এগিয়ে যাচ্ছে গ্রামীণফোন, বাংলালিংক পিছিয়ে পড়েছে

বিগত দশকে পুঁজিবাজারের শেয়ারে গ্রামীণফোনের পয়েন্ট বেড়েছে প্রায় দুই শতাংশ। বলা হচ্ছে যে, নেটওয়ার্ক সম্প্রসারণে বিনিয়োগ করার কারণেই কোম্পানিটি আয় করেছে দ্বিগুণ।

গতকাল (২০ জানুয়ারি) প্রকাশিত বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশনের (বিটিআরসি) এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, দেশের মোট গ্রাহকের ৪৬.১৮ শতাংশ শেয়ার নিয়ে নতুন দশক শুরু করেছে গ্রামীণফোন। পাঁচ বছর আগেও এই শেয়ার ছিল ৪২.৮০ শতাংশ।

ব্যবহারকারীদের তথ্য নিয়ে করা প্রতিবেদনে বলা হয় যে গত বছরের ডিসেম্বরের শেষে গ্রামীণফোনের সক্রিয় গ্রাহকের সংখ্যা ছিল ৭.৬৪ কোটি।

দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম অপারেটর রবির রয়েছে ৪.৯০ কোটি সক্রিয় সংযোগ, বাংলালিংকের ৩.৫২ কোটি এবং রাষ্ট্রায়ত্ত প্রতিষ্ঠান টেলিটকের গ্রাহক সংখ্যা মাত্র ৪৮.৬৮ লাখ।

শীর্ষস্থানীয় দুই অপারেটরের ওপর নিয়ন্ত্রণমূলক বিধিনিষেধ থাকায় বাজারে কিছুটা মন্দাভাব চলছে। সে কারণে চারটি অপারেটর মিলে ২০১৯ সালে নতুন করে মাত্র ৮৫.৮৩ লাখ সিম যুক্ত হয়।

বিটিআরসির চেয়ারম্যান মো. জহুরুল হক বলেন গত দুই দশক ধরে গ্রামীণফোন অভাবনীয় সফলতার সঙ্গে তার কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে। সে কারণেই তার এই বিপুল পরিমাণ গ্রাহক।

“তবে কেবল মার্কেট শেয়ার বেশি হলেই চলবে না, পাশাপাশি বিধিনিষেধও মেনে চলতে হবে,” যোগ করেন তিনি।

গ্রামীণফোনের গ্রাহক সংখ্যা ৫০ শতাংশের নিচে থাকলেও, আয়ের দিক দিয়ে তারা মোবাইল বাজারের অর্ধেকের বেশি দখলে রাখতে পেরেছে। প্রকৃতপক্ষে এর মাধ্যমে ভারসাম্যহীন বাজারের পরিচয়ই পাওয়া যায়।

“প্রতিযোগিতা বাড়ানোর জন্য এবং বাজার নিয়ন্ত্রণ করার জন্য আমরা ‘সিগনিফিক্যান্ট মার্কেট পাওয়ার’ (এসএমপি) প্রবিধান তৈরি করছি। আমরা মনে করি, এর মাধ্যমে ছোট অপারেটররা তাদের কার্যক্রম বাড়ানোর সুযোগ পাবে”, বিটিআরসি চেয়ারম্যান বলেন।

বিটিআরসির মতে, এসএমপি হলো এমন একটি বিধিমালা যা কোনো অপারেটরের গ্রাহক সংখ্যা বা আয়ের পরিমাণ বাজারের ৪০ শতাংশ ছুঁয়ে ফেললে আরোপ করা হবে।

প্যারামিটার অনুযায়ী, গত বছর গ্রামীণফোনকে এসএমপি অপারেটর হিসাবে ঘোষণা করেছিল বিটিআরসি। তবে আদালতের আদেশের কারণে তখন আরোপিত বিধানগুলি কার্যকর করা যায়নি।

বিটিআরসি কর্মকর্তারা জানিয়েছেন যে অপারেটরের প্রভাব নিয়ন্ত্রণের জন্য নতুন বিধিনিষেধ তৈরি করা হচ্ছে।

বর্তমানে গ্রামীণফোনের বার্ষিক আয় প্রায় ১৪,০০০ কোটি টাকা। যেখানে সবগুলো মোবাইল অপারেটরের সম্মিলিত আয় ২৬,০০০ কোটি টাকা। গত ১০ বছরে এই আয় দ্বিগুণ হয়েছে।

গ্রামীণফোন অবশ্য বলেছে যে তারা ‘গ্রাহককেন্দ্রিক ব্র্যান্ড’। নেটওয়ার্কের আধুনিকীকরণ করে অবিচ্ছিন্ন থ্রিজি এবং ফোরজি নেটওয়ার্ক সম্প্রসারণের মাধ্যমে এই প্রবৃদ্ধি তারা অর্জন করেছে।

