যে কারণে ফেসবুক বাংলাদেশে আসবে না

facebook
ছবি: সংগৃহীত

“ফেসবুক আসছে, ফেসবুক আসছে” গত কয়েক বছর ধরে এই একই কথা বহুবার আমরা শুনেছি বাংলাদেশ সরকারের কর্তাব্যক্তিদের কাছ থেকে। আলাপ আসলেই তারা বলেন, এই তো ফেসবুক ঢাকায় এলো বলে!

কিন্তু, আসলেই কি দুনিয়ার সবচেয়ে বড় সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমটি ঢাকায় তাদের অফিস নিয়ে আসবে? আদৌ কি ঢাকায় অফিস করার জন্যে তাদের কোনো আগ্রহ আছে?

গত মাসে সিঙ্গাপুরে ফেসবুকের এশিয়া প্যাসিফিক অঞ্চলের অফিসে ঘুরে আসার সুযোগ হয়েছিলো। প্রথমবারের মতো তারা ‘এশিয়া প্যাক প্রেস ডে’র আয়োজন করে দাওয়াত দিয়েছিলো ১৪ দেশের ২২ জন সাংবাদিককে। সারাদিনের ওই শিক্ষামূলক আয়োজনে অসংখ্য বিষয়ে ধারণা দিয়েছে ফেসবুক। হয়েছে সাক্ষাৎকার গ্রহণ পর্বও। পরে আবার মিলেছিলো ইমেইলে প্রশ্ন পাঠিয়ে বিস্তারিত উত্তর পাওয়ার সুযোগ।

দফায় দফায় করা একই প্রশ্ন - ‘তোমরা কেনো বাংলাদেশে অফিস নিয়ে আসছো না?’- থেকে উত্তর মিলেছে বাংলাদেশের বাজার তাদের আগ্রহের জায়গা হলেও অফিস তারা খুব একটা প্রয়োজন মনে করছেন না।

‘কিন্তু কোনো?’ এই প্রশ্নের উত্তর পাওয়ার আগে চলেন দেখে আসি বাংলাদেশে ফেসবুকের আসলে কি অবস্থা?

যতোদূর হিসাব পাওয়া যায় তাতে দেখা গেছে এটা অন্তত পরিষ্কার যে ব্যবহারকারীর সংখ্যা বিবেচনায় ফেসবুক বিশ্বের শীর্ষ ১৫ তালিকার মধ্যে আছে বাংলাদেশ। ২০১৯ সালের জানুয়ারি মাসের হিসাব অনুযায়ী বাংলাদেশে ফেসবুকের অ্যাক্টিভ অ্যাকাউন্ট আছে ৩ কোটি ৩৭ লাখ ১৩ হাজার। এরপরের আর কোনো প্রতিবেদনে বাংলাদেশ সম্পর্কে সুনির্দিষ্ট কোনো তথ্য নেই।

এর মধ্যে আবার ২০১৯ সালের তৃতীয় প্রান্তিক পর্যন্ত শীর্ষ দশ দেশের যে হিসাব পাওয়া গেছে, তাতে দেখা যাচ্ছে ৩ কোটি ৭০ লাখ ব্যবহারকারী নিয়ে ফেসবুক তালিকায় মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র আছে দশম স্থানে। সেক্ষেত্রে বাংলাদেশের অবস্থান একাদশ-দ্বাদশ বা ত্রয়োদশের মধ্যেই হওয়ার কথা।

সংখ্যার হিসাবে এত্তো বড় বাজার, অথচ ফেসবুকের কাছ থেকে আমরা কি সেই গুরুত্বটা পাচ্ছি?

ঢাকায় অফিস নিয়ে আসাকে যদি গুরুত্ব বোঝানের সূচক হিসেবে ধরি তাহলে গুরুত্বের ধারে কাছেও নেই আমরা। অথচ অন্তত তিনটি অফিস আছে ভারতে। ইন্দোনেশিয়া, ফিলিপাইন, ভিয়েতনাম, থাইল্যান্ডে অফিস থাকা নিয়েও হয়তো কোনো প্রশ্ন নেই। কারণ ওই দেশগুলোতে তাদের ব্যবহারকারীর সংখ্যা বাংলাদেশের চেয়ে বেশি।

কিন্তু, এর বাইরেও তো অস্ট্রেলিয়া, নিউজিল্যান্ড, সিঙ্গাপুর, হংকং, তাইওয়ান, মালয়েশিয়াতেও অফিস করেছে ফেসবুক।

ভারতে অন্তত তিনটি অফিসের খোঁজ পাওয়া যায় ইন্টারনেটে। ২০১০ সালে হায়দ্রাবাদে তারা এশিয়ায় নিজেদের প্রথম অফিস নিয়ে আসে। এরপর মুম্বাই এবং গুজরাটেও তাদের অফিস স্থাপন করে। আবারো সেই প্রশ্ন বাংলাদেশ কোনো নয়?

