বঙ্গবন্ধু হত্যার পেছনে জড়িতদের খুঁজে বের করতে কমিশন গঠনের দাবি শেখ সেলিমের

বঙ্গবন্ধু হত্যার পেছনে জড়িতদের খুঁজে বের করতে তদন্ত কমিশন গঠনের দাবি জানিয়েছেন আওয়ামী লীগের সিনিয়র সংসদ সদস্য শেখ ফজলুল করিম সেলিম। দেশের বিরুদ্ধে কারা ষড়যন্ত্র করেছিল তা ভবিষ্যত প্রজন্মকে জানানোর জন্য হলেও এটি করার দাবি জানিয়েছেন তিনি।
শেখ ফজলুল করিম সেলিম। স্টার ফাইল ফটো

বঙ্গবন্ধু হত্যার পেছনে জড়িতদের খুঁজে বের করতে তদন্ত কমিশন গঠনের দাবি জানিয়েছেন আওয়ামী লীগের সিনিয়র সংসদ সদস্য শেখ ফজলুল করিম সেলিম। দেশের বিরুদ্ধে কারা ষড়যন্ত্র করেছিল তা ভবিষ্যত প্রজন্মকে জানানোর জন্য হলেও এটি করার দাবি জানিয়েছেন তিনি।

আজ মঙ্গলবার জাতীয় সংসদে রাষ্ট্রপতির ধন্যবাদ প্রস্তাবের ওপর আনা বক্তব্যে এ দাবি করেন শেখ সেলিম। বঙ্গবন্ধুকে হত্যার পর ব্রিগেডিয়ার খালেদ মোশাররফের ভূমিকা নিয়েও প্রশ্ন তোলেন তিনি।

সেলিম তার বক্তব্যে বঙ্গবন্ধুর খুনিদের আশ্রয়দাতা দেশগুলোর কঠোর সমালোচনা করেন। তারা ডাবল স্ট্যান্ডার্ড নীতি গ্রহণ করেছে বলেও অভিযোগ করেন তিনি। বঙ্গবন্ধুর খুনিদের ফেরত না দেয়ার অভিযোগ তুলে সেলিম বলেন, “বঙ্গবন্ধুকে হত্যার পর কী করে তোমরা খুনি সরকারকে স্বীকৃতি দাও। তাদের কাছে আমাদের মানবতা ও গণতন্ত্র শিখতে হবে না”।

শেখ সেলিম বলেন, “আমাদের এখন আর কারো কাছে ভিক্ষা করতে হয় না। বাংলাদেশ আজ মধ্যম আয়ের দেশ হয়েছে। আগামীতে আমরা উন্নত দেশে উন্নীত হব। তোমাদের চোখ রাঙ্গানি সহ্য করব না। অপরাধীদের আমাদের কাছে ফেরত দাও। তারেক জিয়া তো মৃত্যুদন্ডপ্রাপ্ত আসামি নয় তাকে কেন ফেরত দাও না। অপরাধীদের আশ্রয় দাও আর বড় বড় কথা বলো। এরা গণতন্ত্রের কথা বলে, মানবতার কথা বলে- নিজেদের স্বার্থ ছাড়া দুনিয়ায় কিছু তারা করে না”। 

তিনি প্রধানমন্ত্রী ও পররাষ্ট্রমন্ত্রীকে বঙ্গবন্ধুর খুনিদের দেশে ফিরিয়ে আনার ব্যবস্থা করার দাবি জানান।