গ্রামীণফোনের উদ্ভাবনী সেবা এবং ডিজিটাল পরিষেবা গ্রাহকদের আস্থা অর্জন করেছে বলে জানিয়েছেন কোম্পানিটির বহির্যোগাযোগ প্রধান মো. হাসান।

পাঁচ বছর আগে, বাংলাদেশে ছয়টি মোবাইল অপারেটর কোম্পানি ছিল। তখন ২৫.৬৮ শতাংশ গ্রাহক নিয়ে বাংলালিংক ছিল দ্বিতীয় অবস্থানে। ১০ বছর আগে তাদের গ্রাহকের শেয়ার ছিল ২৬.৪৫ শতাংশ। তবে, গত বছরের ডিসেম্বরের শেষে সেটা কমে ২১.২৮ শতাংশে দাঁড়িয়েছে।

অপারেটর রবি ২০১৬ সালের নভেম্বরে এয়ারটেলের সঙ্গে একীভূত হওয়ার আগ পর্যন্ত মার্কেট শেয়ারে তৃতীয় ছিল। বর্তমানে রবির আছে ২৯.৬০ মার্কেট শেয়ার। বিটিআরসির প্রতিবেদনে দেখা যায় যে ২০১৪ সালের শেষে তাদের মোট শেয়ারের পরিমাণ ছিল ২১.০১ শতাংশ। এর মধ্যে এয়ারটেলের মার্কেট শেয়ার ছিল ৬.২৪ শতাংশ। আর ১০ বছর আগে রবির ছিল ১৭.৭২ শতাংশ মার্কেট শেয়ার।

“মার্কেট শেয়ার একটি মোবাইল ফোন অপারেটরের সক্ষমতার পরিচয় দেয়”, রবির কর্পোরেট ও রেগুলেটরি প্রধান শাহেদ আলম বলেন।

কোনো কোম্পানির মূল্য নির্ধারণের কৌশল, তার আর্থিক শক্তি এবং বাজারে তার প্রভাবের উপর নির্ভর করে বলে জানান তিনি।

ফোন কলের ক্ষেত্রে মার্কেটে প্রতিযোগিতা থাকলেও, দুর্ভাগ্যক্রমে মোবাইল ইন্টারনেটের বাজার প্রায় নিয়ন্ত্রণহীন।

শাহেদ আলম জানান, “ফোনকল থেকে উপার্জিত অর্থ মোবাইল ইন্টারনেটে অপারেটরগুলি সরাসরি ভর্তুকি দেয়। যার কারণে কলরেট দিন দিন বেড়ে চলেছে।”

বাজারের প্রতিযোগিতা এমন পর্যায়ে গিয়েছে যে ছোট অপারেটররা এক প্রকার বিলুপ্তির পথে, আরও যোগ করেন আলম। “এই মৌলিক সমস্যাটির সমাধানের একমাত্র উপায় হলো প্রতিযোগিতা বজায় রাখতে আরোপ করা নিয়মগুলির যথাযথ প্রয়োগ নিশ্চিত করা”, বলেন তিনি।

রাষ্ট্রায়ত্ত প্রতিষ্ঠান টেলিটকের মার্কেট শেয়ার প্রথম থেকেই খুব কম। বর্তমানে তাদের মার্কেট শেয়ার ২.৯৪ শতাংশ। ২০০৯ সালের ২.০৪ শতাংশের তুলনায় তা আসলে সামান্য বেড়েছে।

গত দশকে থ্রিজি এবং ফোরজি প্রযুক্তির উদ্ভাবনের সঙ্গে টেলিকম শিল্পে ইন্টারনেট প্রভাব বিস্তার করতে শুরু করে।

২০১২ সালের ফেব্রুয়ারিতে আমাদের দেশে ইন্টারনেটের গ্রাহক ছিল ৩.১১ কোটি। গত বছরের ডিসেম্বরে তা বেড়ে ৯.৯৪ কোটিতে এসে দাঁড়িয়েছে। এদের মধ্যে ৯৪.২২ শতাংশই মোবাইলে ইন্টারনেট ব্যবহার করে। ওয়ারলেস ব্রডব্যান্ড সার্ভিস ওয়াইম্যাক্স-এর পতন হয়েছে গত দশকেই। বর্তমানে মাত্র ৫০০০ গ্রাহক আছে ওয়াইম্যাক্স এর।

বিটিআরসির তথ্য অনুযায়ী, ২০১২ সালের ফেব্রুয়ারিতে ব্রডব্যান্ড গ্রাহকের সংখ্যা ছিল ১২.৮০ লাখ। আর গত বছরের ডিসেম্বর শেষে এটা এসে দাঁড়িয়েছে ৫৭.৪২ লাখে।

Comments

The Daily Star  | English

US election: What is at stake for Bangladesh’s exports

As millions of Americans head to the polls on November 5 to vote for either Democratic Vice President Kamala Harris or her Republican rival Donald Trump, apparel business communities in Bangladesh, more than 13,119 kilometres away from Washington, will be watching the results of the presidential election closely.

13h ago