মুশফিকের প্রথম শিরোপা, নাকি রাসেলে বাজিমাত রাজশাহীর?
পর্দা সরিয়ে ট্রফি হাতে নিয়েই মুশফিকুর রহিম বলে উঠলেন, ‘ওয়াও’। অনেকটা আইপিএলের ট্রফির আদলে বানানো এবারের বঙ্গবন্ধু বিপিএলের ট্রফিটা মুশফিকের বেশ মনে ধরেছে। অবশ্য যেকোনো ট্রফি নিয়েই তার বাড়তি রোমাঞ্চ থাকার কথা। বিপিএলের ফাইনাল খেলছেন প্রথমবার। শুধু বিপিএলই নয়, কোন পর্যায়েই যে এখনো শিরোপা জেতা হয়নি অধিনায়ক মুশফিকের। তার রোমাঞ্চ ম্লান করে দিতে পারেন যিনি সেই আন্দ্রে রাসেল তখন পাশেই দাঁড়িয়ে। ট্রফি নিয়ে তার রোমাঞ্চ না থাকলেও যেকোনো কিছু জেতার তাড়না যে তার তীব্র।
এবার বিপিএলে অলরাউন্ডারে ভরপুর দল বানিয়েছিল রাজশাহী রয়্যালস। দারুণ ভারসাম্য রেখে পুরো টুর্নামেন্টেই ছুটেছে তারা। শুরু থেকেই তাদের নাম ছিল ফেভারিটের তালিকায়। তুলনায় টুর্নামেন্ট শুরুর আগে খুলনা টাইগার্স ছিল না খুব একটা আলোচনায়। কিন্তু মুশফিকের অধিনায়কত্বের পাশাপাশি দারুণ ব্যাটিং, রাইলি রুশোর অসাধারণ ছন্দ আর পেসারদের দাপটে টগবগিয়ে ছুটে সবার আগে ফাইনালে পা রাখে খুলনা।
এক মাসের বেশি ৪৫ ম্যাচ শেষে শুক্রবার মিরপুর শেরে বাংলা ক্রিকেট স্টেডিয়াম সন্ধ্যা ৭টায় শুরু হবে ট্রফির ফায়সালা। নতুন আদলের বিপিএলের ফাইনালে শিরোপার লড়াইয়ে সমান পাল্লায় দুই দল খুলনা টাইগার্স ও রাজশাহী রয়্যালস। জুতসই সমন্বয় খুঁজে পাওয়া, ছন্দে চলে ফাইনালে আসায় ফাইনালে দেখা যেতে পারে জম্পেশ লড়াই।
টুর্নামেন্ট জুড়ে প্রাধান্য ছিল খুলনার ব্যাটসম্যানদের। ১৩ ম্যাচে ৪৭০ রান করে রান করায় সবার উপরে মুশফিক। দুইয়েও আছেন খুলনার আরেকজন। ১৩ ম্যাচে ৪৫৮ রান করা রুশো বাংলাদেশের উইকেট কন্ডিশনের সঙ্গে মানিয়ে নেওয়া সেরা বিদেশী ব্যাটসম্যানদের একজন।
চারশোর উপর রান আছে রাজশাহীর দুজনেরও। ৪৪৬ রান করে ফেলেছেন মিডল অর্ডারে অন্যতম ভরসা শোয়েব মালিক। ওপেনার লিটন দাস করেছেন ৪৩০ রান।
তবে টুর্নামেন্টে রাজশাহীকে সবচেয়ে এগিয়ে রেখেছে তাদের ওপেনিং জুটি। লিটন দাস আর আফিফ হোসেনের জুটি টুর্নামেন্টে এনেছে সাড়ে চারশোর বেশি রান। প্রায় প্রতি ম্যাচেই আগ্রাসী শুরু পাইয়ে দিচ্ছেন তারা।
অলরাউন্ডারদের দল হওয়ায় বোলিং আক্রমণে অনেক বিকল্প রাজশাহীর। তাদের মধ্যে পাকিস্তানি মোহাম্মদ ইরফান নিজেকে করেছেন আলাদা। ১১ ম্যাচে নিয়েছেন ১২ উইকেট। সবচেয়ে চোখ ধাঁধানো তার ইকোনমি। ওভারপ্রতি মাত্র ৫.৭৪ রান করে রান দিয়েছেন দীর্ঘদেহী এই বাঁহাতি পেসার। ফাইনালে খুলনার ব্যাটসম্যানদের বড় পরীক্ষা নিতে পারেন তিনি।
টুর্নামেন্টে এর আগে তিনবার দেখা হয়েছে দু’দলের। লিগ পর্বের দুই দেখায় দু’দলই জিতেছিল একটি করে ম্যাচ। কিন্তু প্রথম কোয়ালিফায়ারে রাজশাহীকে অনায়াসে হারিয়ে ফাইনালে যায় খুলনা। দলটির পেসাররা আছেন দারুণ ছন্দে। মিডিয়াম পেসে রবি ফ্রাইলিঙ্ক ১৩ ম্যাচে নিয়ে ফেলেছেন ১৯ উইকেট। রাজশাহীকে কোয়ালিফায়ারে ধসিয়ে বিপিএলের ইতিহাসে সেরা বোলিংয়ের রেকর্ড গড়া মোহাম্মদ আমির থাকবেন তুরুপের তাস। টুর্নামেন্টের শুরুতে অতটা ধারালো না হলেও আসল ম্যাচগুলোতে জ্বলে উঠে ১৮ উইকেট নিয়ে ফেলেছেন তিনি। খুলনার স্থানীয় পেসার শহিদুল ইসলামও আছেন ছন্দে। ১২ ম্যাচে নিয়ে ফেলেছেন ১৮ উইকেট।
আগের ম্যাচে টস জিতে পরে ব্যাট করতে গিয়েও খুলনাকে হারাতে পারেনি রাজশাহী। ফাইনলেও টস জিতলে আগে ফিল্ডিং করার ভাবনা তাদের। তবে আগে ব্যাট করলেও যে সুযোগ থাকছে আগের ম্যাচ থেকেই রাসেল পেয়েছেন সে প্রমাণ, ‘টস গুরুত্বপুর্ণ। কিন্তু দেখুন দুদিন আগের ম্যাচে (খুলনার বিপক্ষে প্রথম কোয়ালিফায়ার) কি হলো। তারা আগে ব্যাট করল। বোর্ডে কিছু রান আনল। আমরা তাড়া করতে গিয়ে একের পর এক উইকেট হারাতে থাকলাম। কাল যদি আমরা আগে ব্যাট করি চেষ্টা করব ১৭০ রান করতে। কয়েন বাতাসে উড়লে আমরা আর কিছু নিয়ন্ত্রণ করতে পারি না। কেবল আশা করতে পারি নিজেদের পক্ষে যেন তা আসে।’
খুলনা কোচ জেমস ফস্টার সেই ম্যাচসহ আগের তিন ম্যাচে জিতে উড়তে থাকা তার দলকে দেখছেন ভীষণ চাঙ্গা, ‘রাজশাহীর বিপক্ষে আগের দিন আমরা খুব ভালো খেলেছি। তারা খুব ভালো দল। আমাদের কাল সেরা ক্রিকেট খেলতে হবে। যতটা সম্ভব প্রস্তুত হতে হবে। আমরা দারুণ আত্মবিশ্বাসী। আমরা আমাদের গত চার ম্যাচেই জিতেছি। আমরা ছন্দে আছি। এখন কেবল ম্যাচের দিন প্রয়োগ করার ব্যাপার।’
Comments