চোখ ধাঁধানো ট্রিপল সেঞ্চুরিতে ইতিহাসে তামিম

tamim iqbal
ছবি: ফিরোজ আহমেদ

১৩ বছর আগে ট্রিপল সেঞ্চুরি করে রেকর্ড গড়েছিলেন রকিবুল হাসান। বাংলাদেশের প্রথম ক্রিকেটার হিসেবে প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটে তিনশো পেরোনো ব্যক্তিগত ইনিংস খেলেছিলেন তিনি। এতদিন দেশের একমাত্র ট্রিপল সেঞ্চুরিয়ান হিসেবে তার নামই উচ্চারিত হতো। তবে সেই কীর্তি আর রকিবুলের একার থাকল না। বাংলাদেশের দ্বিতীয় ক্রিকেটার হিসেবে প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটে ট্রিপল সেঞ্চুরি করলেন তামিম ইকবাল। চোখ ধাঁধানো ইনিংস খেলে বাঁহাতি তারকা জায়গা করে নিলেন ইতিহাসের পাতায়।  রকিবুলের ৩১৩ রান ছাড়িয়ে ৩৩৪ রান করে দেশের হয়ে প্রথম শ্রেণিতে সর্বোচ্চ রানের ইনিংসের রেকর্ড গড়েছেন তিনি।

রবিবার (২ ফেব্রুয়ারি) মিরপুর শের-ই-বাংলা স্টেডিয়ামে প্রথম শ্রেণির ক্যারিয়ারের প্রথম ত্রিশতক করার অনন্য স্বাদ নিয়েছেন তামিম। ইসলামি ব্যাংক পূর্বাঞ্চলের হয়ে ওয়ালটন মধ্যাঞ্চলের বিপক্ষে ৪০৭ বলে ট্রিপল সেঞ্চুরি করেছেন দেশসেরা ওপেনার, ভাগ বসিয়েছেন রকিবুলের কীর্তিতে। তিনশো রানে পৌঁছাতে মেরেছেন ৪০ চার।

শুভাগত হোমের করা ১৩৫তম ওভারের দ্বিতীয় বলটি অন সাইডে ঠেলে দিয়ে দৌড়ে এক রান নিয়ে রেকর্ডের মালিক হয়ে যান তামিম। তবে খুব বেশি উদযাপন করেননি তিনি। কেবল ব্যাটটা সামান্য উঁচিয়েছেন। আগের ট্রিপল সেঞ্চুরিয়ান রকিবুল এই ম্যাচে তামিমের প্রতিপক্ষ দলে। অন্যদের সঙ্গে তিনিও ছুটে গিয়ে অভিনন্দন জানিয়েছেন তামিমকে।

তামিমের এমন রাজকীয় ব্যাটিংয়ে বিসিএলের প্রথম রাউন্ডের ম্যাচের তৃতীয় দিনে ২ উইকেটে ৫৫৫ রান করে ইনিংস ঘোষণা করেছে পূর্বাঞ্চল। ৪২৬ বলে ৪২ চার আর ৩ ছক্কায় তামিম অপরাজিত থেকে গেছেন ৩৩৪ রানে। প্রথম শ্রেণিতে বাংলাদেশের কোনো ব্যাটসম্যানের খেলা এটাই সর্বোচ্চ রানের ইনিংস।

২০০৭ সালের ২১ মার্চ বাংলাদেশের প্রথম ব্যাটসম্যান হিসেবে ঘরোয়া প্রথম শ্রেণিতে ট্রিপল সেঞ্চুরি করেছিলেন রকিবুল। ফতুল্লায় জাতীয় লিগের ম্যাচে বরিশাল বিভাগের হয়ে সিলেট বিভাগের বিপক্ষে ৩১৩ রানের ঝলমলে ইনিংস খেলে অপরাজিত ছিলেন তিনি। এরপর গেল এক যুগেরও বেশি সময়ে নাসির হোসেন, মার্শাল আইয়ুব, মোসাদ্দেক হোসেন সৈকত, শামসুর রহমান, লিটন দাসরা সম্ভাবনা জাগিয়েছিলেন। কিন্তু কেউই ট্রিপল সেঞ্চুরি করতে পারেননি, পারেননি এক সময় বাংলাদেশ জাতীয় দলে খেলা রকিবুলের রেকর্ড স্পর্শ করতে বা ভাঙতে। তবে তামিমকে আটকানো যায়নি।

আগের দিনের ২৮১ বলে ২২২ রান নিয়ে খেলতে নামেন তামিম, ব্যাটিং শুরু করেন একই রকমের আগ্রাসী মেজাজে। দিনের তৃতীয় বলেই শহিদুল ইসলামকে চার মেরে বুঝিয়ে দেন, মধ্যাঞ্চলের বোলারদের উপরে ছড়ি ঘোরানো জারি রাখবেন তিনি। পূর্বাঞ্চলের ইনিংসের ১০৭তম ওভারের শেষ বলে সিঙ্গেল নিয়ে আড়াইশো রানে পৌঁছে যান তামিম। ৩৪ চারের সাহায্যে এই মাইলফলক স্পর্শ করতে তিনি খেলেন ৩১৫ বল। আর মধ্যাহ্ন বিরতিতে যাওয়ার আগে তিনি পৌঁছে যান ২৭৯ রানে।

আড়াইশো পূরণ করার পর আগ্রাসী মনোভাব সরিয়ে ধীরে-সুস্থে ব্যাট করেন তামিম। ট্রিপল সেঞ্চুরি করার দিকে নজর ছিল বলেই হয়তো। তামিম নিজেকে গুটিয়ে নিলেও এসময়ও শুভাগত, মোস্তাফিজুর রহমান, মুকিদুল ইসলামরা তার স্বচ্ছন্দ গতিতে বাধা দিতে পারেননি। সিঙ্গেল নিয়ে নিয়ে তিনি এগোতে থাকেন ব্যক্তিগত লক্ষ্যের দিকে। শেষ পর্যন্ত ছুঁয়ে ফেলেন ত্রিশতক। শুরুতে মারমুখী ভঙ্গিতে থাকা তামিম ২৫০ থেকে ৩০০ রানে পৌঁছাতে খেলেন ৯২ বল।

প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটে তামিমের আগের সর্বোচ্চ ছিল বাংলাদেশ জাতীয় দলের হয়ে পাকিস্তানের বিপক্ষে। ২০১৫ সালে খুলনা টেস্টের দ্বিতীয় ইনিংসে ২০৬ রান করেছিলেন তিনি। আর জাতীয় দলের বাইরে প্রথম শ্রেণিতে তার আগের সর্বোচ্চ ইনিংস ছিল জাতীয় লিগে। ২০১২ সালে চট্টগ্রাম বিভাগের হয়ে ১৯২ রান করেছিলেন তিনি।

তামিমের ইনিংসের খুঁটিনাটি:

৫০ রান- ৭৬ বল- ৭ চার

১০০ রান- ১২৬ বল- ১৪ চার

১৫০ রান- ১৮০ বল- ২১ চার

২০০ রান- ২৪২ বল- ২৯ চার

২৫০ রান- ৩১৫ বল- ৩৪ চার

৩০০ রান- ৪০৭ বল- ৪০ চার।

Comments

The Daily Star  | English

JnU students vow to stay on streets until demands met

Jagannath University (JnU) students tonight declared that they would not leave the streets until their three-point demand is fulfilled

1h ago