‘কাগুজে শিক্ষকের’ বেতন নিচ্ছেন ঘুষ দাবিকারী সেই প্রধান শিক্ষক

সহকারী শিক্ষকের কাছে আট লাখ টাকা ঘুষ দাবিকারী লালমনিরহাটের কুমড়িহাট এসসি উচ্চ বিদ্যালয়ের সেই প্রধান শিক্ষক কামরুল ইসলাম বেতন ভোগ করছেন ‘কাগুজে শিক্ষক’ ওয়াহেদ আলীর।
lalmonirhat.jpg

সহকারী শিক্ষকের কাছে আট লাখ টাকা ঘুষ দাবিকারী লালমনিরহাটের কুমড়িহাট এসসি উচ্চ বিদ্যালয়ের সেই প্রধান শিক্ষক কামরুল ইসলাম বেতন ভোগ করছেন ‘কাগুজে শিক্ষক’ ওয়াহেদ আলীর।

গত বছরের সেপ্টেম্বর মাসে এমপিওভুক্ত হওয়া শিক্ষক ওয়াহেদ আলী একদিনের জন্যও বিদ্যালয়ে আসেননি। তার কাছে নেই কোনো নিয়োগপত্রও। এমপিওভুক্ত এই শিক্ষক গত ৬ বছর ধরে জেলার কালীগঞ্জ উপজেলার ‘আমার বাড়ি আমার খামার’ প্রকল্পের মাঠ সহকারী হিসেবে কর্মরত আছেন। কিন্তু গেল চার মাস ধরে ব্যাংক থেকে উত্তোলন করা হয়েছে তার বেতন।

কালীগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) রবিউল হাসান বিষয়টি নিশ্চিত করে বলেন, “ওয়াহেদ আলী মাঠকর্মী হিসেবে এ উপজেলার ‘আমার বাড়ি, আমার খামার’ প্রকল্পে কর্মরত রয়েছেন। সহকারী শিক্ষক হিসেবে তার যোগদানের বিষয়টি আমার জানা নেই।”

একই ব্যক্তির দুই পদে থেকে পৃথক বেতন-ভাতা গ্রহণের সুযোগ নেই এবং তা বিধি বহির্ভূত বলেও জানান তিনি।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ওই বিদ্যালয়ের কয়েকজন শিক্ষক জানান, সহকারী শিক্ষক ওয়াহেদ আলী লালমনিরহাটের কালীগঞ্জ উপজেলার গোড়ল ইউনিয়নের দুলালী গ্রামের আব্দুস সোবহানের ছেলে। তিনি আদিতমারী উপজেলার কুমড়ীরহাট এসসি উচ্চ বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক (বিজ্ঞান) এবং কালীগঞ্জ উপজেলার ‘আমার বাড়ি আমার খামার’ প্রকল্পের মাঠ সহকারী পদে কর্মরত। তারা এই শিক্ষককে কোনদিনই বিদ্যালয়ে আসতে দেখেননি। শুধু তার নাম দেখা যায় এমপিও শিটে আর ব্যাংক থেকে উত্তোলনকৃত বেতন শিটে।

তারা আরও জানান, প্রধান শিক্ষক নিজেই কাগজপত্র তৈরি করে ওয়াহেদ আলীর নামে এমপিও’র জন্য আবেদন করেছেন। এখন বেতন উত্তোলন করে আত্মসাৎ করছেন। বিষয়টি জানাজানি হয়ে গেলে ভুয়া কাগজ তৈরি করে অদৃশ্য শিক্ষক ওয়াহেদ আলীকে চাকরি থেকে অব্যাহতি দিতে পারেন। সব কিছু প্রধান শিক্ষকের ইচ্ছামাফিক চলছে। টাকার বিনিময়ে তিনি সবই করতে পারেন।

