পর্তুগালে বাংলাদেশিদের দুই পক্ষের সংঘর্ষে গুলিবিদ্ধ ২, চাপাতির আঘাতে আহত ৫

পর্তুগালের রাজধানী লিসবনে প্রবাসী বাংলাদেশিদের দুই পক্ষের সংঘর্ষে গুলিবিদ্ধ দুই এবং চাপাতির আঘাতে আহত হয়েছেন আরও পাঁচ জন। সংঘর্ষের পর একজন নিহত হওয়ার সংবাদ রটেছিল। অনুসন্ধানে তার সত্যতা মেলেনি।
বাংলাদেশিদের দুই পক্ষের সংঘর্ষের খবর প্রকাশ করেছে পর্তুগালের মূল ধারার পর্তুগীজ ভাষার পত্রিকাগুলো। ছবি: ইন্টারনেট

পর্তুগালের রাজধানী লিসবনে প্রবাসী বাংলাদেশিদের দুই পক্ষের সংঘর্ষে গুলিবিদ্ধ দুই এবং চাপাতির আঘাতে আহত হয়েছেন আরও পাঁচ জন। সংঘর্ষের পর একজন নিহত হওয়ার সংবাদ রটেছিল। অনুসন্ধানে তার সত্যতা মেলেনি।

সংঘর্ষে জড়ানো এক পক্ষের নেতৃত্বে রয়েছেন পর্তুগাল বিএনপির সভাপতি অলিউর রহমান চৌধুরী, আরেক পক্ষের নেতৃত্বে পর্তুগাল আওয়ামী লীগের সহসভাপতি ফরহাদ মিয়া। দুজনেরই বাড়ি সিলেটে। তাদের ব্যক্তিগত দ্বন্দ্বের জের ধরেই দুই পক্ষের মোট ৪০ জন সংঘর্ষে জড়িয়েছেন বলে জানা গেছে।

গত ১৮ জানুয়ারি লিসবনের মাউরিরিয়ার রুয়া দো টেরেরিনহোতে এই ঘটনা ঘটে। মারামারিতে জড়িত থাকার অভিযোগে পুলিশ এরই মধ্যে কয়েকজনকে গ্রেপ্তার করেছে বলেও জানা গেছে। পুলিশি অভিযান চলছে।

এই মারামারিতে দুই পক্ষই মূলত বাংলাদেশ থেকে যাওয়া নতুন প্রবাসীদের ব্যবহার করেছেন। নতুন প্রবাসীরা আর্থিকভাবে তাদের উপর নির্ভরশীল। প্রবাসীদের অনেকেই বলছেন, সংঘর্ষে ভাড়াটিয়া সন্ত্রাসীও ব্যবহার করা হয়েছে।

এই ঘটনায় পর্তুগালসহ ইউরোপে অবস্থানরত প্রবাসীদের ভাবমূর্তি দারুণভাবে ক্ষুণ্ণ হয়েছে।

ইউরোপের অন্য সবগুলো দেশে বৈধ হওয়ার সুযোগ নেই বললেই চলে। সেখানে পর্তুগালে বেশ সহজে বৈধ হওয়ার সুযোগ পাওয়া যায়। সেই সুযোগ থাকবে কিনা, সেটা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। পর্তুগালের বাংলাদেশি কমিউনিটির অর্ধশতাধিক প্রবাসী এবং গণমাধ্যম কর্মীর সঙ্গে কথা বলে এসব তথ্য জানা গেছে।

সংঘর্ষের সংবাদ লিসবনের মূলধারার প্রায় সব টেলিভিশন, পত্রিকা ও রেডিওতে প্রচার হয়েছে। পর্তুগীজ ভাষার পত্রিকাগুলো যা লিখেছে তা এমন:

 

পর্তুগাল প্রবাসী বাংলাদেশিরা কমিউনিটির গণ্ডির মধ্যে অবস্থান করেন। মূলধারার সঙ্গে এদের সংযোগ নেই। এদের অধিকাংশ পর্তুগীজ ভাষায় কথা বলতে পারেন না এবং বলেন না। এরা নিজেদের দেশ মানে বাংলাদেশের সরকারি দল এবং বিরোধী দলের মধ্যকার চলমান রাজনৈতিক কোন্দল এবং সমস্যা আমদানি করে পর্তুগালে নিয়ে এসেছে।

