বিজয়ী আওয়ামী লীগের ১৭ বিতর্কিত প্রার্থী

ঢাকা সিটি করপোরেশন নির্বাচনে আওয়ামী লীগ সমর্থিত কমপক্ষে ১৭ জন বিতর্কিত প্রার্থী ওয়ার্ড কাউন্সিলর নির্বাচিত হয়েছেন।

ঢাকা সিটি করপোরেশন নির্বাচনে আওয়ামী লীগ সমর্থিত কমপক্ষে ১৭ জন বিতর্কিত প্রার্থী ওয়ার্ড কাউন্সিলর নির্বাচিত হয়েছেন।

এসব প্রার্থীর বিরুদ্ধে জমি দখল, চাঁদাবাজি এবং আধিপত্য বিস্তারে পেশী শক্তির ব্যবহারসহ আইনবিরুদ্ধ কর্মকাণ্ডে জড়িত থাকার অভিযোগ রয়েছে। সম্প্রতি এসব অভিযোগের কারণে তারা সমালোচিত ছিলেন।

ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ এসব বিতর্কিত প্রার্থীদের সমর্থন দিয়েছে। যদিও দলটি আইনবিরুদ্ধ কর্মকাণ্ডে জড়িত থাকার অভিযোগে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের ১৯ কাউন্সিলর এবং দক্ষিণ সিটির ২৩ কাউন্সিলরকে এবার মনোনয়ন দেয়নি।

দুই সিটিতে এবার বেশ কয়েকজন নতুন প্রার্থীকে মনোনয়ন দিয়েছিল আওয়ামী লীগ।

উত্তর সিটির ১৯ জন নতুন প্রার্থীর মধ্যে পাঁচজন নির্বাচিত হয়েছেন বলে উত্তর দলীয় সূত্র জানিয়েছে।

দক্ষিণ সিটির দৃশ্য আবার ভিন্ন। সেখানে বেশিরভাগ নতুন প্রার্থীই নির্বাচিত হয়েছেন।

আওয়ামী লীগের ঘনিষ্ট সূত্র জানিয়েছে, উত্তর সিটির নতুন প্রার্থীদের ফল খারপ হয়েছে। কারণ, অধিকাংশ নেতা-কর্মী তাদের প্রচারণার আন্তরিকভাবে অংশ নেয়নি।

বিশ্লেষকদের মতে, সিটি নির্বাচনের ফলাফল ইঙ্গিত দেয়, রাজনৈতিক দলগুলোর সমর্থন কাউন্সিলরদের জয়ের বড় কারণ ছিল না। যাদের এলাকায় শক্ত ভিত্তি এবং প্রভাব আছে তারাই শনিবারের নির্বাচনে জয়ী হয়েছেন।

সুশাসনের জন্য নাগরিকের সম্পাদক বদিউল আলম মজুমদার দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, “শনিবারের নির্বাচন ছিল ক্ষমতাসীন দল-নিয়ন্ত্রিত নির্বাচন। এতে মানুষের ইচ্ছার প্রতিফলন ঘটেনি। নির্বাচন হস্তক্ষেপমুক্ত রাখতে নির্বাচন কমিশন কোনো অর্থবহ উদ্যোগ নেয়নি...”

“যেসব বিতর্কিত প্রার্থীরা নির্বাচিত হয়েছেন, তারা নিজ এলাকার নির্বাচন নিয়ন্ত্রণের মূল ব্যক্তিত্ব ছিলেন।”

“তারা নিজের এলাকায় বিত্তশালী এবং প্রভাবশালী। তাদের নির্বাচিত হওয়াটা দুর্ভাগ্যজনক,” যোগ করেন বদিউল আলম মজুমদার।

দুই সিটিতে ওয়ার্ড পর্যায়ে আওয়ামী লীগের ১২৯ জন প্রার্থীর মধ্যে ৯৮ জন নির্বাচিত হয়েছেন। ১৯ ওয়ার্ডে বিদ্রোহী প্রার্থীরা জয় পেয়েছেন।

দলীয় সূত্রগুলো জানায়, দুই সিটিতে বিএনপি সমর্থিত ৯ প্রার্থী বিজয়ী হয়েছেন। এছাড়াও, জাতীয় পার্টি, বাংলাদেশ জাতীয় পার্টি ও ইসলামী আন্দোলনের একজন করে প্রার্থী জয় পেয়েছেন। বিএনপির কোনো বিদ্রোহী প্রার্থী জয় পায়নি।

দুই সিটিতে নারীদের জন্য সংরক্ষিত ৪৩টি কাউন্সিলর আসনের মধ্যে ৩১টিতে আওয়ামী লীগ সমর্থিত প্রার্থী, সাতটিতে বিএনপি সমর্থিত প্রার্থী এবং পাঁচটিতে স্বতন্ত্র প্রার্থী নির্বাচিত হয়েছেন। সংরক্ষিত আসনে আওয়ামী লীগ বা বিএনপির কোনো বিদ্রোহী প্রার্থী নির্বাচিত হননি।

