এক বছরে ২৪ হাজারের বেশি অগ্নিকাণ্ড

সরকারি এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ২০১৮ সালে সারা দেশে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটেছিলো ১৯ হাজার ৬৪২টি। ২২ দশমিক পাঁচ শতাংশ বেড়ে ২০১৯ সালে সারা দেশে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটেছে ২৪ হাজার ৭৪টি।

সরকারি এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ২০১৮ সালে সারা দেশে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটেছিলো ১৯ হাজার ৬৪২টি। ২২ দশমিক পাঁচ শতাংশ বেড়ে ২০১৯ সালে সারা দেশে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটেছে ২৪ হাজার ৭৪টি।

অগ্নিকাণ্ডের এক তৃতীয়াংশ ঘটনা ঘটেছে প্রধানত আবাসস্থানে। সংখ্যার হিসেবে যা আট হাজার ৪৬৬টি। প্রধানত বৈদ্যুতিক শর্ট সার্কিটের কারণে এসব ঘটনা ঘটেছে বলে দেখা যায় বাংলাদেশ ফায়ার সার্ভিস এবং সিভিল ডিফেন্সের সংকলিত তথ্য থেকে।

ফায়ার সার্ভিস কর্মকর্তারা বলছেন, দ্রুত নগরায়ণ এবং ইলেকট্রনিক পণ্যের যথেচ্ছা ব্যবহার অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা বৃদ্ধির অন্যতম প্রধান কারণ। তারা অগ্নিকাণ্ড প্রতিরোধে জনগণের মধ্যে সচেতনতা বৃদ্ধির ওপর জোর দিয়েছেন।

এই উত্থানকে উদ্বেগজনক হিসেবে উল্লেখ করে ফায়ার সার্ভিসের মহাপরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল সাজ্জাদ হোসাইন বলেছেন, “গতবছর কেন এই সংখ্যা বেড়েছে তা নিয়ে আমরা কোনো গবেষণা করিনি, তবে পার্থক্য তাৎপর্যপূর্ণ।”

বাসা-বাড়ির ক্ষেত্রে আগুনের বেশিরভাগ ঘটনা নিম্নমানের বৈদ্যুতিক পণ্যের কারণে ঘটেছিলো বলে তিনি উল্লেখ করেন।

“আমরা মাঝে মাঝে নিম্নমানের মাল্টিপ্লাগ ব্যবহার করে বেশ কয়েকটি ডিভাইস ব্যবহার করি। এমনকি আমরা টেম্পার নষ্ট হয়ে যাওয়া বৈদ্যুতিক তার দীর্ঘ দিন ধরে ব্যবহার করি।”

গত বছর অগ্নিকাণ্ডের ঘটনাগুলোর মধ্যে ৩৯ শতাংশ বৈদ্যুতিক শর্ট সার্কিট এবং ১৮ শতাংশ চুলার আগুন থেকে ঘটেছিলো বলে সম্প্রতি প্রকাশিত প্রতিবেদনে বলা হয়েছে।

গত বছর বেড়েছে হতাহতের সংখ্যাও। ২০১৯ সালে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় কমপক্ষে ১৮৫ জনের মৃত্যু হয়েছে এবং আহত হয়েছেন ৫৮৬ জন। ২০১৮ সালে মৃতের সংখ্যা ছিলো ১৩০ জন।

গত বছর ফেব্রুয়ারি মাসে চকবাজার ট্র্যাজেডিতে ৭০ জন মারা গিয়েছিলেন। একটি অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় সর্বোচ্চ মৃত্যুর সংখ্যা ছিলো এটি। এছাড়াও রাজধানীর বনানীতে এফআর টাওয়ার, ভাসানটেক বস্তি, কেরানীগঞ্জের একটি প্লাস্টিক কারখানা এবং গাজীপুরের একটি ফ্যান কারখানায় বিধ্বংসী আগুন ছড়িয়ে পড়েছিলো।

সাজ্জাদ হোসাইন বলেন, নিয়মিত ভাবে বৈদ্যুতিক সরঞ্জাম পর্যবেক্ষণ করে পরিবর্তন করা হলে অগ্নিকাণ্ডের সংখ্যা কমিয়ে আনা সম্ভব।

