জয়ের সেঞ্চুরিতে ইতিহাস গড়ে যুব বিশ্বকাপের ফাইনালে বাংলাদেশ
সাকিব আল হাসান, তামিম ইকবালরা পারেননি, মেহেদী হাসান মিরাজরা কাছেও গিয়েও পুড়েছেন আক্ষেপে। যুব বিশ্বকাপের ফাইনাল বাংলাদেশের জন্য ছিল অধরা স্বপ্ন। অবশেষে পারলেন মাহমুদুল হাসান জয়রা । নিউজিল্যান্ডকে ৬ উইকেটে হারিয়ে প্রথমবারের মতো যুব বিশ্বকাপের ফাইনালে উঠেছে বাংলাদেশ।
পেসার শরিফুল ইসলামের তোপ, তিন স্পিনার শামিম হোসেন, রকিবুল হাসান আর হাসান মুরাদের ঘূর্ণিতে হাঁসফাঁস করা নিউজিল্যান্ড আটকে যায় অল্প রানে। রান তাড়ায় তৌহিদ হৃদয়ের ঝলকের পর সব আলো নিজের দিকে নিয়ে নেন মাহমুদুল হাসান জয়। তিনে নামা এই ব্যাটসম্যানের সেঞ্চুরিতে ইতিহাস গড়ল লাল সবুজের প্রতিনিধিরা।
বাংলাদেশকে ফাইনালে তুলতে ১২৭ বলে ১০০ রানের ইনিংস খেলে নায়ক বনেছেন জয়।
বৃহস্পতিবার পচেফস্ট্রুমে ৩৫ বল হাতে রেখে নিউজিল্যান্ডের ২১২ রান টপকে যায় বাংলাদেশ। যুব বিশ্বকাপের ইতিহাসে এই প্রথম বাংলাদেশের কোন দল উঠল ফাইনালে। এমনকি আইসিসির কোন বিশ্ব আসরেও বাংলাদেশের কোন দলের এটাই সেরা সাফল্য। ৯ ফেব্রুয়ারি ফাইনালে বাংলাদেশের প্রতিপক্ষ ভারত।
২১২ রানের লক্ষ্যটা বেশ সহজই। কিন্তু উইকেটে ছিল বোলারদের জন্য অনেক রসদ। তার উপর সেমিফাইনাল ম্যাচের রান তাড়ার চাপ মিলিয়ে দেখলে কাজটা করে দেখানো অতি সহজও না। এরমধ্যে দুই ওপেনার তানজিদ হাসান তামিম আর পারভেজ হোসেন ইমন শুরুটা আনতে পারেননি ভালো।
কোয়ার্টার ফাইনালে ৮০ রানের ইনিংস খেলা তামিমের উপর প্রত্যাশা ছিল বেশি। তিনি এবার তা মেটাতে পারেননি। ক্লার্কের বলে থার্ড ম্যানে ক্যাচ দিয়ে ফেরেন ৩ রান করে। খানিক পর ইমন ক্যাচ দেন উইকেটের পেছনে।
৩২ রানে দুই ওপেনারকে হারিয়ে কিছুটা বিপাকে পড়েছিল দল। তবে তিনে নামা জয়ের সঙ্গে জমে যান তৌহিদ হৃদয়। তৃতীয় উইকেটে আসে ৬৮ রানের জুটি। এই জুটিতে বেশি আগ্রাসী ছিল হৃদয়ের ব্যাট। দ্বিতীয় যুব বিশ্বকাপ খেলা অভিজ্ঞ এই ব্যাটসম্যান পরিস্থিতির সঙ্গে মানিয়ে চাপ ঠেলে সরিয়ে দেন দূরে। প্রান্ত বদল করে রানের চাকা সচলের পাশাপাশি সুযোগ পেলেই মেরেছেন বাউন্ডারি।
ফিফটির দিকে এগুতে থাকা হৃদয় কাবু হয়েছেন লেগ স্পিনার আদিত্য অশোকের বলে ধোঁকা খেয়ে। তার হালকা টার্ন আর বাউন্সে পরাস্ত হয়ে ক্রিজের বাইরে বেরিয়ে স্টাম্পিং হয়ে ফেরেন তিনি। ৪৭ বলের ইনিংসে হৃদয় ৪ বাউন্ডারিতে করেছেন ৪০ রান।
হৃদয়ের আউটের পর কিছুটা ধীর গতিতে খেলতে থাকা মাহমুদুল মেলেন ডানা। ৭৭ বলে পৌঁছান ফিফটিতে। এরপর এগিয়েছেন আরও দ্রুত। বাউন্ডারি বের করেছেন, দলের রানের চাপ করে দিয়েছেন হালকা। চার মেরে সেঞ্চুরি করেই আউট হয়েছে। তবে ততক্ষণে বাংলাদেশ জয়ের কিনারে। ১২৭ বলের ইনিংসে ১৩ চার মেরেছেন এই ডানহাতি।
