ঠিক সময়ে কাজ শেষ, বাঁচল ১৪০০ কোটি টাকা

একটি বিরল দৃষ্টান্ত স্থাপন করে সড়ক ও জনপথ বিভাগ (আরএইচডি) পরিকল্পিত সময়সীমার মধ্যে একটি মেগা প্রকল্পের কাজ শেষ করেছে। এতে সাশ্রয় হয়েছে প্রায় ১৪০০ কোটি টাকা।
নতুন তৈরি মেঘনা সেতু। ছবি: স্টার ফাইল ফটো

একটি বিরল দৃষ্টান্ত স্থাপন করে সড়ক ও জনপথ বিভাগ (আরএইচডি) পরিকল্পিত সময়সীমার মধ্যে একটি মেগা প্রকল্পের কাজ শেষ করেছে। এতে সাশ্রয় হয়েছে প্রায় ১৪০০ কোটি টাকা।

প্রকল্পের আওতায় ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক তিনটি নতুন সেতু তৈরি করা হয়েছে এবং তিনটি পুরোনো সেতু মেরামত করা হয়েছে। প্রকল্প কর্তৃপক্ষ গত বছরের মে মাসের মধ্যে শীতলক্ষ্যা, মেঘনা ও গোমতী নদীর ওপর নতুন সেতু তৈরি এবং গত বছরের ডিসেম্বরের মধ্যে পুরোনো সেতুর সংস্কার কাজ শেষ করে।

‘কাঁচপুর, মেঘনা এবং গোমতী দ্বিতীয় সেতু নির্মাণ ও বিদ্যমান সেতু পুনঃ নির্মাণ’ শীর্ষক প্রকল্পটির কাজ শেষ করার সময়সীমা ধরা হয়েছিলো ২০১৯ সালের ডিসেম্বর।

প্রকল্প পরিচালক আবু সালেহ মো. নুরুজ্জামান গতকাল শনিবার দ্য ডেইলি স্টারকে বলেছেন, “আমরা নির্ধারিত সময়ের মধ্যেই সব কাজ শেষ করেছি এবং আগামীকাল রবিবার একটি অনুষ্ঠানের মাধ্যমে আরএইচডির কাছে আনুষ্ঠানিক ভাবে এগুলো হস্তান্তর করবো।”

তিনি আরও বলেন, সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের, সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগের সচিব নজরুল ইসলাম, আরএইচডির প্রধান প্রকৌশলী আশরাফুল আলম এবং ঢাকায় নিযুক্ত জাপানের রাষ্ট্রদূত ইতো নওকি এই অনুষ্ঠানে যোগ দেবেন বলে আশা করা হচ্ছে।

ডেভেলপমেন্ট প্রজেক্ট প্রপোজাল (ডিপিপি) হিসেবে প্রকল্পটির ব্যয় ধরা হয়েছিলো আট হাজার ৪৮৬ কোটি ৯৪ লাখ টাকা। এর মধ্যে জাপান ইন্টারন্যাশনাল কো-অপারেশন এজেন্সির (জাইকা) ছয় হাজার ৪২৯ কোটি ২৯ লাখ টাকা দেওয়ার কথা ছিলো।

আরএইচডির অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী নুরুজ্জামান বলেছেন, “সব কাজ শেষ হওয়ার পর প্রকল্পের ব্যয় দাঁড়িয়েছে সাত হাজার ৯৮ কোটি ৭৩ লাখ টাকা। যার অর্থ আমরা প্রায় এক হাজার ৩৮৮ কোটি টাকা সাশ্রয় করেছি।”

এই সাফল্যের কারণ জানতে চাইলে নুরুজ্জামান বলেন, “প্রকল্পটির কাজ সময়মতো শেষ করতে পারাটাই ছিলো মূল কারণ।” জাপানিদের যথাযথ পরিকল্পনা এবং সরকারের গৃহীত পদক্ষেপগুলোও সময়মতো কাজ শেষ করতে সহায়তা করেছিলো।

আরএইচডির প্রধান প্রকৌশলী আশরাফুল আলম বলেছেন, জাপানিদের নির্মাণ ও পরিকল্পনা পর্যায়ে প্রস্তুতি নেওয়া ছিলো সময়ের আগেই।

তিনি দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, “জাপানিরা নকশা, তহবিল এবং বাস্তবায়নের সঙ্গে জড়িত ছিলো। যা প্রকল্পটি সময়মতো শেষ করতে সহায়তা করেছে।”