২০১৪ সালের জানুয়ারি মাসে ‘আমার বাড়ি আমার খামার’ প্রকল্পে মাঠ সহকারী হিসেবে কালীগঞ্জ উপজেলায় যোগদান করে নিয়মিত বেতন-ভাতা পাচ্ছেন ওয়াহেদ আলী। সেখানেই নিয়মিত অফিস করছেন তিনি। হঠাৎ গত বছরের সেপ্টেম্বর মাসে কুমড়ীরহাট এসসি উচ্চ বিদ্যালয়ের এমপিও তালিকায় সহকারী শিক্ষক পদে বেতন চলে আসে ওয়াহেদ আলীর। সব শিক্ষক যথারীতি অবাক হলেও প্রধান শিক্ষক বেশ উৎফুল্লই ছিলেন। তার ইনডেক্স নম্বর ‘১১৫৫১০০’ এবং সোনালী ব্যাংক আদিতমারী শাখার হিসাব নম্বর ‘১০১৫৪৩৭’।

ওয়াহেদ আলীর দাবি, তিনি ওই বিদ্যালয়ে কখনোই পাঠদান করেননি। এমনকি তিনি যোগদানও করেননি। স্কুলের প্রধান শিক্ষক কামরুল ইসলাম তার কাছ থেকে সার্টিফিকেটসহ প্রয়োজনীয় কাগজপত্র নিয়েছিলেন।

দ্য ডেইলি স্টারকে তিনি বলেন, “আমি আমার বাড়ি আমার খামার’ প্রকল্পে ৬ বছর ধরে চাকরি করছি। আমি কোনো বিদ্যালয়ে যোগদান করিনি।”

“কুমড়ীরহাট এসসি উচ্চ বিদ্যালয়ে কিভাবে আমার নামে এমপিও এসেছে এবং ব্যাংক হিসাব নম্বর তৈরি হয়েছে, তা আমার জানা নেই,” এমনটি জানিয়ে যারা এমপিওতে বেতন অনুমোদন দিয়েছেন তাদের সঙ্গে কথা বলার পরামর্শ দেন তিনি।

প্রধান শিক্ষক কামরুল ইসলাম স্বাক্ষরিত বেতন তালিকায় উল্লেখ করেছেন, সহকারী শিক্ষক ওয়াহেদ আলী নিয়মিত বিদ্যালয়ে পাঠদান করাচ্ছেন। কিন্তু বিদ্যালয়ের অন্য শিক্ষক, শিক্ষার্থী ও স্থানীয়রা কোনদিনই স্কুল শিক্ষক ওয়াহেদ আলীকে সিডিউলে দেখতে পাননি। কারণ ওয়াহেদ আলী কালীগঞ্জ উপজেলার ‘আমার বাড়ি আমার খামার’ প্রকল্পের একজন নিয়মিত কর্মকর্তা। আর সেখানে রয়েছে তার শতভাগ উপস্থিতি।

তারপরও কুমড়ীরহাট এসসি উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক কামরুল ইসলাম দাবি করেছেন, “ওয়াহেদ আলী এ বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক হিসেবে রয়েছেন এবং নিয়মিত পাঠদানও করাচ্ছেন।”

এ বিষয়ে জেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার আবুল কালাম আজাদ বলেন, “একই ব্যক্তির দুই প্রতিষ্ঠানে একই সঙ্গে চাকরি আর বেতন-ভাতা গ্রহণের কোনো সুযোগ নেই।”

বিষয়টি অবগত হয়েছেন জানিয়ে তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের নিশ্চয়তা দিয়েছেন তিনি।

আরও পড়ুন:

থানায় জিডি করেছেন লালমনিরহাটের ঘুষ দিতে না পারা সেই শিক্ষক

‘এমপিও ভুক্তির খরচ’ ৮ লাখ টাকা দিতে না পারা এক শিক্ষকের কান্না

Comments

The Daily Star  | English

One month of interim govt: Yunus navigating thru high hopes

A month ago, as Bangladesh teetered on the brink of chaos after the downfall of Sheikh Hasina, Nobel Laureate Muhammad Yunus returned home to steer the nation through political turbulences.

6h ago