আমানতকারীদের ক্ষতিপূরণ ২ লাখ?

কোনো ব্যাংক বা আর্থিক প্রতিষ্ঠান দেউলিয়া বা বন্ধ হয়ে গেলে আমানতকারীদের ক্ষতিপূরণের অর্থের পরিমাণ বাড়ানোর বিষয়টি বিবেচনা করছে সরকার। প্রচলিত বিধান অনুযায়ী, কোনো ব্যাংক বন্ধ হয়ে গেলে আমানতকারীরা ক্ষতিপূরণ বাবদ সর্বোচ্চ এক লাখ টাকা পাবে। এই অর্থের পরিমাণ বাড়িয়ে সর্বোচ্চ ছয় মাসের মধ্যে আমানতকারীদের দুই লাখ টাকা ক্ষতিপূরণ দেওয়ার বিষয়টি বিবেচনা করা হচ্ছে।
বাংলাদেশ ব্যাংক

কোনো ব্যাংক বা আর্থিক প্রতিষ্ঠান দেউলিয়া বা বন্ধ হয়ে গেলে আমানতকারীদের ক্ষতিপূরণের অর্থের পরিমাণ বাড়ানোর বিষয়টি বিবেচনা করছে সরকার। প্রচলিত বিধান অনুযায়ী, কোনো ব্যাংক বন্ধ হয়ে গেলে আমানতকারীরা ক্ষতিপূরণ বাবদ সর্বোচ্চ এক লাখ টাকা পাবে। এই অর্থের পরিমাণ বাড়িয়ে সর্বোচ্চ ছয় মাসের মধ্যে আমানতকারীদের দুই লাখ টাকা ক্ষতিপূরণ দেওয়ার বিষয়টি বিবেচনা করা হচ্ছে।

আমানত সুরক্ষা আইন-২০২০’র খসড়া নিয়ে সমালোচনার মুখেই এমন চিন্তা করছে অর্থ মন্ত্রণালয়। নতুন আইনের খসড়াতেও আমানতকারীদের এক লাখ টাকা দেওয়ার বিধান রাখা হয়েছে। কিন্তু, গ্রাহকদের গচ্ছিত অর্থের বিমার পরিমাণ বাড়ানো হয়নি।

প্রসঙ্গত, গ্রাহকরা যে পরিমাণ অর্থই জমা রাখেন, তার বিপরীতে ব্যাংকগুলো আমানত বিমার আওতায় সর্বোচ্চ এক লাখ টাকা দিতে পারে। তাই এসব প্রতিষ্ঠান বন্ধ হয়ে গেলে গ্রাহকদের এ পরিমাণ অর্থই ফেরত দেওয়ার বিধান রয়েছে।

সংশোধিত খসড়া আইন অনুযায়ী, ব্যাংক বন্ধ হয়ে গেলে আমানতকারী সর্বোচ্চ ছয় মাসের মধ্যে দুই লাখ টাকা পাবেন। তিনি দুই লাখেরও বেশি টাকা ব্যাংকে জমা রাখলেও দুই লাখ টাকাই পাবেন।

গত ২৩ ফেব্রুয়ারি বাংলাদেশ ব্যাংকসহ অন্যান্য ব্যাংকগুলোর কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠক করে অর্থ মন্ত্রণালয়। ওই বৈঠকে এ সংক্রান্ত প্রাথমিক সিদ্ধান্ত হয়।

বৈঠকে উপস্থিত কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, ব্যাংকিং কোম্পানি আইন ১৯৯১ অনুযায়ী, বিমা করা অর্থের বাইরে যে আমানত রয়েছে, তা বন্ধ হয়ে যাওয়া ব্যাংকের সম্পদ বিক্রি করে পরিশোধ করা হবে।

অর্থ মন্ত্রণালয়ের এক কর্মকর্তা জানিয়েছেন, দুএকদিনের মধ্যে খসড়া আইনের সংশোধিত কপি ওয়েবসাইটে প্রকাশ করা হবে।

