কথাও বলেছিলেন তিনি।
বাংলাদেশ দল টানা অবস্থান না করলেও পাকিস্তানে তিন মাসে সফর করবে তিনবার। আইসিসির ভবিষ্যৎ সূচির (এফটিপি) বাইরে খেলবে বাড়তি একটি ওয়ানডেও। যেখানে এফটিপির ম্যাচগুলো খেলা আসা নিয়েই ঝুঁকির কথা আলোচনায় ছিল, সেখানে বাড়তি ওয়ানডের কারণ না-কি টেস্টের প্রস্তুতি, ‘পাকিস্তানে গিয়ে পাকিস্তানের সঙ্গে খেলার আগে একটা প্রস্তুতি ম্যাচ দরকার। আমাদের কাছে মনে হয়েছে, টি-টোয়েন্টির চেয়ে ওয়ানডে হলে হয়তো অনুশীলনটা ভালো হবে।’
২০০৯ সালে শ্রীলঙ্কা দলের উপর হামলার পর আন্তর্জাতিক ক্রিকেট বন্ধ হয়ে যায় পাকিস্তানে। এরপর অন্য সব দেশের সঙ্গে সংযুক্ত আরব আমিরাতে নিরপেক্ষ ভেন্যুতে খেললেও বাংলাদেশের বেলায় পাকিস্তান দেখিয়ে আসছে ভিন্ন মনোভাব। ২০১২ সালে বিসিবি পাকিস্তানে যেতে চাইলেও আদালতের বাধায় আটকে যায় সফর। পাকিস্তান সেই সিরিজও নিরপেক্ষ ভেন্যুতে আয়োজন করেনি।
বাংলাদেশের সঙ্গে নিরপেক্ষ ভেন্যুতে খেলতে রাজী না হওয়া পাকিস্তানের কাছে পুরো সিরিজ খেলতে যাওয়ার সম্মতি দিয়ে এলেও এতে নিজেদের কূটনৈতিক কোনো ঘাটতি চোখে পড়ছে না বোর্ড প্রধানের, ‘ক্রিকেট কূটনীতিতে হার! এটা কেন বলা হচ্ছে! কোনো কারণই আমি খুঁজে পাচ্ছি না। আমি জানি না। আমার কাছে অদ্ভুত লেগেছে। আমরা প্রথম থেকে যেটা বলেছি, সেটাই হয়েছে। আমার কাছে তেমনই মনে হচ্ছে।’
দুবাইয়ে আইসিসি চেয়ারম্যান শশাঙ্ক মনোহর ও পিসিবি সভাপতি এহসান মানির সঙ্গে বিসিবি সভাপতির সভায় চূড়ান্ত হয় সূচি। চলতি মাসে ২৪, ২৫ ও ২৭ তারিখে লাহোরে তিনটি টি-টোয়েন্টি ম্যাচ খেলবে বাংলাদেশ দল। দেশে ফিরে কয়েক দিন পরে আবার পাকিস্তানে গিয়ে রাওয়ালপিন্ডিতে ৭ ফেব্রুয়ারি থেকে প্রথম টেস্ট খেলবে বাংলাদেশ।
তৃতীয় দফায় এপ্রিল মাসে আবার পাকিস্তান যাবে বাংলাদেশ জাতীয় ক্রিকেট দল। ৩ এপ্রিল করাচিতে একমাত্র ওয়ানডে খেলার পর সেখানেই ৫ এপ্রিল থেকে হবে দুদলের দ্বিতীয় টেস্ট।
নিরাপত্তা ঝুঁকিতে পাকিস্তান সফরে যেতে এর মধ্যেই অপারগতা জানিয়েছেন দলের অন্যতম সেরা ব্যাটসম্যান মুশফিকুর রহিম। প্রধান কোচ রাসেল ডমিঙ্গো সফরে যাওয়ার বিষয়ে ইতিবাচক হলেও বোর্ড প্রধান জানিয়েছেন, বেশ কয়েকজন কোচিং স্টাফের পাকিস্তানে যেতে আপত্তি আছে।
Comments