এনআরসি-সিএএ ভারতের অভ্যন্তরীণ বিষয়, প্রধানমন্ত্রী মোদি আমাকে আশ্বস্ত করেছেন: শেখ হাসিনা

সংশোধিত নাগরিকত্ব আইন (সিএএ) ভারতের অভ্যন্তরীণ বিষয় বলে মন্তব্য করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তবে এর কোনো প্রয়োজন ছিল না বলেও মনে করেন তিনি।
sheikh-hasina-1_2.jpg
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ফাইল ছবি

সংশোধিত নাগরিকত্ব আইন (সিএএ) ভারতের অভ্যন্তরীণ বিষয় বলে মন্তব্য করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তবে এর কোনো প্রয়োজন ছিল না বলেও মনে করেন তিনি।

সংযুক্ত আরব আমিরাতের সংবাদ মাধ্যম গালফ নিউজকে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে এসব কথা বলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

ভারতে পাস হওয়া সংশোধিত নাগরিকত্ব আইন, যেখানে বাংলাদেশসহ অন্যান্য প্রতিবেশি দেশে নিপীড়নের শিকার অমুসলিমদের নাগরিকত্বের সুযোগ রাখা হয়েছে তার উদ্দেশ্য কী বুঝতে পারেননি বলেও জানান শেখ হাসিনা। 

তিনি বলেন, “আমরা জানি না কেন তারা (ভারত সরকার) এটি করেছে। এর দরকার ছিল না”।

২০১৯ সালের ১১ ডিসেম্বর ভারতের পার্লামেন্টে পাস হয় সংশোধিত নাগরিকত্ব আইন। আইন অনুসারে বাংলাদেশ, পাকিস্তান ও আফগানিস্তান থেকে নিপীড়নের শিকার ভারতে যাওয়া হিন্দু, শিখ, বৌদ্ধ, জৈন, পার্সি ও খ্রিস্টান ধর্মাবলম্বীদের নাগরিকত্ব পাওয়ার সুযোগ রয়েছে।

গালফ নিউজের প্রতিবেদনে বলা হয়, বাংলাদেশের জনসংখ্যা ১৬ কোটি ১০ লাখের মতো। যার মধ্যে ১০.৭ শতাংশ হিন্দু ও ০.৬ শতাংশ খ্রিস্টান ধর্মাবলম্বী। তবে ধর্মীয় নিপীড়নের কারণে কেউ বাংলাদেশ থেকে ভারতে গিয়েছেন, এমন অভিযোগ নাকচ করছে বাংলাদেশ।

“ভারত থেকে কারও বাংলাদেশে আসার ঘটনা ঘটেনি। তবে ভারতের মধ্যেই অনেকে নানা সমস্যায় আছেন”, বলেন প্রধানমন্ত্রী।

গত মাসে সিএএ এবং জাতীয় নাগরিক নিবন্ধন (এনআরসি) ভারতজুড়ে কার্যকরের ঘোষণা দেয় মোদি সরকার। এরপর থেকেই ভারতজুড়ে বিক্ষোভ-সহিংসতা ছড়িয়ে পড়ে। এই পরিস্থিতিতে বাংলাদেশের বিশ্লেষকরা শঙ্কা প্রকাশ করেন যে, ভারতের যেসব মুসলিম নাগরিকত্ব প্রমাণে ব্যর্থ হবেন, তারা বাংলাদেশে চলে আসতে পারেন।

শেখ হাসিনা বলেন, ‘‘সিএএ ও এনআরসি ভারতের অভ্যন্তরীণ বিষয়। এটি যে ভারতের অভ্যন্তরীণ বিষয়, সেটি গত অক্টোবরে ভারত সফরকালে প্রধানমন্ত্রী মোদিও আমাকে আশ্বস্ত করেছেন।’’

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার মতে, বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যকার দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক বর্তমানে সর্বোচ্চ পর্যায়ে রয়েছে।

রোহিঙ্গা সংকটের সমাধান প্রয়োজন

রোহিঙ্গা সংকট নিয়ে মিয়ানমারের বিষয়ে উদ্বেগ জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।  মিয়ানমারের নিপীড়নের শিকার হয়ে বর্তমানে কক্সবাজারের আশ্রয়কেন্দ্রে প্রায় ১২ লাখ রোহিঙ্গা আশ্রয় নিয়েছে ।

প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, ‘‘রোহিঙ্গা সংকট মিয়ানমারে শুরু হয়েছে, সমাধানও তাদেরই করতে হবে। কিন্তু দুর্ভাগ্যক্রমে রোহিঙ্গাদের স্বেচ্ছায় এবং নিরাপদ প্রত্যাবাসনে এখনও কোনো কার্যকর উদ্যোগ নেয়নি মিয়ানমার। রোহিঙ্গারা সেখানে স্বেচ্ছায় ফিরে যেতে রাজি না হওয়ায় এখন পর্যন্ত দুই বার প্রত্যাবাসনের উদ্যোগ নিলেও তা ব্যর্থ হয়েছে। এটিই প্রমাণ করে যে, রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনে উপযুক্ত পরিবেশ তৈরি করতে ব্যর্থ হয়েছে মিয়ানমার”।

তিনি বলেছেন, অনির্দিষ্টকালের জন্য ১০ লাখেরও বেশি রোহিঙ্গার দায়িত্বভার নেওয়া বাংলাদেশের পক্ষেও সম্ভব নয়।