বঙ্গবন্ধুকে হত্যার সঙ্গে দেশি-বিদেশি ষড়যন্ত্র ছিল দাবি করে শেখ সেলিম বলেন, “মোস্তাক-জিয়া বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করে একাত্তরের পরাজয়ের প্রতিশোধ নেয়। তারা নিজেদের রক্ষার জন্য ইনডেমনিটি দিয়ে বঙ্গবন্ধু হত্যার বিচার বন্ধ করে দেয়।  হত্যার পরদিন ১৬ আগস্ট চীন, পাকিস্তান, লিবিয়া স্বীকৃতি দেয়। দুইদিনের মধ্যে যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্যসহ অনেক দেশ খুনি সরকারের সাথে কাজ করার সম্মতি প্রকাশ করে। নৃশংস হত্যাকাণ্ডের মধ্যদিয়ে একটি নির্বাচিত সরকারকে উৎখাতকারীদের সাথে কাজ করার সম্মতি দেয়। এখন তারা মানবাধিকারের কথা বলে”।

তিনি বলেন, “বঙ্গবন্ধুকে হত্যার সময় সেনাপ্রধান কে এম শফিউল্লাহ কোনো পদক্ষেপ নেয়নি। আড়াইঘণ্টার মধ্যে একটি গাড়িও যদি মুভ করতো। শফিউল্লাহ ওই আড়াই ঘণ্টা বসে কী করেছেন? হত্যার পর ব্রিগেডিয়ার খালেদ মোশাররফ সরকারের প্রতি আনুগত্য স্বীকার করার জন্য রক্ষীবাহিনীকে রেডিওকে পাঠানোর কথা বললেন”।

বঙ্গবন্ধুকে হত্যার পেছনে সেনাবাহিনীর সমস্ত সিনিয়র অফিসাররা যুক্ত ছিল উল্লেখ করে তিনি বলেন, “বঙ্গবন্ধুকে হত্যার পর খুনি ডালিম রেডিওতে গিয়ে ঘোষণা করেন শেখ মুজিবকে হত্যা করা হয়েছে। সারা দেশে সামরিক আইন জারির কথা বলেন। এরপর খন্দকার মোস্তাক রেডিওতে এসে খুনি মোস্তাককে প্রেসিডেন্ট ঘোষণা করা হয়। রেডিওতে সরকারের প্রতি আনুগত্য ঘোষণা করেন সেনাপ্রধান শফিউল্লাহ, নৌবাহিনীর প্রধান এম এইচ খান, বিমান বাহিনীর প্রধান এ কে খন্দকার, বিডিআর প্রধান। হত্যার পর একজন সিনিয়র অফিসারও বঙ্গবন্ধুর লাশ দেখতে যায়নি। সবাই জড়িত না থাকলে অফিসারসহ দেশের এক লাখ সেনাসদস্য দুইশ জনের কাছে আত্মসমর্পণ করতে পারে? সেই সময় খুনিরা মাদবরি করছিল আর সিনিয়র অফিসাররা চুপ করে ছিলেন”।

শেখ সেলিম বলেন, “৩ নভেম্বর ক্যু করে খালেদ মোশররফ আসলেন।  তিনি বঙ্গবন্ধুর খুনি মোস্তাকের সাথে বঙ্গভবনে গিয়ে সমঝোতা করেন। ক্যুর পর খুনিদের বিদেশে পালিয়ে যেতে সুযোগ দিয়েছিলেন খালেদ মোশররফ। খুনির যখন ইন্টার কন্টিনেন্টাল ও বাংলামোটর এলাকা দিয়ে যাচ্ছিলেন তখন সেন্যরা কী করবেন জানতে চাইলে তিনি বলেন, ওদের ছেড়ে দাও। সেনা কর্মকর্তারা বঙ্গবন্ধু হত্যার সাথে জড়িত। পাকিস্তানভাবাপন্ন আন্তর্জাতিক ষড়যন্ত্রের অংশ হিসেবে হয়েছে। শুধু কয়েকজন মেজর গিয়ে মারছে তা নয়। তাদের সাথে অনেকে বেসামরিক অফিসাররাও জড়িত। অনেক ব্যবসায়ীও এর পেছনে ছিল”।

 

Comments

The Daily Star  | English

Ex-public administration minister Farhad arrested

Former Public Administration minister Farhad Hossain was arrested from Dhaka's Eskaton area

3h ago