নাইটওয়াচম্যানের সঙ্গেই পারলেন না মোস্তাফিজ-মিরাজরা!
![](https://bangla.thedailystar.net/sites/default/files/styles/big_202/public/feature/images/nasum_0.jpg?itok=iSeZR6BD×tamp=1581942090)
এক প্রান্তে বোলার বাংলাদেশ জাতীয় দলের অন্যতম সেরা পেসার মোস্তাফিজুর রহমান। আগের দিনই যিনি ফের টেস্ট দলে জায়গা পেয়েছেন। আছেন জাতীয় দলের সেরা স্পিনার মেহেদী হাসান মিরাজও। জাতীয় দলে টি-টোয়েন্টি স্কোয়াডের আরাফাত সানিও আছেন। তাদের মতো বোলারদের হতাশ করলেন যিনি কিনা আগের দিন নেমেছিলেন নাইটওয়াচম্যান হিসেবে। হারের মুখে থাকা ম্যাচ বাঁচালেন হঠাৎ ব্যাটসম্যান বনে যাওয়া নাসুম আহমেদ।
জয়ের লক্ষ্য ছিল না নাসুমদের। ম্যাচ বাঁচালেই ফাইনালে। অন্যদিকে ম্যাচ জয়ের বিকল্প ছিল না মিরাজ-মোস্তাফিজদের। হারেননি তারা। কিন্তু ফাইনাল থেকে তো ছিটকে গেলেন। তাছাড়া একজন নাইটওয়াচম্যাচকে পুরো দিন বল করে শেষ দিকে এসে আউট করাটা কি হারের চেয়ে কি কম জ্বালার? তাদের ছাপিয়ে প্রথম শ্রেণীর ক্যারিয়ারের দ্বিতীয় ফিফটি তুলে নায়ক হয়ে গেলেন নাসুমই।
ব্যাটিংটা একেবারে খারাপ করেন না নাসুম। দলের প্রয়োজনে কাজ চালাতে পারেন। শেষ দিকে ব্যাটসম্যানদের কিছুটা সহায়তা করাই তার কাজ। তাই বলে পুরোদুস্তর ব্যাটসম্যান কখনোই ছিলেন না। আগের দিনও মেহেদী হাসান ও নুরুল হাসান সোহানের আগে নেমেছিলেন নাইটওয়াচম্যান হিসেবে। শেষ পর্যন্ত এ ব্যাটসম্যানই গড়ে দিয়েছেন ম্যাচের পার্থক্য। অন্যথায় এদিন জয়টা প্রায় হাতের মুঠোয় পুরে ফেলেছিলেন মোস্তাফিজ-মিরাজরা। ৮৫ রানের ইনিংস খেলেই নায়ক নাসুম। তবে সবচেয়ে বড় কথা বল মোকাবেলা করেছেন ২৪৬টি।
ফাইনালের টিকেট পেতে হলে এদিন জয়ের বিকল্প ছিল না মধ্যাঞ্চলের। জিতলে মিলত বোনাস পয়েন্টও। তৃতীয় দিনের খেলা শেষে মনে হয়েছিল জয়টা যেন পেয়েই যাচ্ছে তারা। কিন্তু ম্যাচের শেষ দিনে সব চিত্রই শামসুর রহমানকে নিয়ে পাল্টে দেন নাসুম। আর শেষ দিকে ফরহাদ রেজা। তাতেই জয় হাতছাড়া মধ্যাঞ্চলের। প্রায় জয় সমতুল্য রোমাঞ্চকর এক ড্র নিয়ে মাঠ ছাড়ে দক্ষিণাঞ্চল।
কক্সবাজার শেখ কামাল আন্তর্জাতিক ক্রিকেট স্টেডিয়ামের একাডেমী মাঠে সোমবার ৫০৭ রানের বিশাল লক্ষ্য তাড়া করতে নেমে ৯ উইকেটে ৩৮৬ রানে থামে দক্ষিণাঞ্চল। অথচ আগের দিনই ১৫৯ রান তুলতে টপ অর্ডারের ৪টি উইকেট হারিয়ে ফেলেছিল দলটি। মধ্যাঞ্চলের বোলারদের নির্বিষ বোলিংয়ে শেষ দিনের পুরোটা সময় ব্যাটিং করে কাটিয়ে দিতে খুব বেশি সমস্যায় পড়তে হয়নি শামসুর-নাসুমদের।
