৩১৮ চলচ্চিত্র পরিচালক, সক্রিয় মাত্র ২৫ জন
বর্তমানে বাংলাদেশ চলচ্চিত্র উন্নয়ন কর্পোরেশনের (বিএফডিসি) মাত্র ৮ শতাংশ পরিচালক নিয়মিত চলচ্চিত্র পরিচালনার সঙ্গে যুক্ত রয়েছেন। চলচ্চিত্র পরিচালকদের সংগঠন বাংলাদেশ চলচ্চিত্র পরিচালক সমিতির সদস্যদের তালিকা বিশ্লেষণ করে এ তথ্য পাওয়া যায়।
১৯৮১ সালে প্রতিষ্ঠিত বাংলাদেশ চলচ্চিত্র পরিচালক সমিতির আজীবন সদস্য ১৭ জন, সাধারণ সদস্য ৩৬৭ জন ও প্রাথমিক সদস্য ১৫০ জন। সব মিলিয়ে সংগঠনের মোট সদস্য ৫৩৪ পরিচালকের মধ্যে মারা গেছেন ২১৬ জন। গত ছয় বছরের চলচ্চিত্র নির্মাণের সংখ্যা হিসেব করে দেখা যায়, নিয়মিত চলচ্চিত্র নির্মাণের সঙ্গে যুক্ত রয়েছেন ২০ থেকে ২৫ জন পরিচালক।
বাংলাদেশ চলচ্চিত্র পরিচালক সমিতির মহাসচিব বদিউল আলম খোকন দ্য ডেইলি স্টার অনলাইনকে বলেছেন, “একটি সংগঠন করা হয় তার সদস্যদের সুবিধা-অসুবিধা দেখার জন্য। ছবি নির্মাণের বিষয়টি তো নির্মাতার ওপরই নির্ভর করে। কর্মজীবনে কে কতটুকু সফলতা পাবে, সেটা তো আর সমিতি নির্ধারণ করতে পারবে না। সেটা একদমই নির্মাতার কৃতিত্ব।’
তিনি আরও বলেন, “চলচ্চিত্র পরিচালক সমিতির সদস্য হলে নির্মাতারা ছবি নির্মাণ করতে গিয়ে অনেক ধরনের সুবিধা পেয়ে থাকেন, যার কারণেই সদস্য হন। সদস্যদের জন্য বিভিন্ন সময়ে সভা-সেমিনারের আয়োজন করা হয়, যাতে তারা সময়ের সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলতে পারেন। এ ধরনের পরিস্থিতি আছে, আগেও ছিলো, ভবিষ্যতেও থাকবে। এখন সিনেমার পরিস্থিতি এমনিতেই সংকটজনক। এখন তো পরিস্থিতি এ রকম হবেই।’
চলচ্চিত্র সংশ্লিষ্টরা মনে করছেন অশ্লীলতা, পাইরেসি, নকল সিনেমা, হলের অস্বাস্থ্যকর ও নোংরা পরিবেশ, টিভি চ্যানেলে অবাধে দেশি-বিদেশি সিনেমা প্রদর্শন, সিনেমা স্ট্রিমিং ওয়েবসাইট, সিনেমা দেখার নতুন নানা ক্ষেত্র তৈরি, মৌলিক গল্পের অভাবসহ বিভিন্ন কারণে দর্শকরা সিনেমা হল বিমুখ হয়ে পড়েছেন।
‘ঢাকা অ্যাটাক’ বা ‘আয়নাবাজি’র মতো সিনেমা হিট হলেও প্রযোজকরা তাদের লগ্নিকৃত টাকা ফেরত পাননি। পর্যাপ্ত সিনেমার অভাবে নিয়মিতভাবে বন্ধ হচ্ছে দেশের বিভিন্ন প্রান্তের সিনেমা হলগুলো। প্রযুক্তির ব্যবহারের জায়গাটাতেও বড় ধরনের পরিবর্তন এসেছে। যার কারণে বিএফডিসির অনেক পরিচালক তাল মেলাতে পারছেন না।
পরিচালক কাজী হায়াৎ দ্য ডেইলি স্টার অনলাইনকে বলেন, “আমি ১৯৭৮ সালে পরিচালক হয়েছি। সেই থেকে আজ পর্যন্ত প্রতিনিয়ত যুদ্ধ করেছি। কাদের সঙ্গে করেছি? আমারই সতীর্থদের সঙ্গে। এ পেশায় যতটা হিংসা-বিদ্বেষ, ঈর্ষাকাতরতা, কলহ-বিবাদ আছে, অন্য পেশায় এতটা নেই বলেই আমার মনে হয়। এখানে এতো নিম্নমানের রাজনীতি হয়, যা একজন নির্মাতাকে ভালো কাজ করার মানসিকতা থেকে সবসময় দূরে ঠেলে রাখে।”
প্রযোজক নাসিরউদ্দিন দিলু বলেছেন, “এখন কয়টা ছবি চলছে? ছবি নির্মাণের সংখ্যা যে হারে কমছে তা সত্যিই উদ্বেগজনক। ছবির সংখ্যা কমলে নির্মাতাদের কাজের সংখ্যাও কমবে, এটাই স্বাভাবিক। অনেক প্রযোজক আছেন, যারা ছবি বানাতে চান। কিন্তু ইন্ডাস্ট্রিতে যে সংকটগুলো রয়েছে, সেগুলো জানার পর তারা আগ্রহ হারিয়ে ফেলেছেন।”
Comments