কুমড়াবড়ি বানিয়ে স্বাবলম্বী হচ্ছেন নাটোরের নারীরা

বছরের অক্টোরর থেকে ফেব্রুয়ারি, এ সময়ে বেশ কঠিন সময় পার করতে হয় নাটোরের দরিদ্র মানুষগুলোকে। কারণ সেসময় দিনমজুরদের তেমন কোনো কাজ থাকে না।
Natore Kumrabori
নাটোরের নলডাঙ্গা উপজেলার চেউখালি গ্রামের এক নারী কুমড়াবড়ি শুকাচ্ছেন। ছবি: স্টার

বছরের অক্টোরর থেকে ফেব্রুয়ারি, এ সময়ে বেশ কঠিন সময় পার করতে হয় নাটোরের দরিদ্র মানুষগুলোকে। কারণ সেসময় দিনমজুরদের তেমন কোনো কাজ থাকে না।

তবে নাটোরের নলডাঙ্গা উপজেলার চেউখালি গ্রামের বাসিন্দাদের গল্পটি ভিন্ন। এই গ্রামের লোকেরা বিশেষ করে নারীরা কুমড়াবড়ি তৈরি করে তা বিক্রি করেন। যে কারণে বেশ স্বচ্ছল জীবন যাপন করছেন তারা।

নাটোরের নলডাঙ্গা উপজেলার চেউখালী গ্রামের অনেক নারীর কাছে কুমড়াবড়ি বানানো এখন জীবিকার একমাত্র পথ। অনেকের কাছে আবার আয় বাড়ানোর মাধ্যম।

চেউখালী গ্রামের অন্তত ৩০ পরিবার এখন মাসকলাই ডাল, কুমড়া, চালের গুড়া ও কালিজিরা দিয়ে কুমড়াবড়ি তৈরিতে ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছেন।

শীতে নারীরা আঙুলের দক্ষ ছোঁয়ায় ছোট-ছোট বলের মতো কুমড়াবড়ি তৈরি করেন। পরে সেগুলো রোদে শুকাতে দেন। কুমড়াবড়ি দিয়ে রান্না করা তরকারি স্থানীয়দের পাশাপাশি অন্যান্য জেলার মানুষের কাছেও বেশ প্রিয়।

চেউখালী গ্রামের বাসিন্দা শেফালি রানী সরকার বলেছেন, “আগে গৃহস্থালি কাজ শেষে বাড়িতে অলস সময় কাটাতাম। এখন কুমড়াবড়ি তৈরি করে বাচ্চাদের পড়াশোনা ও সংসারের আয়ে অবদান রাখছি।”

তিনি আরও বলেন, “কুমড়াবড়ি তৈরি করা সহজ কাজ না। ঢেঁকি বা পাটায় কুমড়া ভালো করে পিষে মাসকলাই ডাল ভিজিয়ে রাখতে হয়। পরে ডালের সঙ্গে পিষে ফেলা কুমড়া মিশিয়ে রাখতে হয়। দুই কেজি মাসকলাই ডালের সঙ্গে আড়াই কেজি আকারের কুমড়া ও কিছু কালিজিরা মেশাতে হয়।”

একই গ্রামের কৃষ্ণ খামারু জানিয়েছেন, প্রতি কেজি কুমড়াবড়ি বাজারে পাইকারদের কাছে ২০০ থেকে ২৫০ টাকা দরে বিক্রি করা হয়। এছাড়া, খুচরা ব্যবসায়ী ও সাধারণ ক্রেতাদের কাছে প্রতি কেজি ২৫০ থেকে ৩০০ টাকায় বিক্রি করা হয়।

তিনি আরও জানিয়েছেন, ১০ কেজি মাসকলাইয়ের ডাল দিয়ে কুমড়াবড়ি তৈরি করতে খরচ পড়ে ৯০০ টাকা। যা সর্বনিম্ন দেড় হাজার টাকায় বিক্রি করা যায়।

ওই গ্রামেরই বাসিন্দা সূচিত্রা রানী সরকার। তিনি বলেছেন, “প্রতিকূল আবহাওয়ার কারণে যখন সূর্য ওঠে না, তখন কুমড়াবড়ি নষ্ট হয়ে যায়। এতে লোকসানে পড়তে হয়। তাই আমরা প্রচুর পরিমাণে কুমড়াবাড়ি তৈরি করি না।”

নাটোর সদর উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. মাহবুব হোসেন জানিয়েছেন, মাসকলাই ডাল, কুমড়া ও কালিজিরাসহ যেসব উপাদান দিয়ে কুমড়াবড়ি বানানো হয়, সবগুলোই পুষ্টিকর। যদি স্বাস্থ্যকর উপায়ে কুমড়াবড়ি তৈরি করা হয়, তবে তা খুবই পুষ্টিকর হবে।

চেউখালি গ্রামের কুমড়াবাড়ির কারিগরদের উদ্বুদ্ধ করতে উপজেলা প্রশাসন থেকে বিশেষ প্রকল্প গ্রহণের পরিকল্পনা রয়েছে বলে জানিয়েছেন নলডাঙ্গা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) সাকিব আল রাব্বী।

Comments

The Daily Star  | English

One month of interim govt: Yunus navigating thru high hopes

A month ago, as Bangladesh teetered on the brink of chaos after the downfall of Sheikh Hasina, Nobel Laureate Muhammad Yunus returned home to steer the nation through political turbulences.

10h ago