খেলা

মিঠুনের দৃঢ়তার আগে-পরে আক্ষেপের গল্প

শুরুতেই বিপর্যয়, পরে ছোট ছোট জুটিতে ঘুরে দাঁড়ানো। কিন্তু বড় কিছুর আভাস দিতেই একেকজনের আত্মাহুতি। এভাবেই চলে দুই সেশন পরই শেষের দিকে ছিল বাংলাদেশের ইনিংস। দিনের শেষ সেশনে চোয়লবদ্ধ দৃঢ়তা দেখালেন মোহাম্মদ মিঠুন। তাইজুল ইসলামকে নিয়ে গড়লেন প্রতিরোধ। তার ফিফটিতে দুশো পেরিয়েও গেল দল। তবে বাংলাদেশকে আড়াইশর আগে মুড়ে দিয়ে দিনটা পাকিস্তানের করে রাখলেন শাহিন শাহ আফ্রিদি।
ছবি: এএফপি

শুরুতেই বিপর্যয়, পরে ছোট ছোট জুটিতে ঘুরে দাঁড়ানো। কিন্তু বড় কিছুর আভাস দিতেই একেকজনের আত্মাহুতি। এভাবেই চলে দুই সেশন পরই শেষের দিকে ছিল বাংলাদেশের ইনিংস। দিনের শেষ সেশনে চোয়লবদ্ধ দৃঢ়তা দেখালেন মোহাম্মদ মিঠুন। তাইজুল ইসলামকে নিয়ে গড়লেন প্রতিরোধ। তার ফিফটিতে দুশো পেরিয়েও গেল দল। তবে বাংলাদেশকে আড়াইশর আগে মুড়ে দিয়ে দিনটা পাকিস্তানের করে রাখলেন শাহিন শাহ আফ্রিদি। 

শুক্রবার শুরু হওয়া রাওয়ালপিন্ডি টেস্টের প্রথম দিনে ২৩৩ রানে অলআউট হয়েছে বাংলাদেশ। ৫৩ রানে ৪ উইকেট নিয়ে পাকিস্তানের নায়ক বাঁহাতি পেসার শাহিন। বাংলাদেশের অনেকগুলো সম্ভাবনাময় ইনিংসের মাঝে একমাত্র ফিফটিতে মিঠুন করেন ৬৩ রান।                  

রাওয়ালপিন্ডির উইকেট ঐতিহ্যগতভাবেই পেসার সহায়ক। টস জিতে তাই অনুমিতভাবে ফিল্ডিং নিয়েছিল পাকিস্তান। তবে সারাদিন যা খেলা হয়েছে তাতে উইকেট দেখে মনে হয়েছে এখানে আছে অনেক রান। শট খেলা সহজ, টিকে থাকাও নয় কঠিন। তবু তাতেই বাংলাদেশের শুরুটা হয় চরম বিপর্যয়ে।

৩ রানেই দুই ওপেনার বিদায় নেন। এরপর প্রতি উইকেটেই জুটি পেয়েছে বাংলাদেশ। ৩ থেকে ৮ পর্যন্ত নামা সব ব্যাটসম্যানই ২০ এর বেশি রান পেয়েছেন। কিন্তু মুশকিল সেখানেই, থিতু হয়েও যে উইকেট বিলিয়েছেন সবাই। রানে ভরা উইকেট থেকে তাই সেরা ফসল আনা যায়নি। আরও কেউ একজনও ইনিংস টানতে পারলে দিনের গল্প ভিন্ন হতেই পারত।  

মুমিনুল হকের ৩০, নাজমুল হোসেন শান্ত ৪৪, মাহমুদউল্লাহর ২৫ রানের পর দ্যুতি ছড়িয়ে ৩৩ রানে আউট হন লিটন দাস। ২২ রানে ক্যাচ দিয়ে জীবন পাওয়া মিঠুনই কাজে লাগিয়েছেন সুযোগ। করেছেন ৬৩। দেখিয়েছেন নিবেদন।

দিনের প্রথম ওভারেই অভিষিক্ত সাইফ হাসানের বিদায়ে উইকেট পতনের শুরু। ইনিংসের তৃতীয় বলে শাহিন শাহ আফ্রিদির বলে স্লিপে ক্যাচ দেন সাইফ। পরের ওভারে মোহাম্মদ আব্বাসের ভেতরে ঢোকা বলে এলবিডব্লিওতে কাবু তামিম ইকবাল। ৩ রানে নেই ২ উইকেট।

কিন্তু এই বিপর্যয় ঠিকই সামাল দিয়ে ফেলেন মুমিনুল-শান্ত। জুটিতে ৫৯ আসার পর গড়বড় মুমিনুলের। ৫৯ বলে ৩০ রান করা বাংলাদেশ অধিনায়ক অফ স্টাম্পের অনেক বাইরের বল তাড়া করে বিদায় নেন।

শুরু থেকেই তিনে নামা শান্তর ব্যাট ছিল দৃঢ়তায় ভরা। মাঝ ব্যাটে বল লাগছিল, রান বের করতে হচ্ছিল না সমস্যা। পুরোপুরি থিতু হয়ে এগুচ্ছিলেন ক্যারিয়ারের প্রথম ফিফটির দিকে। কিন্তু লাঞ্চের পরই মোহাম্মদ আব্বাসের অনেক বাইরের বল অকারণে মারতে গিয়ে ৪৪ রান করে ক্যাচ দেন উইকেটের পেছনে।

