অথচ এই রকিবুলকে চোখ রাঙিয়ে খেলা বন্ধ করতে বলেছিলেন বাবা!
পড়াশোনায় মন ছিল না। সারাদিন পড়ে থাকতেন মাঠে। কিন্তু ছেলের খেলাধুলায় আবার সায় ছিল না বাবা-মায়ের। রকিবুল হাসানকে তাই শুনতে হতো গালমন্দ। বিশেষ করে বাবার ভয়ে সারাক্ষণ তটস্থ থাকতে হতো তাকে। কিন্তু খেলায় যার এত টান, তাকে আর আটকায় কে। গৃহ শিক্ষকের বেতন সরিয়ে ভর্তি হয়েছিলেন ক্রিকেট কোচিংয়ে। সেই ক্রিকেটই তাকে এনে দিয়েছে বিশ্ব দরবারে। অনূর্ধ্ব-১৯ বিশ্বকাপের কোয়ার্টার ফাইনালে ১৯ রানে ৫ উইকেট নিয়ে বাংলাদেশকে সেমিফাইনালে তুলেছেন এই স্পিনার।
বৃহস্পতিবার পচেফস্ট্রমে দক্ষিণ আফ্রিকাকে ১০৪ রানের বিশাল ব্যবধানে হারিয়েছে বাংলাদেশের যুবারা। ইতিহাসে মাত্র দ্বিতীয়বারের মতো লাল-সবুজ প্রতিনিধিরা উঠেছে যুব বিশ্বকাপের সেমিফাইনালে। তার বড় কৃতিত্ব যে বাঁহাতি স্পিনার রকিবুলের।
কোয়ার্টার ফাইনালের মতো মঞ্চে তার বোলিং ফিগার- ৯.৩-০-১৯-৫! তার বাঁহাতি স্পিনে রীতিমতো সর্ষে ফুল দেখেছে প্রোটিয়া ব্যাটসম্যানরা। আগে ব্যাট করে ২৬১ রান করা বাংলাদেশ দক্ষিণ আফ্রিকাকে আটকে দিয়েছে মাত্র ১৫৭ রানে।
নবম ওভারে বল হাতে পেয়েছিলেন। মূলত আঁটসাঁট বোলিংয়ের জন্যই সুনাম তার। ওই ওভারে ১ রান দেওয়ার পর আবার ১৪তম ওভারে আসেন তিনি। এবার ফ্লাইটে প্রলুব্ধ করে ব্যাটসম্যানদের ফাঁদে ফেলেন তিনি। ওই ওভারেই ফিরিয়ে দেন জোনাথন বার্ডকে। পরের ওভারে এসে দারুণ ভেতরে ঢোক বলে বোল্ড করে দেন ব্রেইস পারসনকে। তার জোড়া আঘাতে থতমত খেয়ে যায় প্রোটিয়ারা। রকিবল আবার বল পান ৩তম ওভারে, এসেই পান সাফল্য। স্বাগতিকদের শেষটাও মুড়ে দেন তিনি। এমন ঝলকের পর অনুমিতভাবেই ম্যাচ সেরাও হয়েছেন তিনি। এভাবে মাত করার পর ভীষণ উচ্ছ্বসিত প্রতিক্রিয়া তার, 'অসম্ভব ভালো লাগছে। চেষ্টা করেছি উইকেট নিতে, নিজের সেরাটা দিতে। আল্লাহর রহমতে সব কিছু ঠিকমতো হয়েছে।'
সাফল্যের আলোয় ভাসছেন, অথচ আরেকটু এদিক সেদিক হলে ক্রিকেটেই আসা হতো না তার। গৃহশিক্ষকের টাকা সরিয়ে ভর্তি হয়েছিলেন ওয়াহিদুল গনির অঙ্কুর ক্রিকেট একাডেমিতে। এমন কাজ করায় বাবা তাকে পিটুনিও দিতে চেয়েছিলেন। পরে যখন খেলায় ভালো করতে থাকেন, পরিবারও মেনে নেয় তা। এখন বিশ্বকাপের মতো আসরে নায়ক বনে যাওয়ার পর টিভি পর্দায় ছেলের উল্লাস দেখে সেই বাবা-মাই নিশ্চিতভাবে ভীষণ গর্বিত।
Comments