ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আহমদিয়া পাড়ায় আতংক, পুলিশ মোতায়েন
ব্রাহ্মণবাড়িয়া শহরের কান্দিপাড়া এলাকার আহমদিয়া মুসলিম জামাতের মসজিদ দখলে নিয়ে তাদেরকে বিতাড়িত করে জুমার নামাজ আদায়ের ঘোষণায় আহমদিয়া পাড়ায় আতংক ছড়িয়ে পড়ে। এ ঘটনায় ওই মহল্লায় পুলিশ সদস্য মোতায়েন করা হয়েছে।
একই পাড়ার জামিয়া ইসলামিয়া ইউনুসিয়া মাদ্রাসার ছাত্র ও ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা কওমি মাদ্ররাসা ছাত্র ঐক্য পরিষদ মসজিদ দখলে নেওয়ার ঘোষণা দেয়। এর আগে গত ১৪ জানুয়ারি ওই মাদ্রাসার ছাত্ররা আহমদিয়া মুসলিম জামাতের ‘মসজিদে বায়তুল ওয়াহেদ’-এ অতর্কিত ইট-পাটকেল নিক্ষেপ করে জানালার কাঁচ ভাংচুর ও লন্ডন থেকে আগত আহমদিয়া সম্প্রদায়ের এক অতিথির গাড়ি ভাংচুরসহ স্থানীয় আহমদিয়া সম্প্রদায়ের বাসিন্দাদের বসতবাড়িতে হামলা চালায়।
তবে কওমি মাদ্ররাসা ছাত্র ঐক্য পরিষদ তাদের পূর্ব ঘোষিত কর্মসূচি পালন না করায় আজ (১৭ জানুয়ারি) সন্ধ্যা সোয়া ৬টা নাগাদ কোনো অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটেনি।
সরেজমিন কান্দিপাড়া এলাকায় ঘুরে দেখা গেছে, শহরের গুরুত্বপূর্ণ মোড়সহ কান্দিপাড়ার বিভিন্ন মোড়ে ছিলো পুলিশের উপস্থিতি।
জেলা পুলিশের বিশেষ শাখার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ডিআইও-১) ইমতিয়াজ আহাম্মেদ জানিয়েছেন, কান্দিপাড়ায় ১৪ জন পুলিশ পরিদর্শকসহ ৮০ জন কর্মকর্তার নেতৃত্বে পুলিশ সদস্য মোতায়েন রয়েছে।
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, গত ১৪ জানুয়ারি সন্ধ্যা সাড়ে ৬টার দিকে কান্দিপাড়ার আহমদিয়া মসজিদে শিশু সংগঠন আতফালুল আহমদিয়ার উদ্যোগে পুরষ্কার বিতরণী ও দোয়া মাহফিল চলছিলো। এতে প্রধান অতিথি ছিলেন লন্ডন থেকে আগত আহমদিয়া সম্প্রদায়ের মুরব্বী ফিরোজ আলম। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন জেলা আহমদিয়া মুসলিম জামাতের সভাপতি মোস্তাক আহমেদ খন্দকার। তাদের সম্প্রদায়ের লোকজন মসজিদের ভেতরে ঘরোয়া পরিবেশে সাত বছর বয়সী শিশু থেকে শুরু করে ৪০ বছর বয়সী লোকজনদের নিয়ে তালিম তরবিয়ী ক্লাস করছিলেন। সেসময় তাদের ওপর অতর্কিত হামলা করা হয়। এক পর্যায়ে উভয় পক্ষের মধ্যে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ার ঘটনা ঘটে। পরে পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছে পরিস্থিতি শান্ত করে।
এ ঘটনার পর রাতেই জামিয়া ইসলামিয়া ইউনুসিয়া মাদ্রাসার শিক্ষার্থীরা শহরে একটি বিক্ষোভ মিছিল বের করে।
যোগাযোগ করা হলে জেলা আহমদিয়া মুসলিম জামাতের সভাপতি মোস্তাক আহমেদ খন্দকার বলেছেন, “গত ১৪ জানুয়ারি সন্ধ্যার পর স্থানীয় কয়েকজন যারা আগে আহমদিয়া ছিলো তাদের প্ররোচনায় কওমি মাদ্রাসার ছাত্ররা তাদের মসজিদ ও বসতবাড়িতে হামলা ও ভাঙচুর করে।”
“সেই সঙ্গে তারা আজ আমাদের মসজিদ দখলে নিয়ে আমাদের বিতাড়িত করে তারা জুমার নামাজ পড়ার ঘোষণা দেয়। এছাড়াও, শহরের একাধিক মসজিদে জুমার নামাজ শেষে আহমদিয়াদের অমুসলিম ঘোষণা করার দাবিসহ শহর থেকে তাড়িয়ে দেওয়ার ঘোষণা দেওয়া হয়। তবে প্রশাসনের হস্তক্ষেপে আমরা আজ রক্ষা পেয়েছি। কিন্তু আমরা আতঙ্কে আছি,” যোগ করেন তিনি।
জামিয়া ইসলামিয়া ইউনুসিয়া মাদ্রাসার ছাত্র ও ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা কওমি মাদ্ররাসা ছাত্র ঐক্য পরিষদের সভাপতি বেলাল হুসাইন বলেছেন, “তাদের (আহমদিয়াদের) অনুষ্ঠান চলাকালে ১৪ জানুয়ারি সন্ধ্যার পর আমাদের পক্ষের কিছু শিশু-কিশোর কৌতূহলী হয়ে সেখানে গেলে তারা শিশু-কিশোরদের মারধর করে। এক পর্যায়ে কওমি মাদ্রাসার এক শিক্ষকের বাড়িতে হামলা চালিয়ে ভাঙচুর করতে থাকে। এ ঘটনার খবর পেয়ে জামিয়া ইসলামিয়া ইউনুসিয়া মাদ্রাসার শিক্ষার্থীরা সেখানে গেলে তারা সফিউল্লাহ নামের এক ছাত্রসহ ৭-৮ জনকে মারধর করে গুরুতর আহত করে। আজকে তাদের কোনো কিছু আমরা দখলে নিতে কোনো ঘোষণা দেইনি। তবে তারা মুসলমান পরিচয় দিয়ে ইসলাম ধর্ম চর্চার নামে কিছু করতে চাইলে কোনো মুসলমানরা তা মেনে নেবে না।
ব্রাহ্মণবাড়িয়ার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সদর সার্কেল) মোহাম্মদ রেজাউল কবির বলেছেন, “বর্তমানে পরিস্থিতি শান্ত রয়েছে। এখানে কোনো উত্তেজনা নেই। এরপরও সেখানে পুলিশ মোতায়েন রয়েছে।”
Comments