জয়ের সঙ্গে মিলে কাজটা সহজ করে দেন শাহাদাত হোসেন দিপুও। আগের ম্যাচে ৭৬ বলে করেছিলেন ৭৪। এবার জয়ের সঙ্গে চতুর্থ উইকেট জুটিতে আনেন ১০২ রান। জয় জেতার খানিক আগে ফিরে গেলেও দলকে একদম তীরে ভিড়িয়ে দিপু অপরাজিত থাকেন ৪০ রানে।
এর আগে টস জিতে নিউজিল্যান্ডকে আগে ব্যাটিংয়ে পাঠিয়ে চেপে ধরে বাংলাদেশের বোলাররা। রান আটকে দেওয়ার পাশাপাশি নিতে থাকে উইকেট। তাতে হাঁসফাঁস করতে করতে এগিয়েছে তাদের ইনিংস।
বৃষ্টিভেজা মাঠে দ্বিতীয় ওভারেই সাফল্য পায় বাংলাদেশ। অফ স্পিনার শামীম হোসেনের বলে স্লিপে সহজ ক্যাচ দিয়ে ফেরেন রাইস মাইরু। আরেক ওপেনার ওলি হোয়াইট আর তিনে নামা ফার্গুস লেমেন জুটি বেধে টিকেছিলেন আরও ১০ ওভার। কিন্তু সারাক্ষণই তারা বাংলাদেশের নিয়ন্ত্রিত বোলিংয়ে হাঁসফাঁস করেছেন।
দ্বাদশ ওভারে বাঁহাতি স্পিনার রকিবুল হাসানের অফ স্টাম্পের বাইরের বল ঘুরাতে গিয়ে উইকেটের পেছনে ক্যাচ দেন হোয়াইট। ততক্ষণে তাদের দলের রান কেবল ৩১। শম্ভুক গতিতে এগুতে থাকা কিউই যুবাদের পরের উইকেট পড়েছে ২১তম ওভারে। তখন তাদের দলের রান মাত্র ৫৯।
শামীমের বলে এই উইকেটের বড় কৃতিত্ব অবশ্য দাবি করতে পারেন মাহমুদুল হাসান জয়। মিড অনে লেমেনের ক্যাচ বাঁদিকে ঝাঁপিয়ে লুফে নেন জয়।
চরম বিপর্যস্ত পরিস্থিতিতে পালটা আক্রমণের মেজাজ নিয়ে নেমেছিলেন অধিনায়ক জেসি টেশকফ। বাঁহাতি স্পিনার হাসান মুরাদের ফ্লাইটে ধোঁকা খেয়ে বোল্ড হয়ে যান তিনি।
ইনিংসের অর্ধেক পথে কেবল ৭৪ রান তুলে নিউজিল্যান্ড হারিয়ে বসে ৪ উইকেট। এরপর প্রতিরোধ গড়েন লিডস্টোন আর গ্রেনাল। ৯০ বলে ৬৭ রানের জুটি আসে দুজনের কাছ থেকে। ৪১তম ওভারে আক্রমণে ফিরে ৪৪ করা লিডস্টোনকে ফিরিয়ে জুটি ভাঙেন শরিফুল। এই পেসার পরে ফেরান জয়ি ফিল্ডকেও।
তবে শেষ পর্যন্ত টিকে দলকে জুতসই পূঁজির দিকে নিতে চেষ্টা চালান গ্রেনাল। দলের সংগ্রহ পার করান দুইশো। ৮৩ বলে ৫ চার ২ ছক্কায় ৭৫ করে অপরাজিত থাকেন তিনি।
তবে তার এনে দেওয়া এই পূঁজি শেষ পর্যন্ত বাংলাদেশের কাছে হয়েছে মামুলি।
সংক্ষিপ্ত স্কোর:
নিউজিল্যান্ড : ৫০ ওভারে ২১১/৮ ( মাইরু ১, হোয়াইট ১৮, লেমেন ২৪ , লিডস্টোন ৪৪, টেশকফ ১০ , হুইলার গ্রেনাল ৭৫* , সুন্ডে ১, ক্লার্ক ৭, ফিল্ড ১২, অশোক ৫* ; শরিফুল ৩/৪৫, শামিম ২/৩১, রকিবুল ১/৩৫, সাকিব ১/৪৪, মুরাদ ২/৩৪, হৃদয় ০/১৮ )
বাংলাদেশ: ৪৪.১ ওভারে ২১৫/৪ (ইমন ১৪ , তামিম ৩, মাহমুদুল জয় ১০০, হৃদয় ৪০, শাহাদাত ৪০* , আকবর ৫* ; ফিল্ড ০/২৮, ক্লার্ক ১/৩৭, হ্যান্ডকক ১/৩১, অশোক ১/৪৪, টেশকফ ১/৫৭, গ্রেনাল ০/৯ )
ফল: বাংলাদেশ ৬ উইকেটে জয়ী।
ম্যাচ সেরা: মাহমুদুল হাসান জয়।
Comments