কুয়েতে ‘মানবপাচার ও অবৈধ ভিসা’ বাণিজ্যে ৩ বাংলাদেশি

কুয়েতে একটি ক্লিনিং কোম্পানির সুপারভাইজার থেকে অবৈধভাবে কোটিপতি বনে যাওয়ার অভিযোগ উঠেছে এক বাংলাদেশির বিরুদ্ধে। তিনি বাংলাদেশের সংসদ সদস্য বলেও কুয়েতের সংবাদমাধ্যম আরব টাইমস, আল-কাবাস, কুয়েত টাইমস ও এমবিএস নিউজের প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে।
Kuwait
ছবি: সংগৃহীত

কুয়েতে একটি ক্লিনিং কোম্পানির সুপারভাইজার থেকে অবৈধভাবে কোটিপতি বনে যাওয়ার অভিযোগ উঠেছে এক বাংলাদেশির বিরুদ্ধে। তিনি বাংলাদেশের সংসদ সদস্য বলেও কুয়েতের সংবাদমাধ্যম আরব টাইমস, আল-কাবাস, কুয়েত টাইমস ও এমবিএস নিউজের প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে।

তবে কুয়েতের সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত প্রতিবেদনের বিষয়ে নিশ্চিত হতে পারেনি দ্য ডেইলি স্টার। কুয়েতের সংবাদমাধ্যমগুলোর প্রতিবেদনের বলা হয়, এই বাংলাদেশি সংসদ সদস্য কুয়েতে অবৈধ ভিসা ব্যবসায় জড়িত। মানবপাচার ও অবৈধ ভিসা ব্যবসায় জড়িত যে তিন বাংলাদেশিকে কুয়েতের নিরাপত্তা কর্তৃপক্ষ খুঁজছেন, তাদের মধ্যে তিনিও একজন।

নির্ভরযোগ্য সূত্রের বরাত দিয়ে এসব সংবাদমাধ্যমের প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে, কুয়েতের একটি শীর্ষ পর্যায়ের ক্লিনিং কোম্পানিতে সুপারভাইজার হিসেবে কাজ শুরু করেন এই বাংলাদেশি সংসদ সদস্য। সেখানে চাকরি নিতে মোটা অঙ্কের টাকাও খরচ করেন তিনি। চাকরি করতে করতেই এক সময় তিনি কোম্পানির একজন অংশীদার হয়ে যান এবং ইচ্ছে মতো প্রতিষ্ঠান পরিচালনা করতে শুরু করেন। পাশাপাশি তিনি ঠিকাদারি ব্যবসা শুরু করেন। লাভ হবে না জেনেও তিনি কুয়েতে বেশ কয়েকটি ঠিকাদারির কাজ নেন। মূল উদ্দেশ্য ছিল ঠিকাদারি কাজের আড়ালে বিপুল সংখ্যক বাংলাদেশি শ্রমিক কুয়েতে নিয়ে যাওয়া।

প্রতিবেদনে আরও উল্লেখ করা হয়েছে, বাংলাদেশ থেকে শ্রমিক পাঠানোর কাজ পেতে তিনি কুয়েত সরকারের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের পাঁচটি দামি গাড়ি উপহার দিয়েছিলেন। এরপর কুয়েতে বিপুল সংখ্যক শ্রমিক নিয়ে যান তিনি। তার বেশিরভাগ সম্পদ তিনি যুক্তরাষ্ট্রে স্থানান্তর করেছেন বলে সন্দেহ করা হচ্ছে। তার স্ত্রীও একজন সংসদ সদস্য।

তিন আসামির আরেকজন সুলতান নামে পরিচিত। বর্তমানে তিনি কুয়েতের বাইরে আছেন। তবে বড় বড় কোম্পানির কর্মকর্তাদের সঙ্গে তার যোগাযোগ রয়েছে। সেই সুবাদে তিনি এখনো বাংলাদেশ থেকে শ্রমিক নিয়ে যাচ্ছেন। শ্রমিক নিয়ে যেতে দালালের মাধ্যমে নেওয়া মোটা অঙ্কের অর্থ তার কুয়েতের বাইরের ব্যাংক অ্যাকাউন্টে জমা হয়।

