ভোমরা স্থলবন্দরে একটি মাত্র ডিজিটাল থার্মোমিটার দিয়ে চলছে করোনাভাইরাস শনাক্তের কাজ
একটি মাত্র ডিজিটাল থার্মোমিটার, দুইজন স্বাস্থ্য কর্মী ও একজন স্বেচ্ছাসেবক দিয়ে চলছে সাতক্ষীরা ভোমরা স্থলবন্দরে করোনাভাইরাস শনাক্তের কাজ। গতকাল শুক্রবার সকাল ১১টার দিকে সরেজমিনে সাতক্ষীরা ভোমরা স্থলবন্দরের ইমিগ্রেশন অফিস সংলগ্ন স্বাস্থ্য ইউনিটে গিয়ে দেখা যায় এমনই চিত্র।
কেউ বাংলাদেশি আবার কেউ ভারতীয়। ভারত থেকে আসা যাত্রীরা ইমিগ্রেশনের কাজ শেষ করার পর ইমিগ্রেশন পুলিশ তাদের শঙ্কেত দিচ্ছেন স্বাস্থ্য ইউনিটে যাওয়ার জন্য। সেখানে লম্বা লাইনে সবাই পাসপোর্ট হাতে দাঁড়িয়ে যাচ্ছেন। সেখানে একজন স্বাস্থ্য কর্মী ডিজিটাল থার্মোমিটার দিয়ে যাত্রীদের কপালে ঠেকিয়ে শরীরের তাপমাত্রা দেখছেন, একজন মাঝে মাঝে সচেতনতামূলক বক্তব্য দিচ্ছেন, একজন পাসপোর্ট থেকে যাত্রীদের নাম ঠিকানা লিখে রাখছেন। এসব স্বাস্থ্য কর্মীদের মুখে মাস্ক থাকলেও হাতে গ্লাভস নেই।
ভোমরা স্থলবন্দর করোনাভাইরাস স্বাস্থ্য ইউনিটে কর্মরত স্যানেটারি পরিদর্শক মো. সোহবান দ্য ডেইলি স্টারকে জানান, সকাল ছয়টা থেকে সন্ধ্যা ছয়টা পর্যন্ত প্রতিদিন একজন স্যানেটারি পরিদর্শক ছাড়াও দুই শিফটের প্রতি শিফটে আরও একজন স্বাস্থ্য পরিদর্শক ও একজন স্বেচ্ছাসেবক এখানে কাজ করছেন। একটি ডিজিটাল থার্মোমিটার ছাড়া অন্য কোনো যন্ত্রপাতি নেই। হাতে গ্লাভস নেই কেন জানতে চাইলে জানান গ্লাভস পরেন তারা।
তিনিসহ একজন স্বাস্থ্য কর্মী ও একজন স্বেচ্ছাসেবক দিয়ে এ কাজ করতে হিমশিম খাচ্ছেন উল্লেখ করে তিনি জানান, সকাল ১১টার মধ্যে ভারত থেকে আসা ১৬৭ জন যাত্রীর পরীক্ষা করেছেন তারা।
লম্বা লাইনে দাঁড়িয়ে থাকা কমলা রানী জানান, তিনি এসেছেন কলকাতা থেকে, যাবেন খুলনায়। সেখানে আত্মীয়-স্বজনদের বাড়িতে কয়েকদিন থেকে আবার ফিরবেন। কিন্তু তাদের (ভারত) পাশে বিএসএফের তল্লাশির নামে হয়রানি সহ্য করে এসে ইমিগ্রেশনের কাজ সম্পন্ন করতে লম্বা লাইনে দুই ঘণ্টার বেশি সময় লেগেছে। এরপর কাস্টমস হয়ে আবার বিএসএফের মুখোমুখি হতে হয়েছে। তারপর বাংলাদেশে ইমিগ্রেশনের কাজ শেষ করে আবার করোনাভাইরাস পরীক্ষার জন্য লম্বা লাইনে দাঁড়াতে আর ভালো লাগছে না।
তিনি আরও বলেন, এরপর বাংলাদেশে তল্লাশির নামে বিজিবির হয়রানি চলবে। কাস্টমসের পর আরও দুই দফা বিশেষ করে বাঁকাল চেকপোস্টে ব্যাগ তল্লাশির নামে হয়রানি সহ্য করে নির্দিষ্ট স্থানে যে কখন পৌঁছাবো তা জানা নেই। তিনি ক্ষোভের সঙ্গে বলেন, “প্রতিজন পাসপোর্ট যাত্রীকে যদি বিএসএফ ও বিজিবি কয়েকদফা তল্লাশি করে তাহলে দুই দেশের কাস্টমস বিভাগ থাকার দরকার কী?”
