কর্ণফুলীতে সাত মিটার পলিথিনের স্তর, ড্রেজার ফিরে গেছে চীনে

যত্রতত্র ফেলা হচ্ছে পলিথিন ও প্লাস্টিক বর্জ্য। ছবি: স্টার

চট্টগ্রামের কর্ণফুলীর তলদেশে পলিথিনের স্তর জমায় ব্যাহত হচ্ছে নদীটির খননকাজ। একইসঙ্গে খননের কাজে ২০১৯ সালের মে মাসে চীন থেকে আনা সাকশন ড্রেজারটিও ফেরত পাঠানো হয়েছে।

চলমান পরিস্থিতিতে গত ডিসেম্বরে খননকাজের জন্য আধুনিক ‘গ্র্যাব ড্রেজার’ আনার প্রস্তাব দেয় এই কাজে নিয়োজিত ঠিকাদার প্রতিষ্ঠান।

বাংলাদেশ প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) সাম্প্রতিক এক গবেষণায় দেখা গেছে, কর্ণফুলীর অনেক স্থানে পলিথিন ও প্লাস্টিকের দুই থেকে সাত মিটার আকারের স্তর জমেছে।

চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের (সিপিএ) সূত্র বলেছে, এ কারণে কর্ণফুলীর নাব্যতাও ব্যাহত হচ্ছে।

২০১৯ সালের মে’তে কর্ণফুলীর নাব্যতা ফিরিয়ে আনতে ২৫৮ কোটি টাকা ব্যয়ে ‘সদরঘাট থেকে বাকলিয়ার চর খনন’ প্রকল্প শুরু করে সিপিএ। চার বছরের এ প্রকল্পটি ২০২৩ সালে শেষ হওয়ার কথা রয়েছে বলে জানিয়েছে সিপিএ সূত্র।

সিপিএ’র চিফ হাইড্রোগ্রাফার কমান্ডার ও প্রকল্প পরিচালক এম আরিফুর রহমান বলেছেন, “গত বছরের সেপ্টেম্বরে তিনটি ছোট ড্রেজার দিয়ে খননকাজ শুরু করা হয়। কিন্তু নদীর তলদেশে জমে থাকা পলিথিনের কারণে সেই কাজও থেমে যায়।”

তিনি বলেন, “পাইপ লাইনের কাজ শেষে গত বছরের ৬ মে থেকে খননকাজ শুরু করে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। কিন্তু, কাজ শুরু করেই হোঁচট খায় তারা।”

“নদীর তলদেশে অতিরিক্ত পলিথিনের কারণে সাকশন ড্রেজার আটকে যায়। আর এটা একবার আটকে গেলে পরিষ্কার করতে অনেক সময় লাগে,” যোগ করেন তিনি।

এ কারণে কাজের অগ্রগতি খুব কম ছিল বলে উল্লেখ করেন তিনি।

তিনি বলেন, “প্রতিদিন আমাদের ১৮ ঘণ্টা কাজ করার কথা থাকলেও আমরা এক ঘণ্টা খননকাজ করতে পারতাম। পরে বুয়েটের ভৌগলিক বিশেষজ্ঞ দল একটি গবেষণা চালায়। তাতে দেখা গেছে, নদীর তলদেশে দুই থেকে সাত মিটার পর্যন্ত পলিথিন ও প্লাস্টিকের স্তর আছে। এখন স্থানীয় গ্র্যাব ড্রেজার দিয়ে খননের কাজ করা হচ্ছে।”

প্রকল্পের প্রায় ১৮ শতাংশ কাজ শেষ হয়েছে বলে জানান আরিফুর।

আরিফুর রহমান জানান, নগরের বাসিন্দারা ৩৭টি খালে পলিথিন ফেলে। সেগুলো কর্ণফুলীতে এসে জমা হয়।

“এ অবস্থা থেকে মুক্তি পেতে হলে সবাইকে সচেতন হতে হবে। পাশাপাশি নিয়মিত খাল পরিষ্কার করতে হবে,” যোগ করেন তিনি।

সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, আরিফুর রহমানের অভিযোগ সত্য।

চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাম্মদ শামসুদ্দৌহা বলেছেন, “এ কথা সত্য যে, কর্ণফুলীর তলদেশে পলিথিনের স্তর জমেছে। তবে, এগুলো গত দুই বা পাঁচ বছরে জমেনি। বহু বছর ধরে মানুষের অসচেতনতার ফল এটি।”

নগরীর খালগুলো কেন নিয়মিত পরিষ্কার করা হচ্ছে না, জানতে চাইলে তিনি বলেন, “নিয়মিত খাল পরিষ্কার করার মতো সরঞ্জাম ও জনবল আমাদের নেই।”

তিনি আরও বলেন, “অনেক অঞ্চলে খালের পাড় দখল হয়ে আছে। সেসব অঞ্চলে সিটি করপোরেশনের গাড়ি ঢুকতে পারে না।”

“বর্তমান মেয়র দায়িত্ব নেওয়ার পর সিটি করপোরেশন গত চার বছরে প্রতিটি ঘর থেকে বর্জ্য সংগ্রহ করছে। ফলে, খালে পলিথিন ফেলার পরিমাণ অনেক কমেছে। ভবিষ্যতে তা পুরোপুরি বন্ধ হয়ে যাবে বলে আমাদের বিশ্বাস,” যোগ করেন নির্বাহী কর্মকর্তা শামসুদ্দৌহা।

এই কর্মকর্তা আরও জানান, নগরের জলাবদ্ধতা নিরসনে একটি প্রকল্প হাতে নিয়েছে চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (সিডিএ)। তাই খাল পরিষ্কার করার দায়িত্বও তাদের।

তবে, সিডিএ প্রকল্পটি শুরু করলেও সেটি বাস্তবায়ন করছে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী।

এই প্রকল্পের পরিচালক লেফটেন্যান্ট কর্নেল মো. শাহ আলী বলেছেন, “গত বছর চাক্তাইসহ নগরের বেশিরভাগ খাল পরিষ্কার করা হয়। কিন্তু, সেগুলো আবারও পলিথিনে ভরে গেছে।”

“খাল পরিষ্কার চূড়ান্ত সমাধান নয়। এর জন্য মানুষের সচেতন হওয়া প্রয়োজন,” যোগ করেন তিনি।

Comments

The Daily Star  | English

BNP struggles to rein in the rogues

Despite repeated warnings from the top leadership and disciplinary measures, the BNP appears to be failing to maintain control over its rank and file, with leaders and activists across the country allegedly involved in crimes ranging from extortion to rape and murder.

8h ago