আশরাফুল আলম বলেন, জমি অধিগ্রহণে সমস্যা হওয়ার কারণেই বেশিরভাগ মেগা প্রকল্পের কাজ শেষ করতে দেরি হয়। অনেক ক্ষেত্রে দেরির কারণ হয়ে দাঁড়ায় তহবিল। তহবিল পরিচালনায় দেরি হওয়ার কারণে কর্তৃপক্ষকে প্রকল্পটি নতুন করে পরিকল্পনা করতে বাধ্য হতে হয়।

এই প্রকল্পের ক্ষেত্রে অল্প জমি অধিগ্রহণ করতে হয়েছিলো। প্রকল্পের ক্ষেত্রটি ছিলো সুনির্দিষ্ট এবং বিস্তৃত অঞ্চল জুড়ে কাজ করতে হয়নি।

সময়মতো কোনও মেগা প্রকল্প শেষ করা এবং এত পরিমাণে টাকা বেঁচে যাওয়ার এটা বিরল উদাহরণ কিনা জানতে চাইলে আশরাফুল আলম তা স্বীকার করে নেন।

“এটা একটা বড় স্বস্তি”

নতুন সেতু তিনটি তৈরির আগে বন্দর নগরী চট্টগ্রাম এবং রাজধানী ঢাকার মধ্যকার চার লেনের রাস্তাটি মেঘনা এবং গোমতী সেতুতে এসে দুই লেনে রূপ নিতো। পুরাতন কাঁচপুর সেতুটি চার লেনের হলেও তা পর্যাপ্ত প্রশস্ত ছিলো না।

এমন পরিস্থিতিতে এই রাস্তায় চলাচল করা যানবাহনগুলো সেতুগুলোর কাছে পৌঁছার পর প্রায়শই সেখানে যানজট হতো। এই যানজট ছুটির দিন এবং ঈদের আগে মহাসড়কে গাড়ি বেড়ে যাওয়ার কারণে ভয়াবহ রূপ নিতো।

দেশের ব্যস্ততম এই ১৯২ কিলোমিটার মহাসড়ক পার হতে যানবাহনগুলোর ১০ থেকে ১২ ঘণ্টা পর্যন্ত সময় প্রয়োজন হতো। অথচ, এই পথ পার হতে পাঁচ ঘণ্টার বেশি সময় প্রয়োজন হওয়ার কথা না।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গত বছর মার্চে নতুন কাঁচপুর সেতু এবং গত বছর মে মাসে মেঘনা ও গোমতী সেতু উদ্বোধন করার পর পরিস্থিতি বদলে যায়। এর ফলে ঈদের সময়েও যানজট মুক্ত রাস্তা দেখা যায়।

তিনটি পুরোনো সেতু সংস্কারের কাজ চলতি বছরের ৩ জানুয়ারিতে শেষ হয়েছে। ইতোমধ্যে তা যানবাহন চলাচলের জন্য উন্মুক্ত করে দেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন নুরুজ্জামান। তিনি আরও বলেন, অতিথিদের সময়সূচী মিলিয়ে সেতু হস্তান্তর করতে কিছুটা সময় লেগেছে।

ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের একজন নিয়মিত যাত্রী নভিদ ইয়াছির। তিনি ঢাকার একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে কর্মরত। নাভিদ দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, “ঢাকা থেকে চট্টগ্রাম পর্যন্ত রাস্তায় যাত্রা এখন বেশ আরামদায়ক।”

“আমি সব সময় চট্টগ্রামে যাওয়ার পথে কাঁচপুর এবং আরও কয়েকটি জায়গায় দীর্ঘ যানজটের মুখোমুখি হয়েছি। তবে এখন পরিস্থিতি বদলেছে,” যোগ করেন তিনি।

ঢাকা চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির প্রাক্তন সিনিয়র সহ-সভাপতি এমএস শাকিল চৌধুরী জানিয়েছেন, চট্টগ্রাম বন্দরের মাধ্যমে প্রায় ৮৫ থেকে ৯০ শতাংশ রপ্তানি ও আমদানি করা হয়। সরু সেতুগুলোর কারণে যানজটে ব্যবসায় লোকসান হয়।

তিনি গতকাল দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, “নতুন সেতু তৈরি হওয়াতে আমাদের বড় স্বস্তি হয়েছে।”

Comments

The Daily Star  | English

3 quota protest leaders held for their own safety: home minister

Three quota protest organisers have been taken into custody for their own safety, said Home Minister Asaduzzaman Khan

10m ago