পলিথিনে মোড়ানো পোস্টারে হাত পড়ছে না
নির্বাচনী প্রচারণায় পলিথনে মোড়ানো (লেমিনেটেড) পোস্টার তৈরি ও ব্যবহারে হাইকোর্টের নিষেধাজ্ঞার পরও রাজধানী জুড়ে ঝুলছে পরিবেশের জন্য ক্ষতিকর এ ধরনের পোস্টার।
ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের কয়েকটি ওয়ার্ড ঘুরে দেখা গেছে, এখনো পলিথিনে মোড়ানো পোস্টারগুলো নামানো হয়নি। নষ্ট হয়ে যাওয়ার হাত থেকে বাঁচাতে পোস্টার লেমিনেটেড করার কথা জানিয়েছেন বেশ কয়েকজন কাউন্সিলর প্রার্থী।
গতকাল (২৭ জানুয়ারি) ডিএসসিসির অতিরিক্ত প্রধান বর্জ্য ব্যবস্থাপনা কর্মকর্তা খন্দকার মিলাতুল ইসলাম জানান, “নির্বাচন কমিশনের ম্যাজিস্ট্রেট অথবা পরিবেশ অধিদপ্তর লেমিনেটেড পোস্টারগুলো নামিয়ে ফেললে আবর্জনা হিসেবে সেগুলো মাতুয়াইলে নিয়ে যাওয়া হবে।”
তিনি আরও জানান, “যেহেতু পলিথিন পোড়ানো স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর তাই আমরা পোস্টারগুলো মাটিতে পুঁতে ফেলব।”
তবে, নির্বাচন শেষ না হলে পোস্টার সরানোর এখতিয়ার সিটি করপোরেশন রাখে না বলে জানান তিনি।
এদিকে, গত ২০ জানুয়ারি পরিবেশ অধিদপ্তরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক মল্লিক আনোয়ার হোসেন দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, “নির্বাচন যেহেতু ইসির অধীনে, তাই আমরা অনুমতি ছাড়া কোনো ব্যবস্থা নিতে পারব না।”
লেমিনেটেড পোস্টার ব্যবহার প্রসঙ্গে নির্বাচন কমিশনার রফিকুল ইসলামের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি জানান, ইসির নিয়মে কোনো বাধ্যবাধকতা নেই। পরিবেশ অধিদপ্তর আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নিতে পারে। ইসি সেখানে হস্তক্ষেপ করবে না।”
এদিকে, নির্বাচনে ব্যয়ের হিসাব প্রকাশের সময় ১৪০ জন মেয়র ও ৭৭৫ জন কাউন্সিলর প্রার্থী প্রায় ৫০ লাখ পোস্টার ছাপানোর কথা জানান।
ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন (ডিএসসিসি)
গুলশান থানার ১৯ নম্বর ওয়ার্ডের আওয়ামী লীগ সমর্থিত কাউন্সিলর প্রার্থী মফিজুর রহমান জানান, প্রচারণার জন্য তিনি ৫০ হাজার পোস্টার ছাপিয়েছেন। এর মধ্যে ১০ হাজার পোস্টার লেমিনেটেড।
দ্য ডেইলি স্টারকে তিনি বলেন, “আমি আজকে (২৭ ডিসেম্বর) সন্ধ্যার মধ্যেই সমস্ত পলিথিনে মোড়ানো পোস্টার সরিয়ে ফেলব। সরানোর প্রক্রিয়া চলছে।”
এদিকে, বাড্ডার ৩৮ নম্বর ওয়ার্ডের বিএনপি সমর্থিত প্রার্থী জাহাঙ্গীর মোল্লা জানান, তিনি কয়েক হাজার পোস্টার ছাপিয়েছেন যার মধ্যে চার হাজার পোস্টার লেমিনেটেড। তার বেশিরভাগ পোস্টারই প্রতিদ্বন্দ্বী আওয়ামী লীগ প্রার্থীর সমর্থকরা ছিঁড়ে ফেলেছে বলে অভিযোগ করেন তিনি।
শিগগিরই অবশিষ্ট লেমিনেটেড পোস্টারগুলোকে সরিয়ে ফেলবেন বলে জানান তিনি।
ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন (ডিএনসিসি)
দ্বিতীয়বারের মতো সিটি নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন মুগদা থানা এলাকার ২২ নম্বর ওয়ার্ডের বর্তমান কাউন্সিলর শফিকুল ইসলাম শামীম। আওয়ামী লীগ সমর্থিত এ প্রার্থী জানান, তিনি এখন পর্যন্ত পাঁচ হাজার পোস্টার ছাপিয়েছেন যার মধ্যে এক হাজার পোস্টার পলিথিনে মোড়ানো।
দ্য ডেইলি স্টারকে তিনি বলেন, “আমি লেমিনেটেড পোস্টারগুলো নামিয়ে আগামীকালের (২৮ জানুয়ারি) মধ্যে কাগজের পোস্টার টানাব।”
যাত্রাবাড়ী থানার ৬৪ নং ওয়ার্ডের বিএনপি সমর্থিত কাউন্সিলর প্রার্থী মো. আহসানউল্লাহ জানান, নির্বাচনী প্রচারণার জন্য তিনি কয়েক হাজার লেমিনেটেড পোস্টার ছাপিয়েছেন। হাইকোর্টের নির্দেশের পর নতুন করে এ ধরনের পোস্টার তিনি ছাপাননি।
হাইকোর্টের নির্দেশ
গত ২২ জানুয়ারি পরিবেশ রক্ষায় সিটি নির্বাচনে পলিথিনে মোড়ানো পোস্টার তৈরি ও ব্যবহার বন্ধের নির্দেশ দেন হাইকোর্ট। সারাদেশে পলিথিনে মোড়ানো পোস্টার তৈরি ও ব্যবহার কেন নিষিদ্ধ করা হবে না জানাতে রুল জারি করেন আদালত।
বন ও পরিবেশ মন্ত্রণালয়ের সচিব, নির্বাচন কমিশন সচিব, স্বাস্থ্যসচিব ও দুই সিটি করপোরেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তাসহ বিবাদীদের চার সপ্তাহের মধ্যে রুলের জবাব দিতে বলা হয়।
দ্য ডেইলি স্টারে ‘লেমিনেটেড পোস্টার ইন সিটি পোলস: এ বিগ থ্রেড টু এনভায়রনমেন্ট’ শিরোনামে সংবাদ প্রকাশের পর বিচারপতি এম ইনায়েতুর রহিম ও বিচারপতি মো. মোস্তাফিজুর রহমানের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ রুলসহ স্বতঃপ্রণোদিত আদেশ দেন।
Comments