৪০ জনকে বাঁচিয়ে দিল্লির ‘হিরো’ মুশতারি খাতুন

মুশতারি খাতুন একজন সাধারণ গৃহবধূ, যিনি বেশিরভাগ সময় বাড়িতেই থাকেন। কাপড় সেলাই করে যা উপার্জন করেন তা পরিবারের ভরণপোষণের জন্য স্বামীর হাতে তুলে দেন। এর বাইরে তার জীবনের পরিসর খুবই সীমিত।
Mushtari Khatun-1.jpg
মুশতারি খাতুন। ছবি: টাইমস অব ইন্ডিয়া

মুশতারি খাতুন একজন সাধারণ গৃহবধূ, যিনি বেশিরভাগ সময় বাড়িতেই থাকেন। কাপড় সেলাই করে যা উপার্জন করেন তা পরিবারের ভরণপোষণের জন্য স্বামীর হাতে তুলে দেন। এর বাইরে তার জীবনের পরিসর খুবই সীমিত।

গত ২৫ ফেব্রুয়ারি উত্তর-পূর্ব দিল্লিতে যখন ভয়াবহ সহিংসতা চলতে থাকে, তখন এই গৃহবধূই নিজের জীবনের ঝুঁকি নিয়ে পরিবারের বাকি স্বজনদের সাহায্যার্থে এগিয়ে যান। রাস্তায় অসংখ্য হিংস্র পিকেটার, পেট্রোল বোমা ও অগ্নিসংযোগ আতঙ্কের মধ্যেই নিজের বাড়ি থেকে প্রায় এক কিলোমিটার হেঁটে তিনি পৌঁছে যান খাজুরি খাস এলাকায়। সেখানে আটকে পড়া ৪০ জনকে পুলিশের সহায়তায় তিনি নিরাপদে বের করে আনতে সক্ষম হন।

এ ঘটনার পর থেকেই মুশতারি খাতুন ও তার স্বামী হাকিম যে এলাকায় থাকেন, সেই চান্দু নগর এলাকার বাসিন্দারা তাকে (মুশতারি) একজন ‘হিরো’ হিসেবে পরিচয় দিচ্ছেন।

বাড়ি ফেরার পর গতকাল মুশতারি খাতুন টাইমস অব ইন্ডিয়াকে বলেছেন, ‘আমি জানতাম, ওইদিন খাজুরি খাসে যদি কেউ না যেত, তাহলে সেখানে আটকে পড়াদের বাঁচানো সম্ভব হতো না।’

‘আমি আমার ছোট ছোট ভাগনে-ভাগনিকে বাঁচাতে পেরেছি, এর চেয়ে আনন্দের আর কী হতে পারে’, বলেন তিনি।

মুশতারি জানান, গত সোমবার সারাদিনই তিনি বাড়িতে অপেক্ষায় ছিলেন, আত্মীয়দের খোঁজ নিচ্ছিলেন। খাজুরি খাসের বহু বাড়িঘর পুড়িয়ে দেওয়া হচ্ছে বলে জানতে পারেন। পরদিন সকালে পরিস্থিতি আরও উত্তপ্ত হয়ে গেলে তিনি কোনোকিছু না ভেবে বেরিয়ে পড়েন।

যখন তিনি আত্মীয়দের বাড়িতে পোঁছান, দেখেন সেখান থেকে বেরিয়ে যাওয়ার বিকল্প কোনো পথ নেই। মূল রাস্তা কারাওয়ালসহ আশেপাশের সর্বত্র অবস্থান নিয়ে রেখেছে পিকেটাররা, যানবাহন ও দোকানপাট মুহুর্মুহু জ্বালিয়ে দেওয়া হচ্ছে।

মুশতারি বলেন, ‘বুঝতে পারলাম যে আমরা অবরুদ্ধ হয়ে পড়েছি এবং পরবর্তী চার ঘণ্টা আমাদের তীব্র আতঙ্কের মধ্যে দিয়ে কেটেছে।’

এর মধ্যে একটি কাজ ঠিকই করতে পেরেছিলেন মুশতারি খাতুন। পরিবারের সব সদস্যকে এক জায়গায় জড়ো করে উপায় খুঁজছিলেন বেরনোর।

‘যখন পিকেটাররা আরও কাছে আসতে লাগলো, আমরা ওই বাড়ির ছাদ থেকে পাশের বাড়ির ছাদে লাফিয়ে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিলাম ও তাই করলাম। তবে ভয় ছিল, আমাদের কেউ দেখে ফেলে কি না। এভাবেই আমরা প্রতিবেশীদের সহায়তায় কোনো রকমে পালিয়ে আসতে সক্ষম হই’, বলেন মুশতারি।

এভাবেই মাথা ঠান্ডা রেখে সবাইকে নিয়ে চান্দু নগরে অবস্থানকারী পুলিশ সদস্যদের কাছে পৌঁছে সহায়তা চান মুশতারি। পুলিশ ও সেখানে থাকা প্রায় শতাধিক লোকের সহায়তায় অবশেষে তারা নিরাপদ স্থানে পোঁছতে পারেন।

ওই দিন মুশতারি আটটি পরিবারের সবাইকে বাঁচিয়েছেন। তার স্বামী হাকিমের ভাগনে মো. মিনহাজ বলেন, ‘আমরা দীর্ঘদিন ধরে খাজুরি খাস এলাকায় বসবাস করছি। রোববার সন্ধ্যার পর থেকে সেখানকার পরিস্থিতি উত্তপ্ত হতে শুরু করে। আমরা কোনোরকমে পালিয়ে এসেছি। এখন আবার সেখানে ফিরে যেতে পারব কি না, সে দুশ্চিন্তায় আছি।’

এত ঘটনা সত্ত্বেও ভড়কে যাননি বলে জানান মুশতারি খাতুন। তিনি বলেন, ‘আমার মাথায় কেবল একটাই চিন্তা কাজ করছিল, কী করে সবাইকে নিরাপদে বের করে নিয়ে আসা যায়। কারণ ওইদিন রাস্তাঘাটে লাঠি ও পেট্রোল বোমা হাতে উগ্র জনতা ছাড়া কোনো পুলিশ ছিল না। আমি যদি সঠিক সিদ্ধান্ত না নিতাম, তাহলে অনেককেই আর বাঁচানো যেত না।’

মুশতারির দিনমজুর স্বামী হাকিম বলেন, ‘আমাদের পরিবারে অনেক মেয়ে শিশু রয়েছে। আমার স্ত্রী যে কোনোভাবে ওদের রক্ষা করতে চাইছিল। এ জন্যই সে প্রাণের মায়া ত্যাগ করে ছুটে গিয়েছে। আমি তার জন্য ভীষণ গর্বিত।’

Comments

The Daily Star  | English

How Islami Bank was taken over ‘at gunpoint’

Islami Bank, the largest private bank by deposits in 2017, was a lucrative target for Sheikh Hasina’s cronies when an influential business group with her blessing occupied it by force – a “perfect robbery” in Bangladesh’s banking history.

8h ago