দ্য ডেইলি স্টারকে তিনি বলেন, “উন্নত দেশগুলো নিয়মিতভাবে এই কাজ করে। আমাদের দেশেও এই ব্যবস্থা চালু করা উচিত।”

রাজধানীর শ্যামবাজার। গতকাল বিকালে সেখানে একটি ভবনে থাকা প্লাস্টিকের ব্যারেলের গুদামে আগুন লাগে। ভবনটি থেকে ঘন ধোঁয়া বের হয়ে আচ্ছন্ন হয়ে যায় চারপাশ। ছবি: রাশেদ সুমন

বাংলাদেশ জাতীয় বিল্ডিং কোড অনুসারে, জরুরী নির্গমনের পথগুলো এমনভাবে ডিজাইন করতে হবে যাতে সেগুলো কোনোভাবেই অবরুদ্ধ না থাকে। ভবনের জরুরী নির্গমনের দরজাগুলো বিশেষভাবে চিহ্নিত থাকবে এবং সহজে সেখানে যাওয়া যায় এমন সরাসরি রাস্তা থাকবে।

ফায়ার সার্ভিসের মহাপরিচালক জানিয়েছেন, সচেতনতার অভাব এবং অগ্নি নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণে অনীহার কারণে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা বাড়ছে।

“আমাদের অবশ্যই বুঝতে হবে যে আমাদের জীবন ও সম্পত্তির স্বার্থেই এই ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।”

ফায়ার সার্ভিসের তথ্য মতে, গত বছর অগ্নিকাণ্ডের ঘটনাগুলোর মধ্যে চার হাজার ১৫৩টি ঘটেছে জ্বলন্ত সিগারেট থেকে। এর অর্থ আগুন লাগার তৃতীয় বৃহত্তম কারণ এই সিগারেটের আগুন। অগ্নিকাণ্ডের মোট ঘটনাগুলোর ১৫ শতাংশ ঘটেছে সিগারেটের আগুন থেকে।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, সিগারেটের আগুন থেকে সূত্রপাত হয়ে অগ্নিকান্ডের ঘটনায় গত বছর প্রায় ১৮ কোটি টাকার সম্পত্তির ক্ষতি হয়েছে।

এতে আরও উল্লেখ করা হয়েছে, গত ১৫ বছরে আগুনের ঘটনা তিনগুণেরও বেশি বেড়েছে।

২০০৪ সালে এই জাতীয় ঘটনার সংখ্যা ছিলো সাত হাজার ১৪০টি।

২০১৯ সালে, ৯৯৭টি শিল্প কারখানা এবং ১৬৫টি পোশাক কারখানায় অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটেছে। এছাড়াও,  ঢাকা, চট্টগ্রাম ও রংপুরের বস্তিতে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটেছে ১৭৪টি।

আগুন প্রতিরোধের উপায় সম্পর্কে জানতে চাইলে সাজ্জাদ হোসাইন বলেন, তারা নিয়মিত বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে এবং বস্তিতেও সচেতনতামূলক কর্মসূচি পালন করেন।

“এই বছর, আমরা সচেতনতা কর্মসূচি আরও জোরদার করব।”

তিনি বলেন, আগুন লাগার খবর পেলে যথা সম্ভব দ্রুত সেখানে পৌঁছতে তারা রাজধানীর প্রধান পয়েন্টগুলোতে অগ্নিনির্বাপক গাড়িগুলো প্রস্তুত রেখেছেন।

গতকাল সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে ইলেকট্রনিক্স সেফটি অ্যান্ড সিকিউরিটি অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের সভাপতি মোতাহের হোসেন খান বলেন, “সরকার সিলেট ও চট্টগ্রামকে স্মার্ট সিটিতে পরিণত করার উদ্যোগ নিয়েছে। তবে রাজধানীর জন্য এ জাতীয় কোনো উদ্যোগ নেওয়া হয়নি।”

তিনি আরও বলেন, এখন সময় এসেছে সারা দেশে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা মোকাবেলায় সরকারের একটি আধুনিক নিরাপত্তা ব্যবস্থা চালু করার।

Comments

The Daily Star  | English
Detained opposition activists

The flipside of the democracy carnival

Bereft of the basic rights to assemble and express, let alone protest, the people of Bangladesh are currently bearing the brunt of the coercive apparatuses of the state.

9h ago