শীর্ষ খবর
হামরা এ্যালা কোনটে যামো

তিস্তার ভাঙনে নিঃস্ব ৪০ পরিবারের আর্তি

“হামরা এ্যালা কোনটে যামো। জমিজমা সোকগুলায় তিস্তা নদীর প্যাটোত চলি গ্যাইছে। হামার টাকা কড়ি নাই মাটি কিনবার”— এভাবেই নিজেদের বেদনার কথা জানাচ্ছিলেন তিস্তার ভাঙনে নিঃস্ব ৪০ পরিবার।
Tista
অবরুদ্ধ হয়ে পড়েছেন তিস্তার ভাঙনে নিঃস্ব ৪০ পরিবার। ছবি: স্টার

“হামরা এ্যালা কোনটে যামো। জমিজমা সোকগুলায় তিস্তা নদীর প্যাটোত চলি গ্যাইছে। হামার টাকা কড়ি নাই মাটি কিনবার”— এভাবেই নিজেদের বেদনার কথা জানাচ্ছিলেন তিস্তার ভাঙনে নিঃস্ব ৪০ পরিবার।

সব হারিয়ে তারা আশ্রয় নিয়েছেন লালমনিরহাটের হাতীবান্ধা উপজেলার ডাউয়াবাড়ি ইউনিয়নের খুদ্দবিছনদই গ্রামের একটি কাঁচা রাস্তার পাশে। দীর্ঘ দিন ধরে জেলা পরিষদের মালিকানাধীন জমির ওপর অস্থায়ী ঘর নির্মাণ করে তারা বসবাস করছেন।

তারা বলেন, সম্প্রতি রাস্তাটি সংস্কার করে পুনরায় চলাচলের উপযোগী করার উদ্যোগ নিয়েছে স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদ। যে কারণে তাদের সরে যেতে বলা হয়েছে। পাঁচ কিলোমিটার দীর্ঘ রাস্তাটি হাতীবান্ধা উপজেলার ডাউয়াবাড়ি ইউনিয়ন এবং কালীগঞ্জ উপজেলার ভোটমারী ইউনিয়ন পরিষদ এলাকা যুক্ত করেছে।

জমিলা বেওয়ার বয়স এখন ৬৫ বছর। ঘরে রয়েছে দুই ছেলে ও ছেলেদের বউ। দিন মজুর ছেলেদের আয়ে চলে তাদের সংসার। জমিলা বলেন, “হামাক এ্যাটে থাকি তুলি দিবার চায়। হামরা ছওয়া-পোয়া নিয়া এ্যালা কোনটে যামো। হামার কথা কাইও শুনবার লাগছে না। কাঁটাতারের বেড়া দিয়ে হামাকগুলাক বন্দি করি থুইছে।”

তারা অভিযোগ করেন, গত ১৩ ফেব্রুয়ারি রাতে ডাউয়াবাড়ি ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান রেজ্জাকুল ইসলাম কায়েত স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতা গোলাম মর্তুজা হানিফের সঙ্গে আঁতাত করে রাস্তার পাশে কাঁটাতারের বেড়া দেন। এতে অবরুদ্ধ হয়ে পড়েছে ৪০ পরিবার। বিকল্প পথ না থাকায় কাঁটাতারের বেড়া ডিঙিয়ে তাদের চলাফেরা করতে হচ্ছে।

Tista
অবরুদ্ধ হয়ে পড়েছেন তিস্তার ভাঙনে নিঃস্ব ৪০ পরিবার। ছবি: স্টার

তবে অভিযোগ অস্বীকার করেছেন ডাউয়াবাড়ি ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান রেজ্জাকুল ইসলাম কায়েত। তিনি দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, “জমিটির মালিক গোলাম মর্তুজা হানিফ, তিনিই রাস্তার পাশে কাঁটাতারের বেড়া দিয়েছেন। আমি রাস্তাটি পুনরায় সংস্কার করে চলাচলের উপযোগী করতে চাচ্ছি। সে জন্য বরাদ্দও পেয়েছি। কিন্তু রাস্তাটি দখলে রাখা লোকজন সরে না যাওয়ায় সংস্কার করা যাচ্ছে না। সময় মতো কাজটি করতে না পারলে বরাদ্দের টাকা ফেরত চলে যাবে।”

তিনি আরও বলেন, “নদী ভাঙনের শিকার হয়ে তারা এখনে বসবাস শুরু করলেও, প্রত্যেকের জমি আছে। সেখানে তারা বাড়ি করে থাকতে পারে, তারপরও এখান থেকে যাচ্ছে না।”

ভোটমারী ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান ও স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতা গোলাম মর্তুজা হানিফ বলেন, “সরকারি রাস্তার পাশে আমি কাঁটাতারের বেড়া নির্মাণ করিনি। মাপযোগের পর আমি আমার জমির ওপর কাঁটাতারের বেড়া দিয়ে দখলে নিয়েছি মাত্র।”

ভ্যান চালিয়ে সংসার চালান আক্কাস আলী। তিনি বলেন, “কাঁটাতারের বেড়া দেওয়ায় ভ্যান নিয়ে আসতে পারছি না।”

এ প্রসঙ্গে লালমনিরহাট জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মতিয়ার রহমান দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, “ওই জমির মালিক জেলা পরিষদ। নদী ভাঙনের শিকার যারা রাস্তার পাশে বসবাস করছেন, তাদের সরে যেতে জেলা পরিষদের পক্ষ থেকে কোনো নোটিশ দেওয়া হয়নি। এই সমস্যা সমাধানে জমি আবার পরিমাপ করে সীমানা নির্ধারণ করা হবে।”

Comments

The Daily Star  | English
Onion price  Tk204 per kg | Onion prices surge in Dhaka after India’s export ban extension

Onion prices surge in Dhaka after India’s export ban extension

Retailers were selling the homegrown variety of onion at Tk 204 a kg at Karwan Bazar today, compared with Tk 130 on Thursday

1h ago