“যদি এই সংকট রয়েই যায়, তবে এটি এই অঞ্চলের নিরাপত্তা ও স্থিতিশীলতার ওপর মারাত্মক প্রভাব ফেলতে পারে। এ কারণেই রোহিঙ্গা সংকটের যথাযথ সমাধান হওয়ার আগ পর্যন্ত আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের উচিত এর সঙ্গে থাকা,’’ বলেছেন প্রধানমন্ত্রী।

কয়লাভিত্তিক নতুন বিদ্যুৎকেন্দ্র

২০১৬ সালে বাংলাদেশে ২৯টি কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র তৈরির ঘোষণা দেওয়া হয়। যদিও জলবায়ু পরিবর্তনের ঝুঁকিতে থাকা দেশগুলোর মধ্যে রয়েছে বাংলাদেশ।

ধারণা করা হয়, ২০৫০ সালের মধ্যে বাস্তুচ্যুত হওয়ার ঝুঁকিতে রয়েছে উপকূলীয় অঞ্চলে বসবাসরত ৪২ লাখ মানুষ। এছাড়া ভাঙন ঝুঁকিতে রয়েছে পদ্মা, মেঘনা, যমুনা ও ব্রহ্মপুত্রের মতো বড় নদীপাড়ের মানুষেরা।

শেখ হাসিনা বলেছেন, ‘‘প্রায় ২২ বছর আগে দিনাজপুরে প্রথম কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপন করা হয়। এর কারণে পরিবেশের খুব বেশি ক্ষতি হয়েছে তা আমরা দেখিনি। আমি ব্যক্তিগতভাবে নিজে গিয়ে পর্যবেক্ষণ করেছি।’’

প্রাকৃতিক গ্যাসের মজুদ কম

অতীতে বাংলাদেশে প্রাকৃতিক গ্যাস থেকেই বেশিরভাগ বিদ্যুৎ উৎপাদন করা হতো।

প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, “এক দশক আগেও বিদ্যুৎ উৎপাদন করা হতো গ্যাস থেকে। কিন্তু এখন রিজার্ভ দ্রুত কমে যাচ্ছে। তাই কয়লা, তরল জ্বালানি, পরমাণু শক্তিই বিকল্প”।

তিনি বলেন, “ বর্তমানে দেশের ৯৫ শতাংশ মানুষের কাছে বিদ্যুৎ পৌঁছে গেছে।  কিন্তু দিন দিন অর্থনৈতিকভাবে মানুষের উন্নতি হচ্ছে এবং ক্রয়ক্ষমতাও বাড়ছে। তাই তাদের মোবাইল ডিভাইস, কম্পিউটার এবং ডিজিটাল ক্লাসরুমের জন্যও বিদ্যুতের আরো প্রয়োজন”। 

“বাংলাদেশ ইতোমধ্যে ভারতের কাছ থেকে ৬০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ আমদানি করছে। এছাড়া নেপাল, ভারত ও ভুটানের সঙ্গে বাংলাদেশের জলবিদ্যুৎ উৎপাদন চুক্তিও রয়েছে। একইসঙ্গে বাংলাদেশে ২.৪ গিগাওয়াট ক্ষমতাসম্পন্ন পরমাণু বিদ্যুৎকেন্দ্রের নির্মাণ কাজ চলছে” বলেন শেখ হাসিনা।

এছাড়া যেখানে বিদ্যুতের লাইন পৌঁছেনি, সেখানে সৌর বিদ্যুৎ পৌঁছে দেয়া হচ্ছে। দেশব্যাপী ৫৩ লাখ সোলার প্যানেলও স্থাপন করা হয়েছে, বলেও জানান তিনি।

প্লাস্টিকে নিষেধাজ্ঞা

সম্পতি বাংলাদেশের উপকূলীয় অঞ্চল এবং হোটেল ও রেস্তোরাঁতে একবার ব্যবহারযোগ্য প্লাস্টিক পণ্যের ব্যবহার নিষিদ্ধ করার পরিকল্পনার ঘোষণা দিয়েছে। এছাড়া ২০০২ সাল থেকেই পলিথিন ব্যাগ ব্যবহারে নিষেধাজ্ঞা রয়েছে, যেটি তেমন কার্যকর নয়।

পলিথিন ব্যাগের ব্যবহার নিষিদ্ধ করতে পুরোপুরি সফল না হওয়ার কথা স্বীকার করছেন প্রধানমন্ত্রীও। এর কারণ হিসেবে তিনি উল্লেখ করেছেন সাশ্রয়ী মূল্যে এটির ভালো বিকল্প না থাকা।

তিনি বলেন, ‘‘এখন আমাদের ভুট্টাসহ বিভিন্ন ফসলের অবশিষ্টাংশ থেকে তৈরি বায়োডিগ্রেডেবল (পচনশীল) ব্যাগের মতো ভালো বিকল্প রয়েছে । এছাড়া আমাদের একজন বিজ্ঞানী পাট থেকে বায়োডিগ্রেডেবল ব্যাগ তৈরির বিষয়টি আবিষ্কার করেছেন। আমি এটির নাম দিয়েছি ‘সোনালি ব্যাগ’। বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয়কে নির্দেশ দিয়েছি বাণিজ্যিকভাবে এ ব্যাগ উৎপাদন করতে এবং সাশ্রয়ী মূল্যে সরবরাহ করতে।’’

Comments

The Daily Star  | English

One month of interim govt: Yunus navigating thru high hopes

A month ago, as Bangladesh teetered on the brink of chaos after the downfall of Sheikh Hasina, Nobel Laureate Muhammad Yunus returned home to steer the nation through political turbulences.

7h ago