তবে, অর্থের পরিমাণ এক লাখ থেকে বাড়িয়ে দুই লাখ করার এ উদ্যোগও ব্যাংকিং খাতের ওপর আমানতকারীদের আস্থা বাড়াতে পারবে না বলে মনে করছেন গবেষণা প্রতিষ্ঠান পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের (পিআরআই) নির্বাহী পরিচালক আহসান এইচ মনসুর।

দ্য ডেইলি স্টারকে তিনি বলেন, “আমানতের জন্য বিমার আওতা বাড়ানো কোনো সমাধান নয়। সরকার ও বাংলাদেশ ব্যাংকের উচিত ব্যাংকিং সেক্টরে নজরদারি বাড়ানো।”

“বিমার পরিমাণ বাড়িয়ে বেশিরভাগ আমানতকারীকেই তারা সুরক্ষা দিতে পারবে না,” যোগ করেন তিনি।

বর্তমানে ব্যাংকগুলোতে আমানতকারীদের গচ্ছিত অর্থের পরিমাণের ওপর দশমিক ০৮ থেকে দশমিক ১০ শতাংশ হারে বিমার প্রিমিয়াম দিতে হয়।

২০১৮ সালের ডিসেম্বরে দেখা যায়, কেন্দ্রীয় ব্যাংক পরিচালিত ডিপোজিট ইন্সুরেন্স ট্রাস্ট ফান্ডে (ডিআইটিএফ) টাকার পরিমাণ ৭ হাজার ৪৩০ কোটিতে পৌঁছেছে, যা এর আগের বছরের তুলনায় ১৬ দশমিক ০৩ শতাংশ বেশি।

গত বছরের সেপ্টেম্বর পর্যন্ত পাওয়া হিসাব অনুযায়ী, ১০ কোটি ২৮ লাখ অ্যাকাউন্টে আমানতের পরিমাণ ১১ লাখ ৫৯ হাজার ২৮৮ কোটি টাকা।

বাংলাদেশ ব্যাংকের এক কর্মকর্তা জানিয়েছেন, সর্বোচ্চ এক লাখ টাকা জমা রাখা আমানতকারীদের অ্যাকাউন্টের মধ্যে ৯০ শতাংশই আমানত সুরক্ষা বিমার অধীনে আছেন। কিন্তু, সরকার যদি এক লাখ টাকার বদলে দুই লাখ টাকা পরিশোধের নিয়ম করে, তাহলে বিমা করা অ্যাকাউন্টের পরিমাণ ৯০ শতাংশ থেকে বেড়ে ৯৫-৯৬ শতাংশে দাঁড়াবে।

আহসান এইচ মনসুর বলেন, “ব্যাংকে এক লাখ টাকা পর্যন্ত জমা রাখা অ্যাকাউন্টের সংখ্যা উল্লেখযোগ্য নয়। এর বেশিরভাগ সক্রিয়ও না।”

বর্তমানে ব্যাংকিং খাতে যে এলোমেলো পরিস্থিতি, তাতে যারা বড় অংকের টাকা জমা রেখেছেন তারা দুশ্চিন্তায় আছেন।

বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গর্ভনর সালেহ উদ্দিন আহেমদ বলেন, “গ্রাহকদের সুরক্ষা নিশ্চিত করতে ব্যাংকগুলোর প্রদত্ত প্রিমিয়াম বাড়ানোর ব্যবস্থা নেওয়া উচিত বাংলাদেশ ব্যাংকের।”

“প্রিমিয়াম নির্ধারণের ক্ষেত্রে সরকারের উচিত প্রতিবেশী দেশ ও উন্নত দেশগুলোর প্রিমিয়াম রেট বিবেচনায় নেওয়া,” যোগ করেন তিনি।

Comments

The Daily Star  | English
government changed office hours

Govt office hours 9am-3pm from Sunday to Tuesday

The government offices will be open from 9:00am to 3:00pm for the next three days -- from Sunday to Tuesday -- this week, Public Administration Minister Farhad Hossain said today

1h ago