ফুটবল সামনে এগিয়ে যাক, সেটাই আমরা চাই: প্রধানমন্ত্রী

PM-1.jpg
বঙ্গবন্ধু জাতীয় স্টেডিয়ামে ছেলেদের বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান গোল্ডকাপ ফুটবল অনূর্ধ্ব-১৭ এবং মেয়েদের বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন নেছা মুজিব গোল্ডকাপ ফুটবল অনূর্ধ্ব-১৭ এর সমাপনী অনুষ্ঠানে বক্তব্য দেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ছবি: পিআইডি

ফুটবলকে দেশের অন্যতম জনপ্রিয় খেলা আখ্যায়িত করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, তার সরকার দেশের ফুটবলকে আরো এগিয়ে নিয়ে যেতে চায়।

তিনি বলেন, ‘ফুটবল হচ্ছে সবচেয়ে জনপ্রিয় খেলা-এটা হচ্ছে বাস্তবতা। কাজেই এই ফুটবল সামনে এগিয়ে যাক, সেটাই আমরা চাই।’

প্রধানমন্ত্রী একইসঙ্গে খেলাধুলা ও সংস্কৃতি চর্চায় শিশুদের অধিক হারে যুক্ত রাখার মাধ্যমে সন্ত্রাস, জঙ্গিবাদ, মাদক এবং দুর্নীতির থেকে দূরে রেখে তাদের যোগ্য নাগরিক হিসেবে গড়ে তোলার তার অঙ্গীকার ব্যক্ত করেন।

তিনি বলেন, ‘আমাদের শিশু-কিশোররা অত্যন্ত মেধাবী এবং আমরা এই মেধা বিকাশের সুযোগই করে দিতে চাই। সন্ত্রাস, জঙ্গিবাদ, মাদক এবং দুর্নীতি থেকে তাদের দূরে রেখে উপযুক্ত নাগরিক হিসেবে গড়ে তুলতে চাই।’

প্রধানমন্ত্রী গতকাল বিকেলে বঙ্গবন্ধু জাতীয় স্টেডিয়ামে ছেলেদের বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান গোল্ডকাপ ফুটবল অনূর্ধ্ব-১৭ এবং মেয়েদের বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন নেছা মুজিব গোল্ডকাপ ফুটবল অনূর্ধ্ব-১৭ এর ফাইনাল খেলা উপভোগ শেষে বিজয়ীদের মাঝে পুরস্কার বিতরণকালে প্রধান অতিথির ভাষণে এ কথা বলেন।

লেখাপড়ার পাশাপাশি ক্রীড়া এবং সংস্কৃতি চর্চা অপরিহার্য উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘প্রতিযোগিতার মাধ্যমে শিশু-কিশোর এবং তরুণদের প্রতিভা বিকাশের সুযোগ পায়, তারা সুস্বাস্থ্যের অধিকারী হতে পারে এবং মনও যথেষ্ট উদার হয়। সবচেয়ে বড় কথা হলো দেশের জন্য গৌরব বয়ে নিয়ে আসতে পারে।’

শেখ হাসিনা বলেন, ‘আজকে ক্রীড়াক্ষেত্রে আমরা যথেষ্ট অগ্রগতি লাভ করেছি। এই অগ্রগতিকে আমাদের ধরে রাখতে হবে।’

বঙ্গবন্ধু গোল্ডকাপ ফুটবল অনূর্ধ্ব-১৭ ফুটবলে অতিরিক্ত সময়ে গোলে বরিশাল বিভাগ ২-১ গোলে চট্টগ্রাম বিভাগ দলকে হারিয়ে চ্যাম্পিয়ন হয়। আর মেয়েদের বঙ্গমাতা গোল্ডকাপ ফুটবল অনূর্ধ্ব-১৭ প্রতিযোগিতার ফাইনালে খুলনা বিভাগ দল টাইব্রেকারে ৪-৩ গোলে ঢাকা বিভাগ দলকে হারিয়ে শিরোপা জয় করে। নির্ধারিত সময়ে খেলা ২-২ গোলে অমীমাংসিত ছিল।

প্রধানমন্ত্রী চ্যাম্পিয়ন এবং রানার্স-আপ দলকে ট্রফি এবং প্রাইজমানিসহ খেলোয়াড়দের হাতে ব্যক্তিগত পুরস্কারও তুলে দেন।

যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রী জাহিদ আহসান রাসেল অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন। এ ছাড়া, যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি আব্দুল্লাহ আল ইসলাম জ্যাকব, সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের সচিব মো.আখতার হোসেন, বাংলাদেশে ব্রাজিলের রাষ্ট্রদূত জোয়াও তাবারাজা ডি অলিভিয়েরা জুনিয়র,বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশনের সভাপতি কাজী সালাহউদ্দিনসহ ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাবৃন্দ, সরকারের পদস্থ বেসামরিক ও সামরিক কর্মকর্তাবৃন্দ এবং আমন্ত্রিত অতিথিগণ উপস্থিত ছিলেন। রাজধানীর বিভিন্ন স্কুল থেকে আগত শিক্ষার্থী সহ বিপুল সংখ্যক ক্রীড়ামোদী দর্শকও এ সময় উপস্থিত ছিলেন।

এর আগে, প্রধানমন্ত্রী স্টেডিয়ামে আসেন এবং বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন নেছা গোল্ডকাপ ফুটবল ফাইনাল ম্যাচের খুলনা বিভাগ এবং ঢাকা বিভাগের মধ্যে অনুষ্ঠিত প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ দ্বিতীয়ার্ধ, অতিরিক্ত সময় এবং টাইব্রেকারের পুরো সময় ধরে ভিআইপি গ্যালারিতে বসে খেলা উপভোগ করেন।

মেয়েদের খেলার মানোন্নয়নের প্রশংসা করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমি আগেও খেলা দেখেছি। কিন্তু এবারের খেলায় আমি দেখলাম আমাদের মেয়েরা অত্যন্ত চমৎকার খেলেছে। এতে আমি সত্যিই খুব আনন্দিত। কাজেই ফুটবলের আরো উন্নতি হোক।’

তিনি বলেন, ‘এই যে আজকে বিভিন্ন অনূর্ধ্ব দলগুলো উঠে আসছে তারাই তো আমাদের জাতীয় প্রতিযোগিতাগুলোতে খেলবে এবং এতে আমাদের খেলাধুলার উৎকর্ষতা যে অনেকগুণ বৃদ্ধি পাবে তাতে আর কোন সন্দেহ নাই।’

‘প্রতিটি বাঙালি ছেলে-মেয়েকে আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে সবধরনের প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণের মানসিকতায় আমরা গড়ে তুলতে চাই,’ বলেন প্রধানমন্ত্রী।

স্বাধীনতার পরপরই জাতির পিতা এই ক্রীড়াক্ষেত্রটাকে আরো প্রসারিত করার উদ্যোগ নেন উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘তার বাবা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান, দাদা শেখ লুৎফর রহমান এবং ভাই শেখ কামাল ও শেখ জামাল খেলাধুলার সঙ্গে সম্পৃক্ত ছিলেন।’

শেখ কামাল আবাহনী ক্লাব প্রতিষ্ঠা করে দেশের ক্লাব ফুটবলকে আধুনিক পর্যায়ে উন্নীত করেন উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘কাজেই আমিও একজন স্পোর্টস ফ্যামিলির সদস্য।’

শেখ হাসিনা বলেন, ‘তার সরকার দেশকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার পাশাপাশি খেলাধুলার জন্য বিভিন্ন সুযোগ সৃষ্টি করে দিচ্ছে।’

‘প্রত্যেক জেলায় মিনি স্টেডিয়াম করে দিচ্ছি। এটার অর্থ হলো ১২ মাসই এখানে খেলাধুলা চলতে পারবে সে সুযোগটা আমরা করে দিচ্ছি। স্কুল-কলেজের লেখাপড়ায় যাতে কোন বিঘ্ন সৃষ্টি না হয় সেজন্যই এই ব্যবস্থা,’ যোগ করেন তিনি।

প্রাথমিক থেকে অনূর্ধ্ব ১৭ পর্যন্ত বঙ্গবন্ধু এবং বঙ্গমাতা গোল্ডকাপ ফুটবল টুর্নামেন্ট আয়োজনের উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘আগামীতে আন্তঃকলেজ এবং আন্তঃবিশ্ববিদ্যালয় প্রতিযোগিতারও আয়োজন করবো। তাতে সুবিধা হবে, ছোট থেকেই যারা খেলছে তারা আরো সুযোগ লাভ করবে এবং খেলাধুলার মধ্য দিয়েই চরিত্র গঠন, সুস্বাস্থ্যের অধিকারী এবং মেধা বিকাশের সুযোগ ঘটবে।’

তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করে বলেন, ‘আজকের ছেলে-মেয়েরাই আগামীতে বিশ্ব আসরে তাদের নিজস্ব আসন করে নিতে পারবে বলেই আামি বিশ্বাস করি।’

জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান জাতীয় গোল্ডকাপ অনূর্ধ্ব-১৭ ফুটবল টুর্নামেন্টের বালকদের ফাইনালে বরিশাল ২-১ গোলে চট্টগ্রামকে হারিয়ে শেষ হাসি হেসেছে।

নির্ধারিত সময়ের খেলা ১-১ গোলে শেষ হলে ছেলেদের ফাইনাল গড়ায় অতিরিক্ত সময়ে। বাড়িয়ে দেওয়া সময়ে গোল করে বরিশালের ছেলেরা বাজিমাত করে।

৪৮ মিনিটে তৌহিদুলের গোলে চট্টগ্রাম এগিয়ে যায় দ্বিতীয়ার্ধের খেলা শুরুর পরপরই। রাশেদুল ইসলামের গোলে বরিশাল সমতায় ফেরে ৬৬ মিনিটে। বাকি সময় কোনো দল গোল করতে না পারলে খেলা গড়ায় অতিরিক্ত সময়ে।

অতিরিক্ত সময়ের ১১ মিনিটে বরিশালের গোলাম রাব্বী জয়সূচক গোল করেন।

অন্যদিকে, বঙ্গমাতা বেগম ফজিলাতুন্নেছা মুজিব জাতীয় গোল্ডকাপ ফুটবল টুর্নামেন্টে চ্যাম্পিয়ন খুলনা বিভাগ টাইব্রেকারে জয়লাভ করে। নির্ধারিত সময়ের খেলা শেষ হয় ২-২ গোলে। অতিরিক্ত সময়ে কোন দল গোল করতে না পারলে শিরোপার নিষ্পত্তি হয় টাইব্রেকারে। ৪-৩ গোলে তারা হারায় ঢাকা বিভাগকে।

নির্ধারিত সময়ে রওশন আরার গোলে এগিয়ে যায় ঢাকা বিভাগ। কুরুশিয়া জান্নাতের গোলে সমতায় ফেরে খুলনা। প্রথমবারের মতো খুলনাকে এগিয়ে দেন উন্নতি খাতুন। কিন্তু শেষ দিকে গোল করে ম্যাচটাকে অতিরিক্ত সময়ে নিয়ে যান ঢাকার ফাহমিদা।

সর্বোচ্চ গোলদাতা, সেরা গোলকিপার, ম্যান অব দ্য ম্যাচ এবং টুর্নামেন্টের সেরা খেলোয়াড়দের হাতেও পুরস্কার তুলে দেন প্রধানমন্ত্রী।

খুলনার উন্নতি খাতুন সেরা খেলোয়াড় এবং সর্বোচ্চ গোলাদাতার পুরস্কার লাভ করেন।

বরিশাল বিভাগের গোলাম রাব্বিকে বঙ্গবন্ধু গোল্ডকাপ অনূর্ধ্ব -১৭ বালকদের টুর্নামেন্টের শ্রেষ্ঠ খেলোয়াড় এবং সর্বোচ্চ গোলদাতার পুরস্কার প্রদান করেন প্রধানমন্ত্রী।

২০১৯ সালের ৩১ আগস্ট টুর্নামেন্ট দু’টোর লোগো এবং ট্রফি উন্মোচন করা হয় এবং ১ সেপ্টেম্বর টাঙ্গাইল জেলা স্টেডিয়ামে বালক ও বালিকা আসরের উদ্বোধনী খেলা অনুষ্ঠিত হয়।

টুর্নামেন্ট দুটোতে উপজেলা পর্যায় থেকে বালকদের খেলা এবং জেলা পর্যায় থেকে বালিকাদের খেলা অনুষ্ঠিত হয়। বালক বিভাগে উপজেলা পর্যায়ে ৪৮২৮টি, জেলা পর্যায়ে ৫৮১টি, বিভাগীয় পর্যায়ে ৬৮টি ও জাতীয় পর্যায়ে আটটি দলের ৯৮ হাজার ৭৩০ জন ফুটবলার অংশ নেন।

বালিকা বিভাগের খেলায় জেলা পর্যায়ে ৫৮১টি, বিভাগীয় পর্যায়ে ৬৮টি ও জাতীয় পর্যায়ে আটটি দলে ১১ হাজার ৮২৬ জন ফুটবলার অংশ নেন।

Comments

The Daily Star  | English

Khulna JP office vandalised

Protesters vandalised the Jatiyo Party office in Khulna’s Dakbangla area yesterday evening.

3h ago