মেডিকেল প্রশিক্ষণার্থীদের জন্য ১৫ হাজার টাকা দামের ক্রিকেট ব্যাট!
সাতক্ষীরার একজন সাবেক সিভিল সার্জন অতি উচ্চমূল্যে ক্রীড়া সামগ্রী কেনার মাধ্যমে সরকারি তহবিল থেকে প্রায় ৪১ লাখ টাকা আত্মসাৎ করেছেন। এমনটাই দেখা গেছে দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) এক তদন্ত প্রতিবেদনে।
দুদকের কর্মকর্তারা বলেছেন, ২ হাজার ২০০ টাকার ফুটবলের দাম ৫ হাজার টাকা দেখানো হয়েছে। আর ক্রিকেট ব্যাটের দাম আসল দামের চেয়ে কমপক্ষে তিনগুণ বেশি দেখানো হয়েছে। প্রতিটি ব্যাটের দাম দেখানো হয় ১৫ হাজার টাকা।
পণ্য ক্রয়ে অনিয়ম করায় ডা. তৌহিদুর রহমান মামলার মুখোমুখি হতে যাচ্ছেন। তিনি ২০১৭-১৮ অর্থবছরে মেডিকেল অ্যাসিস্ট্যান্ট ট্রেনিং স্কুল (ম্যাটস) এবং ইন্সটিটিউট অফ হেলথ টেকনোলজির (আইএইচটি) জন্য ২০টি ফুটবল এবং ৫০টি ক্রিকেট ব্যাট কেনেন।
একজন তদন্ত কর্মকর্তা জানিয়েছেন, “তৌহিদুর এগুলো ক্রয়ের জন্য ডিজিএইচএস (ডিরেক্টরেট জেনারেল অব হেলথ সার্ভিস) থেকে অনুমোদনের অপেক্ষা করেননি।”
দুদকের পরিচালক প্রণব কুমার ভট্টাচার্য বলেন, কমিশন ইতিমধ্যে এ বিষয়ে দুটি মামলা দায়েরের অনুমোদন দিয়েছে। ডা. তৌহিদুর রহমান এবং বেনিভ্যালেন্ট এন্টারপ্রাইজের মালিক শাহিনুর রহমানের বিরুদ্ধে আত্মসাতের মামলা করবে দুদক।
জানা যায়, তৌহিদুর ২০১৭ সালের ৩১ ডিসেম্বর ডিজিএইচএসের কাছে থেকে খেলাধুলা ও চিকিৎসা সরঞ্জাম এবং আসবাবপত্র কেনার জন্য বরাদ্দ চেয়েছিলেন।
বরাদ্দ পাওয়ার আগেই ২০১৮ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি তিনি ফুটবল, ক্রিকেট ব্যাট, বল, গ্লাভস, স্ট্যাম্প, প্যাড এবং হেলমেট সরবরাহের জন্য টেন্ডার আহ্বান করেন।
তিনি ২০১৮ সালের ১৫ মে বেনিভ্যালেন্ট এন্টারপ্রাইজকে কার্যাদেশ দেন।
নথি অনুযায়ী, কার্যাদেশের নয় দিন পর সব সরঞ্জাম সরবরাহ করা হয় এবং দুটি পৃথক বিল জমা দেওয়া হয়। বিলগুলোর প্রতিটিই ছিল ৫০ লাখ টাকার ওপরে।
ভ্যাট ও আয়কর কেটে নেওয়ার পর সিভিল সার্জন বিলগুলো অনুমোদন করেন এবং প্রতিষ্ঠানটিকে প্রায় ৮৯ লাখ টাকা দেন।
২০১৯ সালের ২৬ সেপ্টেম্বর ক্রীড়া সামগ্রীগুলোর মান যাচাই করতে ক্রীড়া অধিদপ্তরের সদস্যদের সমন্বয়ে একটি বিশেষজ্ঞ দল ম্যাটস এবং আইএইচটি পরিদর্শন করে।
দুদকের এক কর্মকর্তা বলেন, “তারা দেখতে পান ম্যাটসকে সরবরাহ করা ক্রীড়া সরঞ্জামের প্রকৃত মুল্য ২৩ লাখ ৬৯ হাজার টাকা এবং আইএইচটিতে সরবরাহ করা ক্রীড়া সরঞ্জামের প্রকৃত মুল্য ২৩ লাখ ৮৮ লাখ টাকা।”
তিনি আরও বলেন, “ঠিকাদার ও সিভিল সার্জন ৪১ লাখ ৪২ হাজার টাকা আত্মসাৎ করেছিলেন।”
দুদকের উপ-সহকারি পরিচালক ফেরদৌস রহমান ও শহিদুর রহমান উপ-পরিচালক শামসুল আলমের তত্ত্বাবধানে এই তদন্তটি করেন।
গত বছরের ৯ সেপ্টেম্বর সাতক্ষীরার আদালত তৌহিদুরকে অন্য একটি দুর্নীতির মামলায় ১৬ কোটি ৬১ লাখ টাকা আত্মসাতের অভিযোগে কারাগারে প্রেরণ করেছেন। স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয় হাসপাতাল এবং স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সগুলোর জন্য বিভিন্ন চিকিৎসার সরঞ্জাম সংগ্রহের জন্য ২০১৭-১৮ এবং ২০১৮-১৯ অর্থবছরে এই বরাদ্দ দেয়।
কিন্তু, তৎকালীন সিভিল সার্জন তৌহিদুর জাল নথি তৈরি করে এই অর্থ আত্মসাৎ করেছিলেন বলে অভিযোগ করা হয়েছে। তৌহিদুর ২০১৯ সালের ফেব্রুয়ারিতে অবসর গ্রহণ করেন।
দুদক সূত্র জানায়, তৌহিদুর এখন জামিনে রয়েছেন।
বক্তব্য জানার জন্যে তৌহিদুর এবং শাহিনুরের সঙ্গে যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি।
Comments