দাপ্তরিকভাবে ফেসবুক বলছে, অনলাইনে সংযুক্ত এই সময়ে শারীরিক অফিস আর তেমন দরকার নেই। বাড়তি কোনো গুরুত্বও এতো নিয়ে আসে না।

ফেসবুকের এই দাপ্তরিক বক্তব্যের বাইরেও যে আরও অনেক কথা রয়ে গেছে, যেটি বেরিয়ে আসে তাদের শারীরিক ভাষায়। ঢাকায় বা বার্সেলোনায় যখন দফায় দফায় ফেসবুকের কর্মীদের সঙ্গে আমাদের মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রীরা বৈঠক করেছেন। বৈঠকের পর আমাদের কর্তাব্যক্তিরা যেমন জোর দিয়ে জানিয়েছেন ফেসবুকের অফিস আসছে- আবার পাশেই কিন্তু নিচু স্বরে হলেও ফেসবুকের কর্মকর্তারা বলেছেন, ‘না’।

কেনো ফেসবুক এমনটা বলছে? এটা খুঁজতে গিয়ে যেটা বুঝেছি– বাংলাদেশের রেগুলেশনকে তারা কোনো অবস্থাতেই আস্থায় নিতে পারছে না। বাংলাদেশকে বরং তারা রেগুলেশনের দিক থেকে মনে করছেন লাল দাগের মধ্যে থাকা বাজার।

যতোটা জানা গেছে, ফেসবুকের ইচ্ছা বাইরে থেকে যতোটা সম্ভব বাংলাদেশে তাদের সেবা চালু রাখতে চায়। অহেতুক বাঘের থাবার সামনে পড়ার দরকার তারা মনে করছেন না।

‘প্রেস ডে’ থেকেই জেনেছি ফেসবুকের কাছে এখন এশিয়া এবং প্যাসিফিক অঞ্চলই সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। এই অঞ্চলের মধ্যে আবার ভিয়েতনামই তাদের কাছে সর্বাধিক গুরুত্ব পাচ্ছে। কারণ যতোটা বুঝতে পেরেছি উদারনীতিই পছন্দের তালিকায় ভিয়েতনামকে এক নম্বরে নিয়ে এসেছে।

শুধু ফেসবুক কোনো ভিয়েতনাম তো গার্মেন্টস, অন্যান্য ব্যবসা-বাণিজ্যেও আমাদের জন্যে এখন প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী। আর সব ক্ষেত্রে বিনিয়োগের উদারতাই ভিয়েতনামকে পছন্দের শীর্ষে রেখেছে।

আমরা কেবল যোগাযোগের জন্যে ফেসবুককে ব্যবহার করছি অন্য সবখানে তেমনটা হচ্ছে না। অনেক জায়গাতে ব্যবসা-বাণিজ্যের যোগাযোগেও ফেসবুকের সর্বোচ্চ ব্যবহার হচ্ছে। ফেসবুকের মাধ্যমেই সিউল-অকল্যান্ড-হ্যানয়ের অনেকেই এখন তাদের সামান্য আইডিয়াকে অসামান্য বৈশ্বিক ব্র্যান্ডে পরিণত করে ফেলেছেন।

অথচ আমরা কি সেভাবে চিন্তা করতে পারছি? ফেসবুকে ব্যবসা মানে আমাদের কাছে কেবল একটি পেইজ খুলে দু-চারটি জামাকাপড় বিক্রি বা পিঠা-আচার বিক্রি। ফেসবুকে ব্যবসার নামে কিন্তু লোক ঠকানোও চলছে সমান তালে।

এরই মধ্যে ফেসবুক একাধিকবার বাংলাদেশে বন্ধের খড়গে পড়েছে। হুমকি পেয়েছে বহুবার। মোবাইল ফোন অপারেটররা যাতে ফেসবুকের ক্যাশ সার্ভার ব্যবহার করতে না পারে তার জন্যেও রেগুলেটরের দিক থেকে বাঁধা আসছে।

এসব বিষয়ে আমি বরং সরকারের প্রেক্ষাপটে ফেসবুকের বিষয়টিকে দেখতে চাই উল্টো করে। কথায় কথায় বন্ধ করে দেওয়ার হুমকি না দিয়ে বরং কীভাবে ফেসবুককে সেবা এবং ব্যবসার মহাসড়ক হিসেবে ব্যবহার করা যায় সেই পদ্ধতিই বরং আমরা খুঁজে দেখতে পারি। সেটি হলে নানা ক্ষেত্রে সম্ভবনার দুয়ার আরও প্রসারিত করে ঘুরে দাঁড়াতে পারে অনেকেই।

লেখক: সাংবাদিক

[email protected]

Comments

The Daily Star  | English

Govt publishes gazette of 1,558 injured July fighters

Of them, 210 have been enlisted in the critically injured "B" category, while the rest fall under the "C" category of injured fighters

6h ago