পুলিশ সূত্রের বরাত দিয়ে পত্রিকাগুলো লিখেছে, একটি মসজিদ প্রতিষ্ঠা ও দখল নিয়ে বাংলাদেশিদের দুটি গ্রুপের মধ্যে বিবাদ আছে। পাশেই একটি কেন্দ্রীয় মসজিদ রয়েছে। সেখানে একপক্ষ যেতে রাজি নয়। কারণ ওই মসজিদ সংশ্লিষ্ট বাংলাদেশি মুসলমানদের মূলধারার সঙ্গে সংযোগ আছে, তারা পর্তুগীজ ভাষা ভালো আয়ত্ত করেছেন।

পুলিশের সূত্র আরও বলছে, ওই এলাকাটিতে অঘোষিতভাবে ছোট ছোট অনেক মসজিদ আছে। অনিবন্ধিত এই মসজিদগুলোতে প্রশাসনের কোনো নিয়ন্ত্রণ বা নজর নেই। অভিবাসনের সুযোগ নিয়ে এখানে খুব সহজেই জিহাদি এবং চরমপন্থীদের ঢুকে পড়ার আশঙ্কা উড়িয়ে দেয়া যায় না। চরমপন্থার সুযোগ তৈরি হতে পারে, এমন কিছু এখানে করতে দেয়া যাবে না।

পর্তুগালের বাংলাদেশিদের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনা এটাই প্রথম নয়। গত বছরও এই এলাকায় বাংলাদেশিদের মধ্যে মারামারির ঘটনা ঘটেছে। পুলিশ পর্যন্ত গড়িয়েছে ওই ঘটনাগুলো। নামাজ শেষে মসজিদ থেকে বেরিয়েই মারামারিতে লিপ্ত হওয়ার ঘটনা ঘটেছে। পুলিশ প্রশাসন বিষয়গুলো জানে।

 

একজন প্রবাসী বলছিলেন, “আমরা লিসবনে ভালোই ছিলাম। একটি সংঘর্ষের ঘটনাকে কেন্দ্র করে পর্তুগালের বাংলাদেশিদের সঙ্গে চরমপন্থা বা জঙ্গিবাদ সম্পৃক্ত করে সংবাদ প্রকাশিত হওয়ার নেতিবাচক প্রভাব সমগ্র ইউরোপের বাংলাদেশিদের উপর পড়বে। এতে বিপদ হতে পারে।”

আরেকজন প্রবাসীর বললেন, “২০১৮ সালের পর্তুগাল সরকারের তথ্যানুযায়ী বাংলাদেশিদের সংখ্যা প্রায় পাঁচ হাজার। কিন্তু পত্রিকাগুলো ‘পর্তুগাল বাংলাদেশি কমিউনিটি’ ফেসবুক পেজের উদ্ধৃতি দিয়ে লিখেছে, এখানে কমপক্ষে ৩০ হাজার বাংলাদেশি থাকেন। এখন ওই কথিত ২৫ হাজারের বিষয়ে অনুসন্ধান শুরুর সম্ভাবনা উড়িয়ে দেওয়া যাচ্ছে না।”

তিনি বলেন, “পত্রিকাটি বাংলাদেশের দেশের বর্তমান সরকার, বিরোধীদল এবং ২০১৮ সালের নির্বাচন নিয়েও মন্তব্য করেছে। এখানে সরকারি দল সম্পর্কে বলা হয়েছে, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাম ঘরানার রাজনৈতিক জোট ২০১৮ সালে একটি প্রশ্নবিদ্ধ নির্বাচনী বৈতরণী পার করে ক্ষমতায় এসেছে। আর বিরোধী দলকে বলা হয়েছে মধ্যডানপন্থী জাতীয়তাবাদী দল, যার নেতৃত্বে রয়েছেন ইতিহাস খ্যাত রাজনীতিবিদ ড. কামাল হোসেন।”

Comments

The Daily Star  | English
government changed office hours

Govt office hours 9am-3pm from Sunday to Tuesday

The government offices will be open from 9:00am to 3:00pm for the next three days -- from Sunday to Tuesday -- this week, Public Administration Minister Farhad Hossain said today

55m ago