অভিজ্ঞ মাহমুদউল্লাহর কাঁধে তখন সকল ভার। কিন্তু দায়িত্বটা তিনি নিলে তো? উইকেটে সেট হয়ে যাওয়া ব্যাটসম্যান টিকতে পারতেন অনায়াসে। বাড়তি কিছু করার চাহিদাও তখন নেই। শাহিনের অফ স্টাম্পের দেড় হাত বাইরে প্রায় ওয়াইড ডেলিভারিতে ড্রাইভ করতে গেলেন। স্বাভাবিক লাগল উপরের দিকের কানায়। মাহমুদউল্লাহর ভাগ্য ভাল থাকলে স্লিপের উপর দিয়ে চলে যেতে পারত বাউন্ডারিতে। কিন্তু আসাদ শফিক তা হতে দেবেন কেন। অনেকখানি লাফিয়ে দুর্দান্ত ক্যাচ জমান তিনি। ১০৭ রানে ৫ উইকেট হারিয়ে বসে বাংলাদেশ।

ছয়ে নামা মোহাম্মদ মিঠুন আর সাতে নামা লিটন দাস এই অবস্থা থেকে দলকে বাঁচাতে চালাচ্ছিলেন চেষ্টা।

জুটিও মিলছিল বেশ। ৯০ বলে ৫৪ রানের জুটির পর দ্যুতি ছড়ানো লিটনের বিদায়। মুগ্ধতা ছড়ানো আরেকটি ছোট ইনিংসে লিটন বাড়িয়েছেন আক্ষেপ। ৪৬ বলে ৭ চারে আউট হয়েছেন ৩৩ রান করে। ৭ চারের সবগুলোই ছিল চোখ ধাঁধানো। দেখে মনে হচ্ছিল তাকে টলানো কঠিন।

কিন্তু ভুল সময়ে ভুল শটের মাশুল আরও একবার দিয়েছেন তিনি। বাঁহাতি স্পিনার হারিস সোহেলের বলে প্যাডেল সুইপ করতে গিয়েছিলেন। আবেদনে আম্পায়ার নাইজেল লঙ সাড়া না দিলে রিভিউ নিয়ে লিটনকে ফেরায় পাকিস্তান। ১৬১ রানে বাংলাদেশ হারায় ৬ষ্ঠ উইকেট। এতে বেরিয়ে যায় দলের টেলও। অবশ্য ২২ রানে মিঠুনের ক্যাচ স্লিপে না পড়লে তখন দুই প্রান্তেই দেখা যেত টেল এন্ডারদের।

এরপর তাইজুলকে নিয়ে শেষ সেশনে দারুণ প্রতিরোধ আসে মিঠুনের ব্যাটে। সপ্তম উইকেটে দুজনে মিলে পান ৫৪ রানের জুটি। পুরো দস্তুর ব্যাটসম্যানের মতো মিঠুনকে সঙ্গ দেওয়ার পাশাপাশি রানও বাড়ান তাইজুল। ৭২ বলে ৪ বাউন্ডারিতে ২৪ করা এই তাইজুল শেষ পর্যন্ত হারিসকে মারতে গিয়ে ক্যাচ উঠান আকাশে।

এই জুটি ভাঙার বেশিক্ষণ আর টেকেনি বাংলাদেশ। মিঠুন অবস্থা বুঝে দ্রুত রান বাড়াতে থাকেন, ক্যারিয়ারের দ্বিতীয় ফিফটি তুলে তিনিও অবশ্য থামেন ৬০ পেরিয়েই। ১৪০ বলে ৭ চার, ১ ছক্কায় তার ৬৩ রানের ইনিংসের হন্তারক সারা দিনে বাংলাদেশকে ভোগানো শাহিন।

বাংলাদেশের ইনিংস শেষ হওয়ার পর আলোকস্বল্পতায় আর ব্যাট করতে নামেনি পাকিস্তান।

সংক্ষিপ্ত স্কোর:

(প্রথম দিন শেষে)

বাংলাদেশ প্রথম ইনিংস: ৮২.৫ ওভারে ২৩৩ (তামিম ৩, সাইফ ০, শান্ত ব্যাটিং ৪৪ , মুমিনুল ৩০, মাহমুদউল্লাহ ২৫, মিঠুন ৬৩, লিটন ৩৩, তাইজুল ২৪, রুবেল ১, জায়েদ ০, ইবাদত ০* ; শাহিন ৪/৫৩ , আব্বাস ২/১৯ , নাসিম ১/৬১ , ইয়াসির ০/৮৩, হারিস ১/১১)

Comments

The Daily Star  | English
Sakib Jamal. Photo: Crain's New York Business. Image: Tech & Startup

Bangladeshi Sakib Jamal on Forbes 30 under 30 list

Bangladeshi born Sakib Jamal has been named in Forbes' prestigious 30 Under 30 list for 2024. This annual list by Forbes is a compilation of the most influential and promising individuals under the age of 30, drawn from various sectors such as business, technology, arts, and more. This recognition follows his earlier inclusion in Crain's New York Business 20 under 20 list earlier this year.

4h ago