বরেণ্য সাংবাদিক আবদুস সালামের স্মরণসভায় সাহসী সাংবাদিকতার তাগিদ
জন্ম ও মৃত্যুবার্ষিকী পালনের আনুষ্ঠানিকতায় সীমাবদ্ধ না থেকে সাহসী সত্যনিষ্ঠ সাংবাদিকতা করলে তা হবে আবদুস সালামের স্মৃতির প্রতি যথার্থ শ্রদ্ধা। কিংবদন্তীতুল্য সাংবাদিক আবদুস সালাম ব্যক্তিগত লাভ লোকসানের পরোয়া না করে যেভাবে সত্য লিখেছেন জীবনভর, বর্তমান প্রজন্মের সাংবাদিকরা তা অনুসরণ করলে ধুঁকতে থাকা গণমাধ্যমের সুদিন ফিরবে।
আবদুস সালামের ৪৩তম মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে শনিবার জাতীয় প্রেস ক্লাবে অনুষ্ঠিত স্মরণসভায় এসব কথা বলেছেন বক্তারা। ‘সাংবাদিক আবদুস সালাম স্মৃতি সংসদ’ আয়োজিত এ স্মরণসভায় প্রধান অতিথি ছিলেন জাতীয় অধ্যাপক ড. আনিসুজ্জামান। সভাপতিত্ব করেন বাংলাদেশ অবজারভার সম্পাদক ইকবাল সোবহান চৌধুরী।
স্মরণসভার বক্তৃতাদের কথা উঠে আসে আবদুস সালামের কর্মময় জীবন। ১৯৫০ সাল থেকে প্রায় দুই যুগ অবজারভারের সম্পাদক ছিলেন আবদুস সালাম। ছিলেন প্রেস ইনস্টিটিউটের প্রতিষ্ঠাতা মহাপরিচালক। সাংবাদিকতায় অবদানের জন্য স্বাধীনতা পদক পাওয়া আবদুস সালাম সম্পাদকীয় লিখে শাসকের রোষানলে পরে কয়েক দফা জেল খেটেছেন পাকিস্তান শাসনামলে। স্বাধীনতার পরও কারাবরণ করেছেন।
স্মরণসভায় বক্তৃতা করেন জাতীয় প্রেস ক্লাবের সাবেক সভাপতি রিয়াজউদ্দিন আহমেদ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাংবাদিকতা বিভাগের অনারারি অধ্যাপক সাখাওয়াত আলী খান, ইংরেজি দৈনিক নিউ নেশন সম্পাদক এ এম মোফাজ্জল, সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের সম্মানীয় ফেলো অর্থনীতিবিদ ড. মোস্তাফিজুর রহমান, জাতীয় প্রেস ক্লাবের সাবেক সভাপতি শওকত মাহমুদ ও কামাল উদ্দিন সবুজ, সমকালের ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক মুস্লাফিজ শফি, জাতীয় প্রেস ক্লাবের সাধারণ সম্পাদক ফরিদা ইয়াসমিন, আবদুস সালামের মেয়ে ও স্মৃতি সংসদের সভাপতি রেহানা সালাম, নর্দার্ন ইউনিভার্সিটির সাবেক উপ-উপাচার্য অধ্যাপক ড. আনোয়ারুল করিম, বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়নের (বিএফইউজে) একাংশের মহাসচিব এম আবদুল্লাহ, মুক্তিযোদ্ধা সংসদের ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব শফিকুল বাহার, ফেনী সাংবাদিক ফোরাম-ঢাকা’র সাধারণ সম্পাদক ফয়েজ উল্লাহ ভুঁইয়া। স্মরণসভা পরিচালনা করেন স্মৃতি সংসদের সাধারণ সম্পাদক লোটন একরাম।
জাতীয় অধ্যাপক আনিসুজ্জামান বলেন, ১৯৫২ সালে একটি সম্পাদকীয় লেখায় অবজারভার বন্ধ করে দেওয়া হয়। আবদুস সালামকে কারাগারে নেওয়া হয় কিন্তু তিনি তাতে এতটুকু বিচলিত ছিলেন না। ষাটের দশকে ফের কারাগারে যান আইয়ুবের সমালোচনা করে সম্পাদকীয় লিখে। কিন্তু দুঃখের বিষয় স্বাধীন দেশেও সম্পাদকীয় লিখে জেলে যেতে হয়েছে আবদুস সালামকে, যা আমাদের ইতিহাসের কলঙ্কিত অধ্যায়।
ইকবাল সোবহান চৌধুরী বলেন, গণতন্ত্র তখনই প্রাতিষ্ঠানিক রূপ পাবে যখন মত প্রকাশের স্বাধীনতা, গণমাধ্যমের স্বাধীনতা ও স্বাধীন সাংবাদিকতা থাকবে। আবদুস সালাম সাহসী সাংবাদিকতার পথিকৃৎ, বর্তমান প্রজন্ম তাকে কতটা ধারণ করতে পেরেছে তা নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে।
রিয়াজউদ্দিন আহমেদ বলেন, আবদুস সালাম শুধু সাংবাদিক নন, সাংবাদিকতার শিক্ষক ছিলেন। বর্তমান প্রজন্মের সাংবাদিকরা প্রশ্ন করতে ভুলে গেছে। সাংবাদিক পরিচয়ের আগে দলীয় কর্মী হয়ে গেছে। কালোকে সাদা আর সাদাকে কালো বলছে দলীয় আনুগত্যের কারণে।
ড. মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, প্রগতিশীল, গণতান্ত্রিক বাংলাদেশ গড়তে যে সাংবাদিকতা আবদুস সালাম করে গেছেন, তা শিক্ষণীয় হয়ে আছে।
শওকত মাহমুদ বলেন, স্বৈরশাসনের বিরুদ্ধে মানিক মিয়া, জুহুর হোসেন ও আবদুস সালামের সাহসী লেখনী স্বাধীনতার পক্ষে জনমত সৃষ্টি করে, স্বাধীনতা তরান্বিত করে।
Comments