সূত্রের বরাত দিয়ে প্রতিবেদনে বলা হয়, তাদের কারণে ক্ষতিগ্রস্ত কয়েকজন কর্মচারী ভিডিও এবং অডিও প্রমাণ জমা দিয়েছেন। সেগুলোতে দেখা গেছে, এসব শ্রমিক অন্য প্রতিষ্ঠানে যেতে অনুমতিপত্রের জন্য অর্থ দিয়েছেন।

কুয়েতের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি) আইনি প্রক্রিয়া শেষে ওই কোম্পানির কর্মকর্তাদের জিজ্ঞাসাবাদের জন্য তলব করবে বলে প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে।

এর আগে, গত ১২ ফেব্রুয়ারি অর্থপাচার, ভিসা জালিয়াতি ও মানবপাচারের অভিযোগে অজ্ঞাতনামা আরেক বাংলাদেশিকে গ্রেপ্তারের তথ্য প্রকাশ করে আরব টাইমস ও আল-কাবাস।

ওই প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, অজ্ঞাতনামা ওই বাংলাদেশি তিন সদস্যের চক্রের একজন। বাকি দুইজন কুয়েত থেকে পালিয়েছেন। কুয়েতের বড় বড় তিন কোম্পানির গুরুত্বপূর্ণ পদ এই তিনজনের দখলে ছিল। তারা বড় অঙ্কের অর্থের বিনিময়ে কুয়েতে ২০ হাজারের বেশি বাংলাদেশি শ্রমিক নিয়ে গেছেন বলে ধারণা করা হচ্ছে। বিনিময়ে তারা ৫০ মিলিয়ন দিনারের বেশি আয় করেছেন। বাংলাদেশি মুদ্রায় যা ১,৩৯৮ কোটি টাকার বেশি।

এই চক্রের সঙ্গে জড়িত বাংলাদেশি সংসদ সদস্য বাংলাদেশের একটি ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদে আছেন। তিনি কুয়েতে গিয়ে ৪৮ ঘণ্টার বেশি অবস্থান করতেন না। সিআইডি’র তদন্তের তথ্য জানতে পেরে এক সপ্তাহ আগেই তিনি কুয়েত থেকে পালিয়ে যান। তার দায়িত্বে থাকা কোম্পানির শ্রমিকদের ৫ মাসের বেশি সময়ের বেতন বকেয়া পড়েছে বলে উল্লেখ করা হয় প্রতিবেদনে।

সিআইডি’র তদন্তে উঠে এসেছে, কুয়েত সরকারের চুক্তি অনুযায়ী বাংলাদেশ থেকে শ্রমিক নিয়ে যেতেন তিনি। ভিসা জালিয়াতির মাধ্যমে এসব শ্রমিকদের সেখানে নিয়ে যাওয়া হতো। কিন্তু চুক্তির চেয়ে অনেক কম বেতন দেওয়া হতো তাদের।

বাংলাদেশেও এই তিনজনের একটি বড় নেটওয়ার্ক আছে। তাদের হয়ে যারা কাজ করেন, তারা প্রতিটি ভিসার জন্য গড়ে ১,৮০০ থেকে ২,২০০ দিনার পান। আর ২,৫০০ থেকে ৩,০০০ দিনারে ভিসা বিক্রি করেন।

Comments

The Daily Star  | English

Public medical colleges: 86 doctors, 136 students punished since August 5

Over the last two months, at least 86 physicians and 136 medical students at eight public medical colleges and hospitals across the country have faced different punitive actions over various allegations, including “taking a stance against” the quota movement.

1h ago