নদী বাঁচান, সোনার বাংলা বাঁচান: প্রধানমন্ত্রীর কাছে আবেদন

বঙ্গবন্ধুর সোনার বাংলা, জনগণের সোনার বাংলা, ইতিহাসের সোনার বাংলা এক প্রাণহীন অনুর্বর সোনার বাংলায় পরিণত হবে যদি আমাদের নদীগুলোকে দখল ও দূষণের হাত থেকে বাঁচানো না যায়। আমাদের বাঁচতে হলে নদীগুলোকে বাঁচাতে হবে।
pollution.jpg
কর্ণফুলী নদীতে ভাসমান দূষিত বর্জ্য থেকে খাবার সংগ্রহের চেষ্টা করছে গাঙচিল। ছবি: রাজিব রায়হান/স্টার

বঙ্গবন্ধুর সোনার বাংলা, জনগণের সোনার বাংলা, ইতিহাসের সোনার বাংলা এক প্রাণহীন অনুর্বর সোনার বাংলায় পরিণত হবে যদি আমাদের নদীগুলোকে দখল ও দূষণের হাত থেকে বাঁচানো না যায়। আমাদের বাঁচতে হলে নদীগুলোকে বাঁচাতে হবে।

জাতীয় নদী সংরক্ষণ কমিশনের (এনআরসিসি) সাম্প্রতিক প্রতিবেদনে দেশের নদীগুলোর ভয়াবহ চিত্র উঠে এসেছে। একসময় আমাদের ছিলো ৭০০টি নদী। সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী এ সংখ্যা মাত্র ৪০৫টি। এর মধ্যে ভারতের সঙ্গে যৌথনদী ৫০টিরও বেশি। স্বাধীনতার পর থেকে আমরা শতাধিক নদী হারিয়েছি। বর্তমানে ৬৪ জেলার ১৩৯টি নদীর বিরাট অংশ দখল হয়ে গেছে। সারা দেশে মোট ৪৯ হাজার ১৬২ জন দখলদারকে তালিকাভুক্ত করা হয়েছে।

পানির গুণগতমান হিসেবে দেশের ২৯টি নদী মারাত্মক দূষণের শিকার। এর মধ্যে রয়েছে ঢাকার চারপাশের চারটি নদী, যেগুলোকে ‘জৈবিকভাবে মৃত’ বলে ধরে নেওয়া যায়। 

নদীগুলোর এই শোচনীয় অবস্থার কারণে চাহিদা মেটাতে ভূগর্ভ থেকে প্রতিনিয়ত বেপরোয়াভাবে পানি তোলা হচ্ছে। ১৯৯০ সালে ঢাকার ভূগর্ভস্থ পানির স্তর যেখানে ছিলো পাঁচ মিটার নিচে, ২০১০ সালে তা নেমে গিয়েছিলো ৭০ মিটারে। অর্থাৎ সমুদ্রপৃষ্ঠের চেয়েও ৫১ মিটার (১৭০ ফুট) নীচে ছিলো ভূগর্ভস্থ পানির স্তর। এখন বোধহয় তা আরও নীচে নেমে গেছে। এতে ভূগর্ভে সমুদ্রের নোনা পানি অনুপ্রবেশের ঝুঁকি বাড়ছে।

২০০৯ সালে দেওয়া যুগান্তকারী রায়ের পরেও হাইকোর্ট নদী বাঁচাতে অসংখ্য নির্দেশনা দিয়েছেন। ২০১৯ সালে হাইকোর্ট নদী নিধনকে ‘যূথবদ্ধ আত্মহত্যা’ হিসেবে বর্ণনা করেছেন। এরপরও নদীর ধ্বংসলীলা চলছে।

২০০৯ সালে প্রধানমন্ত্রী নদী রক্ষার নির্দেশনা দিয়েছিলেন। এরপর সরকার কয়েক শত কোটি টাকার প্রকল্প গ্রহণ করেছে। ২০১৪ সালে মে মাসে তিনি বুড়িগঙ্গা বাঁচাতে সমন্বিত উদ্যোগ নেওয়ার কথা বলেছিলেন। ২০১৪ সালের ১০ জুলাই তিনি নিজেই নদী দখলকারীদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশ দেন।

সরকারের ৩০১টি নদী খননের বিরাট পরিকল্পনা রয়েছে বলে জানা যায়।

তবুও, এসব নদী রক্ষার প্রচেষ্টা দ্রুত এগোচ্ছে না। প্রকল্পের অনেকগুলোর কাজ চলছে ঢিমেতালে। এছাড়াও রয়েছে দুর্বল পরিকল্পনা, সম্পদের অপব্যবহার ও দুর্নীতি। 

এনআরসিসি’র প্রতিবেদনের প্রেক্ষিতে আমরা মনে করছি, কেবল প্রধানমন্ত্রীর ব্যক্তিগত নির্দেশনা এবং সরাসরি হস্তক্ষেপই পারে আমাদের নদীগুলোকে বাঁচাতে। পদ্মা সেতু প্রকল্পের জন্য তিনি যে সংকল্প ও একাগ্রতার পরিচয় দিয়েছেন, নদী বাঁচাতেও তার পুনরাবৃত্তি প্রয়োজন।

পদ্মা সেতু তৈরির মতোই নদী বাঁচানোকে ব্যক্তিগত এজেন্ডা হিসেবে নিতে অনুরোধ করছি মাননীয় প্রধানমন্ত্রীকে। জাতির পিতার প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে মুজিব বর্ষে অনেক কর্মসূচিই নেওয়া হয়েছে। আমরা মনে করি- তার স্মৃতিতে নদীগুলোকে সংরক্ষণ করাই হতে পারে মুজিব বর্ষে বঙ্গবন্ধুর প্রতি সর্বোত্তম শ্রদ্ধার্ঘ্য। তাই নদী বাঁচানোর বিষয়টি বিশেষভাবে বিবেচনা করতে বিনীত অনুরোধ করছি।

এই আমাদের আবেদন।

Comments

The Daily Star  | English

One month of interim govt: Yunus navigating thru high hopes

A month ago, as Bangladesh teetered on the brink of chaos after the downfall of Sheikh Hasina, Nobel Laureate Muhammad Yunus returned home to steer the nation through political turbulences.

10h ago