‘রাখাইনে যুদ্ধাপরাধ হয়েছে, গণহত্যা হয়নি’

গণহত্যা বন্ধে আন্তর্জাতিক আদালতে জরুরি ব্যবস্থা গ্রহণের প্রয়োজন আছে কী না, সে রায় দেওয়ার আগেই মিয়ানমার কমিশনের প্রতিবেদন প্রকাশ। প্রতিবেদনে তারা রাখাইনে কোনো ‘গণহত্যার’ প্রমাণ পাননি বলে উল্লেখ করেছে।
মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে সেনাবাহিনী জাতিগত সংখ্যালঘুদের বাড়ি-ঘর ধ্বংস করেছে। ছবি: রয়টার্স ফাইল ফটো

গণহত্যা বন্ধে আন্তর্জাতিক আদালতে জরুরি ব্যবস্থা গ্রহণের প্রয়োজন আছে কী না, সে রায় দেওয়ার আগেই মিয়ানমার কমিশনের প্রতিবেদন প্রকাশ। প্রতিবেদনে তারা রাখাইনে কোনো ‘গণহত্যার’ প্রমাণ পাননি বলে উল্লেখ করেছে।

রাখাইনে রোহিঙ্গাদের ওপর গণহত্যা তদন্তে মিয়ানমার সরকারের ‘স্বাধীন তদন্ত কমিশন’ (আইসিওই) গতকাল (২০ জানুয়ারি) একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে। আইসিওই প্রতিবেদনে জানিয়েছে, দেশটির সামরিক বাহিনী রাখাইনে বেশ কয়েকটি গ্রামে হামলা করেছে।

‘নিরীহ গ্রামবাসীদের হত্যা’ এবং তাদের বাড়িঘর ‘ধ্বংস’ করার মতো যুদ্ধাপরাধ সেখানে সংঘটিত হয়েছে এবং তারা গুরুতর মানবাধিকার লঙ্ঘন করেছে। তবে, তদন্ত কমিশন বলেছে যে সেখানে গণহত্যা হয়নি।

প্রতিবেদনে বলা হয়, “রোহিঙ্গাদের ওপর হামলায় মিয়ানমারের নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যদের বিরুদ্ধে যুদ্ধাপরাধ ঘটানোর দায় চাপানোর যুক্তিসঙ্গত কারণ রয়েছে। সামরিক বাহিনীর নেতৃত্বে ২০১৭ সালে রোহিঙ্গাদের ওপর হামলা হলে সেখানে গুরুতর মানবাধিকার লঙ্ঘন করা হয়েছিলো।”

“রাখাইনে যে অপরাধ সংঘটিত হয়েছিলো সেখানে জাতিগতভাবে বা নৃতাত্ত্বিকগোষ্ঠী হিসেবে কিংবা ধর্মীয় দৃষ্টিকোণ থেকে রোহিঙ্গাদের গণহত্যা চালানো হয়েছে কী না, সে বিষয়ে যথেষ্ট প্রমাণ নেই,” বলে তদন্ত কমিশনের প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে।

সেখানে আরও বলা হয়েছে, ২০১৭ সালের আগস্টে রাখাইনে আরাকান রোহিঙ্গা স্যালভেশন আর্মি (আরসা) নিরাপত্তা বাহিনীর বেশকিছু চৌকিতে হামলা করলে রোহিঙ্গাদের গ্রামে গ্রামে শুরু হয় মিয়ানমার সেনাবাহিনীর তাণ্ডব। প্রাণ বাঁচাতে প্রায় ৭ লাখ ৩০ হাজার রোহিঙ্গা বাংলাদেশে পালিয়ে যায়।

প্রতিবেদনের বক্তব্য প্রত্যাখ্যান করে রোহিঙ্গা নেতা দিল মোহাম্মদ রয়টার্সকে জানিয়েছেন, “দশকের পর দশক ধরে আমাদের ওপর অত্যাচার চালানো হয়েছে। অসংখ্য মানুষকে হত্যা করা হয়েছে, আমাদের নারীদেরকে ধর্ষণ করা হয়েছে, আমাদের সন্তানদেরকে আগুনে পোড়ানো হয়েছে। আগুনে ভস্মীভূত হয়েছে আমাদের ঘরবাড়ি। এটা গণহত্যা নয়তো কি?”

রোহিঙ্গাদের ওপর মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনার তদন্ত করতে মিয়ানমার সরকার ২০১৮ সালের জুলাইয়ে এই কমিশন গঠন করে। ফিলিপাইনের সাবেক কূটনীতিবিদ রোজারিও মানালো কমিশনের নেতৃত্ব দিচ্ছেন।

গতকাল তিনি মিয়ানমারের রাষ্ট্রপতি উইন মিন্টের হাতে প্রতিবেদনটি জমা দেন। সরকারের কাছে জমা দিলেও তা জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে কী না সে বিষয়ে কিছু জানা যায়নি।

এটিকে ‘স্বাধীন তদন্ত কমিশন’ বলা হলেও বাস্তবে তা কতোটা স্বাধীন তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। গ্লোবাল জাস্টিস সেন্টারের প্রেসিডেন্ট আকিলা রাধাকৃষ্ণান বলেছেন, শুধু রোহিঙ্গারাই জানেন না, বিশ্বের মানবাধিকারকর্মীরা ইতোমধ্যে জেনে গেছেন যে গণহত্যা ও গণধর্ষণের দায়ে অভিযুক্ত অপরাধীদের বিচারের আওতায় আনার ইচ্ছা মিয়ানমার সরকারের নেই।

উল্লেখ্য, গত নভেম্বরে আন্তর্জাতিক বিচার আদালত রোহিঙ্গাদের ওপর ‘চলমান গণহত্যা’ নিয়ে মিয়ানমারের বিরুদ্ধে অভিযোগ এনে মামলা করেছে গাম্বিয়া।

Comments

The Daily Star  | English

One month of interim govt: Yunus navigating thru high hopes

A month ago, as Bangladesh teetered on the brink of chaos after the downfall of Sheikh Hasina, Nobel Laureate Muhammad Yunus returned home to steer the nation through political turbulences.

8h ago