লেমিনেটেড পোস্টার অপসারণ ও পরবর্তী যুদ্ধ

পরিবেশ ও জনস্বাস্থ্যের আরও ক্ষতি না করে কয়েক টন লেমিনেটেড নির্বাচনী পোস্টার অপসারণ এবং পরবর্তী ব্যবস্থা একটি বড় উদ্বেগের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।
poster
একটি লেমিনেটেড পোস্টার খোলা ড্রেনে ভাসছে। ছবি: রাশেদ সুমন

পরিবেশ ও জনস্বাস্থ্যের আরও ক্ষতি না করে কয়েক টন লেমিনেটেড নির্বাচনী পোস্টার অপসারণ এবং পরবর্তী ব্যবস্থা  একটি বড় উদ্বেগের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।

ঢাকার দুই সিটি করপোরেশন গতকাল থেকে পোস্টারগুলো অপসারণ শুরু করেছে। এসব পোস্টারের মধ্যে বেশির ভাগই অপচনশীল প্লাস্টিকে লেমিনেটিং করা। ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন পোস্টারগুলো অপসারণ করতে তাদের এক সপ্তাহের বেশি সময় লাগবে।

কর্মকর্তাদের কাছে জানা যায়, ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন (ডিএসসিসি) এগুলো মাতুয়াইলের ভাগাড়ে ফেলার পরিকল্পনা করছে। আর ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন (ডিএনসিসি) খোঁজ করছে এমন প্রতিষ্ঠানের যারা এগুলো পুনর্ব্যবহার করবে।

বিশেষজ্ঞদের মতে লেমিনেটেড পোস্টারগুলো পুরোপুরিভাবে পুনর্ব্যবহার করা সম্ভব হবে না।

নগরীর বিভিন্ন রাস্তায় এরই মধ্যে খুলে ফেলা পোস্টারগুলো জঞ্জাল হয়ে আছে। আর কিছু পোস্টারের ঠাঁই হয়েছে খোলা ড্রেনগুলোতে।

গত ১ ফেব্রুয়ারি ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি করপোরেশন নির্বাচনের আগে প্রচারণার জন্য ঢাকার আকাশ অবরুদ্ধ হয়ে গিয়েছিলো পোস্টারে।

poster
গতকাল কাকরাইলে রাস্তার পাশে এভাবেই সিটি করপোরেশনের কর্মীরা সিটি নির্বাচনের পোস্টারগুলো স্তূপ করে রেখেছে। ছবি: রাশেদ সুমন

পরিবেশবিদরা এসব লেমিনেটেড পোস্টার পরবর্তীতে কী হবে তা নিয়ে তাদের উদ্বেগ প্রকাশ করেন। উচ্চ আদালত ২২ জানুয়ারি লেমিনেটেড পোস্টার তৈরি ও প্রদর্শন বন্ধ করার নির্দেশ দিয়েছিলেন।

ইকো-সোশ্যাল ডেভেলপমেন্ট অর্গানাইজেশন (ইএসডিও) গত মাসে জানিয়েছিলো নির্বাচনী প্রচারণার কারণে প্রায় দুই হাজার ৪৭২ টন প্লাস্টিক বর্জ্য উৎপন্ন হবে।

ডিএসসিসির প্রধান বর্জ্য ব্যবস্থাপনা কর্মকর্তা এয়ার কমোডর জাহিদ হোসেন দ্য ডেইলি স্টারকে বলেছেন, “আমরা নির্বাচনের পরদিন সকাল থেকেই পোস্টারগুলো অপসারণ করতে শুরু করেছি। তবে আমার মনে হয় এটা শেষ করতে ৮ থেকে ১০ দিন সময় লাগবে।”

তিনি বলেন, পোস্টারগুলোর মধ্যে বেশ কিছু শুধুই কাগজের। যদি ভাঙ্গারি সংগ্রহকারীরা এসব নিয়ে যায় এবং যারা কাগজের ব্যাগ তৈরি করে তাদের কাছে বিক্রি করে তাহলে তা খুবই ভালো হবে।

ডিএনসিসির মুখপাত্র এএসএম মামুন জানিয়েছেন, তারা গতকাল ছয়টি এলাকার পোস্টার অপসারণ করেছেন।

দ্য ডেইলি স্টারকে তিনি বলেন, “আমাদের দুই হাজার ৮৫০ জন পরিচ্ছন্ন কর্মী কাজ করছেন। আশা করি খুব শিগগিরই সব পোস্টার অপসারণ করতে পারবো।”

এএসএম মামুন আরও বলেন, “পরিবেশের কথা বিবেচনা করে আমরা এগুলো ফেলে দিচ্ছি না বা পুড়িয়ে ফেলছি না। এগুলো পুনর্ব্যবহারে আগ্রহী প্রতিষ্ঠানের খোঁজ করছি।”

ইএসডিওর সাধারণ সম্পাদক শাহরিয়ার হোসেন বলেছেন, লেমিনেটেড পোস্টারগুলো ভাগাড়ে বা অন্য কোথাও ফেললে পচবে না।

তিনি বলেন, “এগুলো পুনর্ব্যবহারযোগ্য না। পরিচয়পত্রের মতো কিছু তৈরিতে পিভিসি বা পলিভিনাইল ক্লোরাইড আংশিক ভাবে পুনর্ব্যবহারযোগ্য হতে পারে। তবে (পোস্টারগুলোর) ডাবল লেয়ার প্লাস্টিক পুনর্ব্যবহারযোগ্য না।”

poster
সিটি করপোরেশনের পরিচ্ছন্ন কর্মীরা রাস্তা থেকে পোস্টার সরাতে ব্যস্ত। নির্বাচন কমিশন সিটি নির্বাচনের প্রার্থীদের আগামী ২৪ ঘণ্টার মধ্যে সমস্ত পোস্টার এবং অন্যান্য প্রচারণা সামগ্রী সরানোর নির্দেশ দিয়েছে। ছবি: রাশেদ সুমন

যোগাযোগ করা হলে পরিবেশ অধিদফতরের মহাপরিচালক একেএম রফিক আহাম্মেদ বলেছেন, তিনি জানেন না যে লেমিনেটেড পোস্টারগুলো পুনর্ব্যবহারযোগ্য না।

তিনি আরও জানান, তাঁরা বিষয়টি নিয়ে নির্বাচন কমিশনের কাছে চিঠি দিয়েছেন।

তিনি বলেন, “আমরা স্থানীয় সরকার বিভাগকে বিষয়টি জানিয়েছি এবং চিঠির অনুলিপি সিটি করপোরেশনগুলোতে পাঠিয়েছি। যাতে তারা পরিবেশবান্ধব পদ্ধতিতে পোস্টারগুলোর ব্যবস্থা করতে পারে।”

তিনি আরও বলেন, “আমরা নির্বাচন কমিশনকে অনুরোধ করেছি ভবিষ্যতে নির্বাচনী প্রচারণার বিধিতে এই বিষয়টি অন্তর্ভুক্ত রাখতে। পোস্টারের বদলে তথ্য প্রযুক্তি এবং ডিজিটাল প্রদর্শনীর মাধ্যমে নির্বাচনী প্রচারণা চালানোর সুপারিশ করেছি।”

Comments

The Daily Star  | English

One month of interim govt: Yunus navigating thru high hopes

A month ago, as Bangladesh teetered on the brink of chaos after the downfall of Sheikh Hasina, Nobel Laureate Muhammad Yunus returned home to steer the nation through political turbulences.

6h ago