অবশ্য দক্ষিণাঞ্চল ও মধ্যাঞ্চলের এ ম্যাচটি শুরু থেকেই ছিল রোমাঞ্চে ঠাঁসা। কিছুটা পাগলাতেও বটে। মার্শাল আইয়ুবের সেঞ্চুরির পরও প্রথম ইনিংসে মাত্র ২৩৫ রানে অলআউট হয় মধ্যাঞ্চল। পরে নিজেদের প্রথম ইনিংসে ব্যাট করতে নেমে ৪ উইকেটে মাত্র ১১৪ রানে ইনিংস ঘোষণা করে বসেন দক্ষিণাঞ্চলের অধিনায়ক আব্দুর রাজ্জাক। পরে জানা যায় মধ্যাঞ্চলের বোনাস পয়েন্ট ঠেকাতে এমন উদ্ভট সিদ্ধান্ত নিয়েছিল তারা। আর তার খেসারত প্রায় দিচ্ছিল দলটি। নাজমুল হোসেন শান্ত ডাবল সেঞ্চুরিতে পাহাড়সম লক্ষ্য ছুঁড়ে দেয়। তাতে এক সময় মনে মনে হয়েছিল মধ্যাঞ্চলের জয় বুঝি সময়ের ব্যাপার।
আগের দিনের দুই অপরাজিত ব্যাটসম্যান শামসুর রহমান ও নাসুম আহমেদ এদিন বেশ ধীর গতিতে দেখে শুনে ব্যাট করতে থাকেন। রান নেওয়ার চেয়ে উইকেটে টিকে থাকাই ছিল তাদের লক্ষ্য। প্রথম ১৫ ওভারে স্কোরবোর্ডে তারা রান যোগ করেন মাত্র ২৬। পরে রানের গতি কিছুটা বাড়লেও একই ঢঙে ব্যাট চালাতে থাকেন এ দুই ব্যাটসম্যান। ফলে মধ্যাঞ্চলের সম্ভাবনা ধীরে ধীরে ক্ষীণ হয়ে আসতে থাকে।
পঞ্চম উইকেটে ১৩৯ রানের দারুণ এক জুটি গড়েন নাসুম ও শামসুর। তবে দলীয় ২৯০ রানে শামসুরকে এলবিডাব্লিউর ফাঁদে ফেলে ম্যাচ জমিয়ে দিয়েছিলেন মেহেদী হাসান মিরাজ। পরে স্কোরবোর্ডে ৩২ রানের ব্যবধানে দক্ষিণাঞ্চলের বিশেষজ্ঞ দুই ব্যাটসম্যান নুরুল হাসান সোহান ও মেহেদী হাসানকে তুলে নিলে জয় দেখতে থাকে মধ্যাঞ্চল।
কিন্তু অলরাউন্ডার ফরহাদ রেজাকে নিয়ে আরও একবার প্রতিরোধ গড়েন নাইটওয়াচম্যান নাসুম। ৪৬ রানের মহামূল্যবান জুটিতে ম্যাচ প্রায় বাঁচিয়ে ফেলছিলেন। কিন্তু এরপর মাত্র ৪ রানের ব্যবধানে আবার ২টি উইকেট হারালে ফের মধ্যাঞ্চলের দিকে হেলে পড়ে ম্যাচ। দিনের খেলা তখনও বাকী প্রায় ১০ ওভার। কিন্তু সেখান থেকে শফিউল ইসলামকে নিয়ে ফের দারুণ এক প্রতিরোধের গল্প লিখে ম্যাচ বাঁচান ফরহাদ রেজা। ৯ উইকেটে ৩৮৬ রানে থামে তাদের ইনিংস। তাতে গ্রুপ পর্বেই শেষ হয় মধ্যাঞ্চলের লড়াই।
দলের পক্ষে সর্বোচ্চ ১৩৩ রানের ইনিংস খেলেন শামসুর। ২৩০ বলে ১৮টি চার ও ১টি ছক্কার সাহায্যে এ রান করেন তিনি। নাসুম আহমেদের ব্যাট থেকে আসে ৮৫ রান। ২৪৬ বলে ৯টি চার ও ১টি ছক্কায় নিজের ইনিংস সাজান তিনি। ৯১টি বল মোকাবেলা করে ২৭ রানে অপরাজিত থাকেন রেজা। শফিউল অপরাজিত থাকেন ১ রানে। তবে ২৬টি বল মোকাবেলা করে ম্যাচের অন্যতম নায়ক এ ব্যাটসম্যানও।
সংক্ষিপ্ত স্কোর:
মধ্যাঞ্চল প্রথম ইনিংস: ২৩৫
দক্ষিণাঞ্চল প্রথম ইনিংস: ১১৪/৪ (ডিক্লেঃ)
মধ্যাঞ্চল দ্বিতীয় ইনিংস: ৩৮৫/৮ (ডিক্লেঃ)
দক্ষিণাঞ্চল দ্বিতীয় ইনিংস: ১৪৪ ওভারে ৩৮৬/৯ (লক্ষ্য ৫০৭) (আগের দিন ১৫৯/৪) (নাফীস ৫, বিজয় ৮৩, ফজলে ২৫, শামসুর ১৩৩, শুক্কুর ০, নাসুম ৮৫, সোহান ৮, মেহেদী ৪, রেজা ২৭*, রাজ্জাক ৪, শাফিউল ১*; ইফরান ০/১৬, মোস্তাফিজ ১/৪৮, মিরাজ ৪/১৩৬, সানি ১/১১৮, শুভাগত ৩/৫৯, সাইফ ০/২)।
ফলাফল: ড্র
ম্যান অব দ্য ম্যাচ: নাসুম আহমেদ (দক্ষিণাঞ্চল)
Comments