শি জিনপিংয়ের করোনাভাইরাস চ্যালেঞ্জ
চীনের রাষ্ট্রপতি শি জিনপিংয়ের জন্য এখন সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ করোনাভাইরাস। গত বছরের ডিসেম্বরে দেশটির হুবেই প্রদেশের উহান শহরে ভাইরাসটির সংক্রমণ শুরু হয়।
এরপর চীনের অন্যান্য শহরের সঙ্গে উহানের যোগাযোগ প্রায় বিচ্ছিন্ন করে ফেলার সিদ্ধান্ত নেয় দেশটির সরকার। এতে গৃহবন্দি হয়ে পড়েছেন সেখানকার লাখো মানুষ।
আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে নিজেদের ক্ষোভ প্রকাশ করছেন চীনা নাগরিকরা। সেখানা তারা বলছেন, করোনাভাইরাস নিয়ে আসল তথ্য গোপন করছে চীনা কর্তৃপক্ষ। তারা অন্যদের কথা বলতে দিচ্ছে না। প্রথম যখন ভাইরাসটির খবর পাওয়া যায়, প্রশাসন কোনো গুরুত্বই দেয়নি।
চীনের সরকারি হিসাবে, করোনাভাইরাসের সংক্রমণে দেশটিতে এখন পর্যন্ত ৬৩৬ জনের মৃত্যু হয়েছে। আক্রান্ত হয়েছেন ৩১ হাজারেরও বেশি মানুষ।
আজ উহান সেন্ট্রাল হাসপাতালে মারা গেছেন ডা. লি ওয়েনলিয়াং। তিনিই প্রথম এই ভাইরাস সম্পর্কে মানুষকে সতর্ক করেছিলেন। জানুয়ারির শুরুর দিকে ‘গুজব’ ছড়ানোর অভিযোগে উহানের পুলিশ তাকে গ্রেপ্তারও করেছিলো।
করোনাভাইরাস মোকাবিলায় চীন সরকারের যে দুর্বলতা ও প্রতিবন্ধকতা রয়েছে, গত সপ্তাহে তারা তা জানায়। তবে এ বিষয়ে বিস্তারিত কিছু জানানো হয়নি। কিন্তু, সেই দেশের পলিটব্যুরোর স্থায়ী কমিটির এ ধরনের স্বীকারোক্তির উদাহরণ খুব একটা নেই।
‘মহামারি আকারে ছড়িয়ে পড়ায় গৃহীত ব্যবস্থা’ নিয়ে পলিটব্যুরোর সেই সভায় সভাপতিত্ব করেন রাষ্ট্রপতি শি জিনপিং। রাষ্ট্রীয় সংবাদ সংস্থা সিনহুয়া জানিয়েছিলো, রাষ্ট্রপতি সতর্কবার্তা দিয়েছেন। পলিটব্যুরোর স্থায়ী কমিটির যেকোনো নির্দেশ কঠোরভাবে মেনে চলতে বলেছেন তিনি।
করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাব মোকাবিলাকে কমিটির সদস্যরা ‘চীনের রাষ্ট্রব্যবস্থা ও সামর্থ্য নিয়ে একটি পরীক্ষা’ হিসেবে উল্লেখ করেছেন। সিনহুয়ার প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, সদস্যরা এ অভিজ্ঞতা থেকে ভবিষ্যতের জন্যে শিক্ষা নিচ্ছেন।
অনেকেই মনে করছেন, চীনের কঠোর নিয়মতান্ত্রিক ব্যবস্থার মধ্যে এ ধরনের বক্তব্য প্রকাশের অর্থ দাঁড়ায়, উচ্চপর্যায়ের নেতৃত্ব কিছুটা হলেও দুশ্চিন্তাগ্রস্ত।
সরকারের নেওয়া উদ্যোগ যথেষ্ট নয় বলে সংবাদমাধ্যমকে জানিয়েছেন উহানের মেয়র ঝাও শিয়াংওয়াং। তিনি পদত্যাগ করার ইচ্ছাও প্রকাশ করেছেন। আমলাতন্ত্রকে দায়ী করে তিনি বলেছেন, “ভাইরাসটি মহামারি আকারে ছড়ানোর খবর সময়মতো সঠিকভাবে প্রকাশ করতে বাধা দেওয়া হয়েছে।”
আজ মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সঙ্গে মোবাইল ফোনে কথা বলেছেন শি জিনপিং। শি তাকে জানিয়েছেন, করোনাভাইরাস মোকাবিলায় চীন সর্বোচ্চ চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। জবাবে ট্রাম্প জানিয়েছেন, ‘ভাইরাসের বিরুদ্ধে করা যুদ্ধে’ চীনের প্রতি পরিপূর্ণ আস্থা রয়েছে তার।
চীনে নিযুক্ত প্রাক্তন জার্মান রাষ্ট্রদূত ভলকার স্টাঞ্জেল মনে করেন, এ বছর চীনে ভাইরাসের প্রাদুর্ভাব দেশটির কমিউনিস্ট সরকারের ভবিষ্যতকে বড় চ্যালেঞ্জের মধ্যে ফেলে দিয়েছে।
গত মঙ্গলবার বার্লিনে এক অনুষ্ঠানে তিনি বলেন, “সরকারের যদি সংকট মোকাবিলা করার সামর্থ থাকেই, তবে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে মানুষের মন্তব্যকে সেন্সর করার কোনো প্রয়োজন পড়ে না।”
২০১৮ সালে চীনের সংবিধান সংশোধন করে শি জিনপিংয়ের আজীবন ক্ষমতায় থাকার ব্যবস্থা নিশ্চিত করে দেশটির কমিউনিস্ট পার্টি।
ইউনিভার্সিটি অব লন্ডনের চীনা ইনস্টিটিউটের (স্কুল অব ওরিয়েন্টাল অ্যান্ড এশিয়ান স্টাডিজ) পরিচালক স্টিভ ল্যাং মনে করেন, করোনাভাইরাসের কারণে জনমনে ক্ষোভের সৃষ্টি হলে সেটা কঠোরভাবে দমন করবে শি জিনপিংয়ের সরকার।
তিনি বলেন, “দলের ভেতরে তাকে চ্যালেঞ্জ করা ক্ষমার অযোগ্য। যে করবে সে ধ্বংস হয়ে যাবে।”
সংবাদমাধ্যম ব্লুমবার্গের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, করোনাভাইরাসের প্রভাবে চীনের অভ্যন্তরীণ বাজারে অর্থনৈতিক মন্দা ঠেকাতে ১৭৪ বিলিয়ন মার্কিন ডলার বিনিয়োগ করেছে চীন সরকার।
চীনের অর্থনীতি ও বাণিজ্যবিষয়ক গবেষক ক্যালভিন চেং বলেছেন, “করোনাভাইরাসের কারণে শুধু চীন নয়, পুরো পৃথিবীর অর্থনীতিতে নেতিবাচক প্রভাব পড়বে।” দীর্ঘমেয়াদে জিনপিংয়ের রাজনৈতিক অবস্থান নিয়েও তিনি সন্দেহ প্রকাশ করেন।
তিনি বলেন, “যেকোনো সংকটে কেউ না কেউ আপনার ওপর নারাজ হবেই।”
Comments