কলকাতার উত্তর মুকুন্দপুর থেকে আসা রুহুল আমিন, চম্পা খাতুন ও রহমত আলীর সঙ্গে ভোমরা করোনাভাইরাস পরীক্ষা করার লাইনে দাঁড়িয়ে থাকা অবস্থায় কথা হয়। তারা বলেন, “এত হয়রানি আর ঝামেলা সহ্য করা যায় না। তারপর করোনাভাইরাস শনাক্ত করার জন্য আবার এক ঘণ্টা লাইনে দাঁড়িয়ে থাকতে হয়। সেটা আবার নতুন বিড়ম্বনা।”
সাতক্ষীরার শ্যামনগর উপজেলার অপু মন্ডল ২৬ জানুয়ারি ভারতের বসিরহাটা মহকুমার গোবরডাঙ্গায় এক আত্মীয়ের বাড়িতে বেড়াতে গিয়েছিলেন। গতকাল শুক্রবার ফিরেছেন তিনি। তিনি বলেন, “ভারতের ঘোজাডাঙ্গা বন্দরে পাশে এসব নিয়ে কোনো চেকআপ নেই, আলোচনা নেই। আমাদের দেশে কারো কপালে ডিজিটাল থার্মোমিটার ঠেকাচ্ছে আবার কারো ঠেকাচ্ছে না। এসব দিয়ে কি শনাক্ত হবে? সবই অনেকটা লোক দেখানো।”
ভোমরা বন্দরে করোনাভাইরাস শনাক্তকরণ স্বাস্থ্য ইউনিটে কর্মরত স্বাস্থ্যকর্মী নূরুল ইসলাম জানান, তারা ভারত থেকে আসা প্রত্যেক পাসপোর্ট যাত্রীকে ডিজিটাল থার্মোমিটার দিকে শরীরের তাপমাত্রা দেখছেন। তাপমাত্রা ৯৮ ডিগ্রি সেলসিয়াসের ওপর হলে তাদের সর্দি, কাশি, গলাব্যথা, জ্বর, মাথাব্যথা আছে কি না দেখা হচ্ছে। পাশাপাশি পাসপোর্ট যাত্রীদের বলা হচ্ছে ১৪ দিন সাবধানে থাকতে। বাড়িতে গিয়ে ভালোভাবে হাত-মুখ ধুয়ে ও পোশাক পরিবর্তন করে তারপর অন্যদের সংস্পর্শে যেতে বলা হচ্ছে। পোল্ট্রি মুরগি ও ডিম বেশি করে ফুটিয়ে খেতে বলা হচ্ছে।
সাতক্ষীরা ভোমরা ইমিগ্রেশনের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা বিশ্বজিত সরকার বলেন, “বর্তমানে ভারত থেকে আসা সব যাত্রীকে বাধ্যতামূলকভাবে স্বাস্থ্য ইউনিটে যেতে হচ্ছে। তবে সেখানে লোকবল কম থাকায় দীর্ঘ সময় লাইনে দাঁড়াতে হচ্ছে যাত্রীদের।”
সাতক্ষীরা সিভিল সার্জন হুসাইন সাফায়েত বলেছেন, “লোকবল সঙ্কটের কারণে একটু সমস্যা হচ্ছে। একটি থার্মাল স্ক্যানার দেওয়া হয়েছিল। সেটি কাজ করছে না। যে কারণে একটি ডিজিটাল থার্মোমিটার দিয়ে কাজ চালানো হচ্ছে। ঢাকা থেকে আরও একটি ডিজিটাল থার্মোমিটার পাঠানো হচ্ছে, দু-একদিনের মধ্যে সেটি হাতে পাওয়া যাবে। সেটা হাতে পেলে আরও লোকবল বাড়ানো হবে। এছাড়া করোনাভাইরাস শনাক্ত হলে তাদের পৃথকভাবে রাখার জন্য সদর হাসপাতালে ছয় শয্যা বিশিষ্ট একটি ইউনিট খোলা হয়েছে।”
Comments