খেলাপি ঋণ: ৫০,১৮৬ কোটি টাকা পুনঃতফসিল করা হয়েছে এক বছরে

খেলাপি ঋণ কম দেখাতে এবং বেশি মুনাফা দেখানোর চেষ্টার অংশ হিসাবে গত বছর রেকর্ড পরিমাণ ঋণ পুনঃতফসিল করেছে ব্যাংকগুলো।

খেলাপি ঋণ কম দেখাতে এবং বেশি মুনাফা দেখানোর চেষ্টার অংশ হিসাবে গত বছর রেকর্ড পরিমাণ ঋণ পুনঃতফসিল করেছে ব্যাংকগুলো।

বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, গত বছর ৫০ হাজার ১৮৬ কোটি টাকার খেলাপি ঋণ নিয়মিত করা হয়েছে। যা এক বছরে সবচেয়ে পরিমাণে পুনঃতফসিল করার রেকর্ড। 

গত বছর ১৬ মে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের শিথিল করা নীতিমালার মাধ্যমে ১৮ হাজার ৫৮৪ কোটি টাকা পুনঃতফসিল করা হয়। ঋণ খেলাপিদের প্রদেয় ১০ থেকে ৫০ শতাংশের বদলে মাত্র ২ শতাংশ বকেয়া প্রদানের মাধ্যমে তাদের ঋণ পুনঃতফসিল করার সুযোগ দেওয়া হয়েছিল।

শিথিল করা নীতিমালা থেকে পুনঃতফসিল করা ঋণের ডাউন পেমেন্ট হিসেবে ব্যাংকগুলো মাত্র ৪৭৯ কোটি টাকা পুনরুদ্ধার করতে পেরেছে। 

পলিসি রিসার্চ ইন্সটিটিউটের নির্বাহী পরিচালক আহসান এইচ মনসুর বলেন, “ব্যাংকগুলো খেলাপিদের ঋণ পরিশোধের ক্ষমতা যাচাই না করেই গড়পড়তা ঋণ পুনঃতফসিল করার ফলে এগুলো আবার খেলাপি হবে।”

বাংলাদেশ ব্যাকের তথ্য অনুযায়ী গত বছর পুনঃতফসিল করা খারাপ ঋণের ১৩ হাজার ২৮৪ কোটি টাকা আবার খেলাপি হয়েছে। এর অর্থ পুনঃতফসিল করা ঋণের প্রায় এক-চতুর্থাংশ আবার খারাপ ঋণে পরিণত হয়েছে। 

ব্র্যাক ব্যাংকের চেয়ারম্যান হিসেবেও দায়িত্বরত এইচ মনসুর গতকাল দ্য ডেইলি স্টারকে বলেছেন, “খেলাপি ঋণের প্রকৃত অবস্থা আড়াল করতে এটা কেবল একটি আই ওয়াশ।”

তিনি উল্লেখ করেন, গড়পড়তা ঋণ পুনঃতফসিল করা এটাই ইঙ্গিত দেয় যে ব্যাংকগুলো লাভ দেখানোর জন্য তাদের ব্যালান্সশিট কৃত্রিমভাবে পরিচ্ছন্ন দেখাচ্ছে।

আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের সাবেক কর্মকর্তা এইচ মনসুর আরও বলেছেন, “তবে এটি ব্যাংকগুলোর আর্থিক অবস্থা উন্নয়নের কোনো সমাধান না।”

তিনি মন্তব্য করেছেন, ঋণদাতাদের খেলাপি ঋণ পুনরুদ্ধারে আরও বেশি গতিশীল হওয়া উচিত। অন্যথায় তারা গভীর সমস্যায় পড়বেন।

ঋণ খেলাপিরা বাংলাদেশ ব্যাংকের শিথিল করা নীতিমালা গ্রহণ করলে গত বছর নভেম্বরে খেলাপি ঋণ দুই মাস আগের ১ লাখ ১৬ হাজার ২৮৮ কোটি টাকা থেকে কমে ৯৬ হাজার ৯৮৬ কোটি টাকায় নেমেছিল।

এইচ মনসুর বলেন যে ব্যাংকগুলো যদি খেলাপি ঋণ শিথিল নীতিমালার মধ্যে না আনতেন তাহলে নন-পারফর্মিং লোনের (এনপিএল) পরিমাণ খুব বেশি বেড়ে যেত।

গত বছর বেসরকারি ব্যাংকগুলো পুনঃতফসিল করা ঋণের ৩০ হাজার ৫৪৭ কোটি টাকা বা ৬১ শতাংশ নিয়মিত করেছিল। বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী আটটি রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংক পুনঃতফসিল করেছে ১৯ হাজার ৬০১ কোটি টাকা এবং বিদেশি ব্যাংকগুলো করেছে ৩৮ কোটি ১০ লাখ টাকা।

দ্য ডেইলি স্টারের সঙ্গে কথা বলার সময় কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সাবেক গভর্নর সালেহউদ্দিন আহমেদ জানান, বড় পরিমাণে খেলাপি ঋণ পুনঃতফসিল করায় ব্যাংকগুলোর নতুন করে ঋণ দেওয়ার ক্ষমতা কমছে। 

ক্ষুদ্র ও মাঝারি উদ্যোক্তারা ঋণ পাওয়া থেকে বঞ্চিত হচ্ছে জানিয়ে তিনি বলেন, “সম্প্রতি অর্থনীতি মন্দার মুখোমুখি হয়েছে। ব্যাংকগুলো নতুন ঋণ বিতরণ করতে ব্যর্থ হলে এটি আরও বাড়বে।”

ট্রাস্ট ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ফারুক মাইনউদ্দিন আহমেদ বলেন, অভ্যাসগত খেলাপিদের পুনঃতফসিলের সুবিধা দেওয়া ভালো ঋণগ্রহীতাদের প্রতি অবিচার করা।

তিনি উল্লেখ করেন, খেলাপি ঋণের পরিমাণ কৃত্রিম উপায়ে কমিয়ে আনা কাম্য না।

মিউচুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক সৈয়দ মাহবুবুর রহমান বলেন, তাৎক্ষণিক ফলাফল পেতে খারাপ ঋণ পুনঃতফসিল করা উচিত না ঋণদাতাদের। 

তিনি আরও বলেন, পুনঃতফসিল নীতি শিথিল হওয়ায় ব্যাংকগুলো এনপিএলের কিছু অংশ পুনরুদ্ধার করতে পেরেছে। ঋণদাতারা আগে খেলাপিদের কাছে থেকে কোনো অর্থই আদায় করতে পারছিলেন না।

Comments

The Daily Star  | English

One month of interim govt: Yunus navigating thru high hopes

A month ago, as Bangladesh teetered on the brink of chaos after the downfall of Sheikh Hasina, Nobel Laureate Muhammad Yunus returned home to steer the nation through political turbulences.

5h ago