উত্তর সিটির ৪১টি ওয়ার্ডে আওয়ামী লীগ সমর্থিত কাউন্সিলর প্রার্থী বিজয়ী হয়েছেন এবং ১০টি ওয়ার্ডে তাদের বিদ্রোহী প্রার্থী বিজয়ী হয়েছেন। দুটি ওয়ার্ডে বিএনপি সমর্থিত প্রার্থী এবং একটি ওয়ার্ডে জাতীয় পার্টির প্রার্থী বিজয়ী হয়েছেন।

দক্ষিণ সিটির ৫৭টি ওয়ার্ডে আওয়ামী লীগের প্রার্থীরা বিজয়ী হয়েছেন এবং ৯টি ওয়ার্ডে দলটির বিদ্রোহীরা বিজয়ী হয়েছেন। দুটি ওয়ার্ডে বিজয়ী হয়েছেনে বিএনপি প্রার্থী। এছাড়াও, বাংলাদেশ জাতীয় পার্টি এবং ইসলামী আন্দোলনের একজন করে প্রার্থী বিজয়ী হয়েছেন।

বিতর্কিদের চিত্র

উত্তর সিটিতে আওয়ামী লীগ সমর্থিত ৯ বিতর্কিত প্রার্থী কাউন্সিলর নির্বাচিত হয়েছেন।

এরা হলেন- জামাল মোস্তফা (ওয়ার্ড-৪), আবদুর রউফ নান্নু (ওয়ার্ড-৫), তোফাজ্জল হোসেন (ওয়ার্ড-৭), আবু তাহের (ওয়ার্ড-১০), জাকির হোসেন (ওয়ার্ড-১৮), ফরিদুর রহমান ইরান (ওয়ার্ড-২৭), মোহাম্মদ হারুন-উর-রশিদ (ওয়ার্ড-১৩), ফোরকান হোসেন (ওয়ার্ড-২৮) এবং আবুল হাশেম হাসু (ওয়ার্ড-৩০)।

দক্ষিণ সিটিতে আওয়ামী লীগ সমর্থিত আট বিতর্কিত প্রার্থী কাউন্সিলর নির্বাচিত হয়েছেন।

এরা হলেন- আনিছুর রহমান (ওয়ার্ড-২), ফরিদ উদ্দিন আহমেদ রতন (ওয়ার্ড-২০), হাসিবুর রহমান মানিক (ওয়ার্ড-২৬), আবু আহমেদ মান্নাফি (ওয়ার্ড-৩৮), কাজী হাবিবুর রহমান হাবু (ওয়ার্ড-৫১), আতিকুর রহমান (ওয়ার্ড-৭০), মাহমুদুল হাসান পলিন (ওয়ার্ড-৬৮) এবং মোহাম্মদ হোসেন (ওয়ার্ড-৫৬)।

বিদ্রোহী প্রার্থী

উত্তর সিটিতে নির্বাচিত হওয়া আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থীরা হলেন- কাজী জহিরুল (ওয়ার্ড-৩, তাইজুল ইসলাম চৌধুরী (ওয়ার্ড-৬), তোফাজ্জল হোসেন (ওয়ার্ড-৭), হুমায়ুন রশিদ জনি (ওয়ার্ড -১৪), সলিমুল্লাহ সালু (ওয়ার্ড-২৯), আবুল হাসেম (ওয়ার্ড-৩০), আবদুল মতিন (ওয়ার্ড-৪১), আইয়ুব আনসারী (ওয়ার্ড-৪২) এবং আনিছুর রহমান (ওয়ার্ড-৪৯)।

দক্ষিণ সিটিতে নির্বাচিত আওয়ামী লীগের বিদ্রোহীরা হলেন- সুলতান মিয়া (ওয়ার্ড-৮), মামুনুর রশিদ (ওয়ার্ড-১২), কামাল উদ্দিন কাবিল (ওয়ার্ড-২৮), ইরফান সেলিম (ওয়ার্ড-৩০), সাহানা আক্তার (ওয়ার্ড-৪৭), রুহুল আমিন (ওয়ার্ড-৫২) এবং সালাহউদ্দিন আহমেদ (ওয়ার্ড-৬৯)।

Comments

The Daily Star  | English

Abu Sayed’s death in police firing: Cops’ FIR runs counter to known facts

Video footage shows police shooting at Begum Rokeya University student Abu Sayed, who posed no physical threat to the law enforcers, during the quota reform protest near the campus on July 16. He died soon afterwards.

13h ago