মাত্র ৬ হাজার টাকার জন্যে বাবার সহায়তায় মেয়ে বছর ধরে ধর্ষণের শিকার

Child rape logo
স্টার অনলাইন গ্রাফিক্স

মাত্র ছয় হাজার টাকা ঋণ পরিশোধে ব্যর্থ হয়ে নিজের শিশু কন্যাকে ধর্ষণ করতে ঋণদাতাকে সহায়তা করেছে বাবা। এমন ঘটনা ঘটেছে রাজধানীর কামরাঙ্গীরচর এলাকায়। গত এক বছরে শিশুটিকে কয়েকবার ধর্ষণ করেছে ওই ঋণদাতা।

গত ১৪ জানুয়ারি রাতে ধর্ষণের শিকার ওই শিশুর বাবাকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।

স্থানীয়দের অভিযোগ, ধর্ষণের আগে শিশুটিকে ঘুম ও গর্ভনিরোধক ওষুধ খেতে বাধ্য করতো তার বাবা।

অভিযুক্ত ধর্ষক, অর্থাৎ ওই শিশুর বাবার ঋণদাতা আবুল হোসেন (৩৫) স্থানীয় একটি পোল্ট্রি দোকানের মালিক। বর্তমানে তিনি পলাতক রয়েছেন। তাকে খোঁজা হচ্ছে বলে জানিয়েছে পুলিশ।

স্থানীয়রা জানিয়েছেন, গত ১৩ জানুয়ারি রাতে ওই শিশুর এক প্রতিবেশী দেখে, কোনো এক বিষয়ে সে তার বাবাকে দোষারোপ করছে।

যার পরিপ্রেক্ষিতে ওই প্রতিবেশী শিশুর কাছে জানতে চান, সে ঠিক আছে কী না। সেসময় শিশুটি তার কাছে থাকা ঘুম ও গর্ভনিরোধক ওষুধগুলো প্রতিবেশী নারীকে দেখায়।

ওষুধগুলো দেখিয়ে ওই কিশোরী জানায়, সেগুলো তার বাবা তাকে দিয়েছে। কারণ রাত ৩টার দিকে তার বাবার নিয়োগকর্তা তার সঙ্গে সময় কাটাতে আসবে।

এরপর ওই প্রতিবেশী নারী আশপাশের আরও লোকজনকে ডেকে আনেন। সেসময় ওই শিশু জানিয়েছে, তার বাবা প্রায়ই তাকে এ ধরনের ওষুধ দেয় এবং ওই নিয়োগকর্তার সঙ্গে রাত কাটাতে বাধ্য করে।

পরে স্থানীয়রা ওই শিশুর বক্তব্যের ভিডিও ধারণ করে পুলিশকে অবহিত করেন।

শিশুটির বরাত দিয়ে স্থানীয় একজন দ্য ডেইলি স্টারকে বলেছেন, ওই শিশুর বাবাই তাকে এ ধরনের কাজ করতে বাধ্য করতো। এছাড়াও, ওই ধর্ষককেও বিভিন্নভাবে সহায়তা করতো। শিশুটিকে কড়া ঘুমের ওষুধ খাওয়ানো হতো, যাতে সে চিৎকার করতে না পারে।

পুলিশ জানিয়েছে, ওই শিশু, তার বাবা ও ভাইয়ের সঙ্গে কামরাঙ্গীরচরে একটি ছোট টিনের ঘরে ভাড়া থাকে।

গত ১৪ জানুয়ারি সকালে কামরাঙ্গীরচর থানার উপ-পরিদর্শকের (এসআই) নেতৃত্বে ঘটনাস্থলে যায় পুলিশের একটি দল। তবে ধর্ষণ ঘটনাটিকে ‘গুজব’ আখ্যা দিয়ে পুলিশ প্রথমে এটি চাপা দেওয়ার চেষ্টা করে বলে স্থানীয়রা অভিযোগ করেছেন।

স্থানীয় এক নারী বলেছেন, “আমরা পুলিশকে বলেছি, আমরা ওই শিশুর বক্তব্য ভিডিও করেছি। আমরা পুলিশের কথার তীব্র প্রতিবাদ করি।”

এরপর ওই এসআই ঘটনাস্থল থেকে চলে এলে সেদিন রাতে পুলিশের আরেকটি দল এসে ওই শিশুর বাবাকে আটক করে।

জানতে চাইলে কামরঙ্গীরচর থানার পরিদর্শক মোস্তফা আনোয়ার ঘটনাটি ধামাচাপা দেওয়ার অভিযোগটি অস্বীকার করেছেন।

স্থানীয়রা জানিয়েছেন, প্রায়ই ওই শিশু তাকে বিয়ে দেওয়া ব্যাপারে তাদের অনুরোধ করতো। কারণ, তার বাবা না কী তাকে কখনো বিয়ে দেবে না বলেছে।

অভিযুক্ত ধর্ষক আবুল ও শিশুটির বাবার বিরুদ্ধে কামরাঙ্গীরচর থানায় একটি মামলা দায়ের করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) শেখ মোহাম্মদ মোর্শেদ আলী।

তিনি বলেছেন, প্রায় এক বছর আগে আবুলের কাছ থেকে ছয় হাজার টাকা ধার নিয়েছিলেন ওই শিশুর বাবা। কিন্তু, সেই টাকা পরিশোধে ব্যর্থ হন তিনি। পরে আবুল তাকে বলেছিলো, তার মেয়ের সঙ্গে শারীরিক সম্পর্ক করতে দিলে তাকে সেই টাকা ফেরত দিতে হবে না।

“এরপর ওই শিশুর বাবা আবুলকে এ কাজে সহায়তা করে,” যোগ করেন পুলিশের সেই কর্মকর্তা।

ওই শিশুর মা একজন প্রবাসী শ্রমিক। আর ভাই দিনমজুর।

শেখ মোহাম্মদ মোর্শেদ আলী আরও জানিয়েছেন, আবুল মাঝে-মধ্যে এসে ওই শিশুকে ধর্ষণ করতো। বিষয়টি স্থানীয়রা জানতে পেরে ‘৯৯৯’ নম্বরে ফোন দিলে পুলিশ এসে শিশুটিকে উদ্ধার করে এবং কয়েক ঘণ্টা পরেই তার বাবাকে আটক করে।

ওই শিশু বর্তমানে ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালের ওয়ান স্টপ ক্রাইসিস সেন্টারে (ওসিসি) চিকিৎসাধীন।

প্রাথমিক পরীক্ষার পর ধর্ষণের আলামতও মিলেছে বলে জানিয়েছেন ওসিসি’র কো-অর্ডিনেটর বিলকিস বেগম।

Comments

The Daily Star  | English

Govt calls for patience as it discusses AL ban with parties

Taken the initiative to introduce necessary amendments to the ICT Act, says govt

1h ago